October 6, 2024, 4:44 am

সংবাদ শিরোনাম
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জামায়াত নেতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিনের স্বাধীন সার্বভৌম মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে সশস্ত্র ট্রেনিং এর প্রয়োজন। বৈষম্য বিরোধী অভিভাবক ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কমিটির (পর্ব- ৪) ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে গড়তে হলে সংস্কার প্রয়োজন=== বৈষম্য বিরোধী অভিভাব ছাত্র শ্রমিক জনতা ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে অদ্ভুতুরে কাণ্ডকীর্তি ভোলা বোরহানউদ্দিনে প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকগণের ১০ম গ্রেডের দাবিতে মানববন্ধন শারদীয় দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষে বগুড়ায় বিএনপির মতবিনিময় সভা! লক্ষ্মীপুরে কুমিরের আতঙ্কে এলাকাবাসী সাংবাদিক পুত্র আবির হোসেন অনন্ত’র জন্মদিন আজ বিল্লাল হুসাইন ক্ষমতা! নাকি আড়ালে ছিলো ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার?

ঘুরে আসুন দার্জিলিং

ঘুরে আসুন দার্জিলিং

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক      

কাজের চাপে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। স্ট্রেস যখন বাসা বাঁধছে মনের গহিনে। তখন নিজেকে একটু আলাদা করে আবিষ্কার করতে চলে যান অনিন্দ সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে। ভারতীয় ভিসা আবেদনপত্র পূরণের সময় বুড়িমারী স্থলবন্দরের নাম অবশ্যই উল্লেখ করবেন। ভিসা পেয়ে গেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। বাংলাদেশের খুব কাছে অল্প ব্যয়ে ভ্রমণের এক আদর্শ জায়গা হচ্ছে দার্জিলিং এবং বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রথম পছন্দ দার্জিলিং। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয়ের অপার্থিব রূপ দেখতে সবার একবার অন্তত যাওয়া উচিত।

 

শিলিগুড়ি, কালিম্পং, কার্শিয়ান, জোড়বাংলো, মিরিক, নক্সালবাড়ি, প্রধাননগর, খুখিয়াপোখরি এই জেলার বিখ্যাত জায়গা। দার্জিলিং শহর ও তার আশপাশের ভ্রমণ কেন্দ্রগুলো ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন পয়েন্টে। যেমন টু পয়েন্ট বলতে গাঙ্গামায়া পার্ক ও রক গার্ডেন ভ্রমণ। থ্রি পয়েন্ট বলতে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় দেখার জন্য টাইগার হিল, বিখ্যাত ঘুম বৌদ্ধমন্দির ও বাটাশিয়া পুল। ফাইভ পয়েন্টের অন্তুর্ভুক্ত স্পটগুলো হচ্ছে- জাদুঘর, জাপানি মন্দির, লালুকুঠি কাউন্সিল ভবন, আভা আর্ট গ্যালারি এবং রীরধাম মন্দির ইত্যাদি। সেভেন পয়েন্ট বলতে পদ্মজা নাইডু জ্যুওলজিক্যাল পার্ক, বিখ্যাত হিমালয়ান মাউনেইরয়ান ইনস্টিটিউট, রোপওয়ে। পর্বতারোহণের স্বাদ পেতে বিশাল এক পাথরে ওঠানামার জন্য তেনজিং রক, চা বাগান, তিবক্ষতী রিফিউজি ক্যাম্প। চারদিকে সুউচ্চ উপত্যকার মাঝে সমতল মাঠ, দার্জিলিং গুর্খা স্টেডিয়াম ইত্যাদি।

ম্যাল এলাকা : দার্জির্লিংয়ের সবচেয়ে জমজমাট ও নানা পর্যটকদের মিলনমেলা বসে ম্যাল এলাকায়। চারদিকে উঁচু পাহাড়ের মাঝে একটু সমতল এলাকা। আয়োজনও চমৎকার। ম্যাল এলাকাটি রেলিং দিয়ে ঘেরা আছে এবং ছোট ছোট বেঞ্চি রয়েছে বিশ্রাম ও আড্ডা দেয়ার জন্য। ম্যাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হোটেল, ট্যুরিস্ট লজ, বিভিন্ন দ্রব্যের দোকান, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক আরও কত কী। স্টুডিও আছে। সেইসঙ্গে পাবেন ক্যামেরা নিয়ে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ানো পেশাদের ফটোগ্রাফার। ইচ্ছা করলে আপনার পছন্দের আলোকচিত্রটি পেশাদের আলোকচিত্রীকে দিয়ে তুলে নিতে পারেন।

নাইটেঙ্গেল পার্ক : ম্যাল চত্বর ছাড়িয়ে আরও কিছুদূর উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে আপনি যেতে পাবেন নাইটেঙ্গেল পার্কে। দার্জিলিং ভ্রমণ বিনোদনের খুব বেশি দিন হয়নি এ পার্কটি সংযোজনের। পাখির কলকাকলি, উঁচু থেকে সশব্দ গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার পানির বর্ণিল আলোকচ্ছটা এবং পুরো পার্কটিকে এমন সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, যা সত্যিই মনোমুদ্ধকর। পাখির কলককালি শুনে ভবছেন পাখি কোথায়? একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন পাখির এই কলতান সৃষ্টি করা হয়েছে কৃত্রিমভাবে। নাইটেঙ্গেল পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে স্থানীয় গুর্খা জাতিসত্তার নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে নাচ ও গানের অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের শেষে আছে উপস্থিত অতিথিদের অংশগ্রহণে নাচ ও গান। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য এক সন্ধ্যা কাটিয়ে আসতে পারেন নাইটেঙ্গেল পার্কে। ম্যাল চৌরাস্তা থেকে মাত্র ২ কি.মি. দূরে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জ্যুওলজিক্যাল পার্কটি পর্বতের গায়ে গড়ে তোলা হয়েছে। হিমালয় অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্যের বেশ কিছু নমুনা রয়েছে জ্যুওলজিক্যাল পার্কটিতে। এর মধ্যে জানা-অজানা বিচিত্র ও দুর্লভ গাছ-গাছালি ছাড়াও আপনি দেখতে পাবেন অতিকায় কালো ভল্লুক, সাইবেরিয়ান বাঘ, তিব্বতের হিংস্রতম নেকড়ে, গণ্ডার, সাম্বার ও চিত্রা হরিণ, ইলামা হায়না লাল পান্ডা এবং নানা রঙের পাখি।

হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট : পদ্মজা নাইডু জ্যুওলজিক্যাল পার্ক ও হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট একই গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটির বেশ খ্যাতি রয়েছে। এখানকার মিউজিয়ামে আপনি পৃথিবীর প্রথম দুই পর্বতারোহী তেনজিং ও হিলারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ঘটনাবহুল ও বিখ্যাত সব পর্বতারোহী ও আরোহণের তথ্য পাবেন। আরও পাবেন পর্বতারোহণের তথ্যবহুল প্রদর্শনী এবং প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের প্রদর্শনী।

হ্যাপি ভ্যালি টি-গার্ডেন : উঁচু পাহাড়ের অপরূপ উপত্যকায় গড়ে তোলা হয়েছে চা বাগান। এ বাগানে এসে গাছ থেকে চা-পাতা তোলা থেকে শুরু করে চা তৈরির যাবতীয় কলাকৌশল দেখে নিতে পারেন।

 

