পিরিয়ডের সময় ব্রণের সমস্যায় সমাধান ?
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ব্রণের সমস্যা সবসময় খুবই বিরক্তিকর। বিশেষ করে পিরিয়ড কিংবা মাসিকের সময়ে ব্রণের প্রাদুর্ভাব যখন বেশী দেখা দেয় তখন সেটা অনেকটাই অসহনীয় হয়ে দাঁড়ায়। বেশীরভাগ নারীদের পিরিয়ড শুরু হবার প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই ত্বকে নতুন করে ব্রণের উৎপত্তি দেখা দিতে শুরু করে। যেটা অনেক সময় প্রতি মাসেই নিয়ম করে নির্দিষ্ট একটি সময়ে বারবার দেখা দেয়। নিউ ইয়র্ক এর কসকোতে অবস্থিত ‘দ্যা সেন্টার ফর ডার্মাটোলজি, কসমেটিক এ- লেজার সার্জারি’র ডিরেক্টর ডেভিড ই. ব্যাংক বলেন, “সব দোষ শুধুমাত্র হরমোনের।”
পিরিয়ড শুরু হবার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শরীর থেকে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নিঃসৃত হতে থাকে জরায়ুকে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করতে। ব্যাংক ভালোভাবে বোঝানোর জন্য বলেন, “পিরিয়ডের সময়ে অনেক বেশি ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। কারণ, এই সময়ে হরমোন নিঃসরণ এর পরিমাণ অনেক বেশী বেড়ে যায়। যার ফলে তেলগ্রন্থি থেকে অনেক বেশী পরিমাণে সিবাম তৈরি হতে থাকে।” তিনি এর সাথে আরো বলেন, “এই তেল যখন মরা চামড়া এবং ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে যায় তখন রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। যেটা থেকে ব্রণের উৎপত্তি হয়।” এছাড়াও, পিরিয়ডের সময় ত্বক অনেক বেশী স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে বলেও সমস্যা তৈরি হয়।
সত্যি কথা হচ্ছে, পিরিয়ডের সময় ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়াটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় সমস্যা। এটা পুরোপুরিভাবে বন্ধ করার উপায় না থাকলেও, কিছু নিয়ম মেনে চললে ব্রণের সমস্যা কমিয়ে আনা যায় অনেকখানি। ব্যাংক এর মতামত থেকে জেনে নিন এমন কিছু নিয়ম।
১/ জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়া
জন্ম বিরতিকরণ পিল ