বিশ্বকাপে ‘বেল আউট’ বিতর্ক
ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
চলতি বিশ্বকাপ শুধু জয় কিংবা হারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এমনও অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটছে যা দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। যেমন ‘জিং বেল’। অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করছেন, কিন্তু আসলে বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা কী? এক বা দুইবার নয়, গুণে গুণে পাঁচ পাঁচবার ঘটেছে এমন ঘটনা। যখন স্টাম্পে বল লেগেছে, কিন্তু বেল পড়েনি!
ওভালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে অজি ইনিংসের একেবারে শুরুতে জাসপ্রিত বুমরাহর একটা বল ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে লেগে উইকেটে আঘাত করলেও বেল পড়েনি। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী নট-আউট থাকেন অজি ব্যাটসম্যান। বেঁচে যাওয়া ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত ৫৬ রান করেন।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে মিচেল স্টার্কের ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটে আসা ডেলিভারিতে বল উইকেটে লাগলেও বেল পড়েনি। সেক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যানের নাম ক্রিস গেইল।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেল না পড়ে বেঁচে গিয়েছিলেন সাউথ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। আবার শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে একইভাবে নিষ্কৃতি পান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকসের বলে এমন পরিস্থিতির সামনে পড়েন বাংলাদেশের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী স্টাম্পে বল লেগে যদি বেল পড়ে যায় তাহলে ব্যাটসম্যান আউট। কিন্তু উইকেটে লাগলো অথচ বেল পড়ল না, সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানকে নট-আউট হিসাবেই ধরা হবে। বল উইকেটে লাগলেও বেল না পড়ার এতগুলো ঘটনায় তাই রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিশ্বকাপে।
ওয়ার্নারের ঘটনা নিয়ে ওভাল ম্যাচের পর প্রতিবাদী হয়েছেন বিরাট কোহলি। ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ‘অবশ্যই ওয়ার্নারের বেঁচে যাওয়াটা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা প্রত্যাশিত নয়। প্রযুক্তি খুব ভালো। বেলে হাত লাগলে বা ছুঁলেও আলো জ¦লছে। কিন্তু বেল ফেলতে গেলে রীতিমতো ধাক্কা লাগাতে হচ্ছে উইকেটে। আমি নিজে ব্যাটসম্যান হয়ে এটা বলছি।’
সঙ্গে ভারতীয় অধিনায়কের সংযোজন, ‘আমরা নিজে স্টাম্প পরীক্ষা করেছি। খুব শক্ত করে মাটিতে পোঁতা হয়েছে, এমনও নয়। তাহলে কী হচ্ছে? আমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা নেই। মনে রাখবেন, যে বোলারের ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটেছে, তারা সবাই ফাস্ট বোলার। কেউ মিডিয়াম পেসার নয়। তাহলে কি স্টাম্পগুলো বেশি ভারী? কোনো দলই চাইবে না, একটা ভালো বলে ব্যাটসম্যানকে আউট করার পরেও সে ক্রিজে থেকে যাক। আমি অন্তত এরকম কিছু আগে দেখিনি।’
কোহলিকে সমর্থন করেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চও। তিনি স্বীকার করেছেন যেকোনো বড় ম্যাচে এই ধরণের একটা ঘটনা ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারে। ‘নিশ্চয়ই এইরকম একটা ঘটনা ম্যাচকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্বকাপ যত এগোচ্ছে, এরকম বেল না পড়ে বেঁচে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে। আমি জানি না, বেল কতটা হাল্কা হওয়া উচিত। তবে এটা নিয়ে ভাবা দরকার। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল বা ফাইনালে এভাবে কোনো ব্যাটসম্যান বেঁচে গেলে তার চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।’
আইসিসি দাবি করছে, বিশ্বকাপে যে ‘জিং বেল’ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সাধারণ কাঠের বেলের চেয়ে হাল্কা। তাহলে কেনো বেল পড়ছে না, সেই রহস্য থাকছে। তবে কি স্টাম্পের ঘনত্ব বেশি হয়ে যাচ্ছে?
বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ ইংল্যান্ডের সাবেক দুই অধিনায়ক নাসের হুসেইন ও মাইকেল ভনের দাবি, অবিলম্বে এই নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত আইসিসির। নাসের বলেছেন, ‘প্রথমে সবাই ভেবেছিল, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু প্রথম ১০ দিনের মধ্যে বিশ্বকাপে পাঁচবার এই ঘটনা ঘটেছে, যেখানে উইকেটে বল লাগলেও বেল পড়েনি। এটা টুর্নামেন্টের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। বিগ ম্যাচে মোক্ষম সময়ে এভাবে কোনো ব্যাটসম্যান বেঁচে গেলে সেটা হবে অনৈতিক।’
একইভাবে মাইকেল ভনের দাবি, প্রয়োজনে প্রযুক্তি বদল করা হোক। ‘বেলে আলো জ¦লার দরকার নেই, কিন্তু সেটাতে বল লাগলে পড়ে যাওয়া জরুরি। এটুকু আইসিসিকে নিশ্চিত করতে হবে।’
ওয়ার্নার ৫৬ করে ফিরে গেলেও সমস্যা হয়নি। কিন্তু যদি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দিতেন, ভারতের কিছু করার ছিল না। স্টাম্পের মাথায় বেল বসানোর জন্য যে ছোট গর্ত থাকে, সেটা বেশি গভীর হয়ে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক হলেও আইসিসি এখনো পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়নি।