টাইগার হিল : শেষ রাত থেকে অসংখ্য জিপের সারি ও মানুষের কোলাহলে পূর্ণ হয়ে ওঠে টাইগার হিল। দার্জিলিং শহর থেকে ১৩ কি.মি. দূরে অবস্থিত টাইগার হিল কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় দেখার ভিউপয়েন্ট হিসেবে খ্যাত। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২ হাজার ৫৫৫ মিটিার উঁচুতে টাইগার হিলের ভিউপয়েন্ট থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফের রাজ্যে সূর্যের প্রতিফলনে বহু বর্ণিল আলোর ঝলকানি দেখার জন্য টাইগার হিলে আপনাকে আসতেই হবে। পরিষ্কার আকাশ থাকলে টাইগার হিল থেকে পৃথিবীর সবচাইতে উঁচু শৃঙ্গ এভারেস্টও দেখা যায়। দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যাবেন কিন্তু ট্রয় ট্রেনে চড়বেন না তা কী হয়? বাষ্পীয় ইঞ্জিনচালিত ন্যারো গ্যাজ লাইন দিয়ে উঁচু পাহাড়-পর্বতের কিনারা দিয়ে যখন ট্রেনটি চলতে থাকে, এর মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞাতা আর কী হতে পারে? ট্রয় ট্রেন জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত যাতায়াত করলেও দীর্ঘ পথের সময় বাঁচাতে আপনি দার্জিলিং থেকে ‘ঘুম’ স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করে এই ট্রয় ট্রেনের কিছুটা রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে পারেন।

রক গার্ডেন : দার্জিলিং থেকে ১০ কি.মি. দূরে অবস্থিত রক গার্ডনে কলকল ধ্বনিতে প্রবাহিত হচ্ছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। পাহাড়ের গা ঘেঁষে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে কৃত্রিমভাবে তৈরি সিঁড়ি। বেশ সাজানো-গোছানো আয়েজন দেখতে পাবেন রক গার্ডেন এসে। পিকিনিক স্পট হিসেবে এটি বিখ্যাত।

গাঙ্গামায়া পার্ক : রক গার্ডেন থেকে আরও ৩ কি.মি. দূরে বিশাল এক জলপ্রপাতকে কেন্দ্র করে বেশ বড় এলাকাজুড়ে গড়ে তোলে হয়েছে গাঙ্গামায়া পার্ক। পার্কের ভেতর লেকে নৌকা ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে অদিবাসীদের পরিবেশিত নাচ ও গানের ব্যবস্থা। স্থানীয়দের তৈরি হস্তশিল্পের দোকান, খাবার ব্যবস্থা সবই আছে এখানে।

 

দার্জিলিং যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে দার্জিলিং যাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। বাসে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি থেকে বিশেষ জিপে দার্জিলিং। দার্জিলিং থেকে প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে জিপ ব্যবহার করতে হবে। দার্জিলিংয়ে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। তারকামানের হোটেল দি নিউ এলগিন হোটেল, মে ফেয়ার হিল রিসোর্ট। এছাড়া হোটেল গারুদা, হোটেল সান ফ্লাওয়ার, হেপাটেল উমা, হোটেল স্বাতী, হোটেল ব্রডওয়ে ইত্যাদি বিভিন্ন মানের হোটেল গোটা শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

 

ভ্রমণের উপযুক্ত সময় :
পুর্ণিমার রূপ যেমন অপার্থিব আনন্দ দেয়, তেমনি আঁধারেরও রূপ আছে! পরিষ্কার মেঘহীন আকাশে দার্জিলিং যেমন তার রূপের ঐশ্বর্য মেলে ধরে, তেমনি বর্ষার সবুজ পাহাড় ও বিশাল ঝর্ণাধারার অন্যরূপ প্রকাশ করে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি শীতের তীব্রতার পাশাপাশি হয়তো তুষারপাতেরও দেখা পেতে পারেন। সমতলের মানুষের জন্য তুষারপাত দেখা দারুণ আনন্দের ব্যাপার! দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে আদর্শ সময় হচ্ছে মার্চ থেকে মে মাস এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।

 

 

দার্জিলিংয়ে বেড়ানোর খরচ ও সময় :
টাকা হলে দার্জিলিংয়ের সবকিছু বাংলাদেশেই মিলবে। আর কেনাকাটা না করলে ঢাকা থেকে দার্জিলিং যাতায়াত, থাকা, খাওয়া বাবদ জনপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ ১৫ হাজার টাকা হতে পারে। বুড়িমারী দিয়ে খরচ কম। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করলে ৫ দিনেই ঘুরে আসতে পারবেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর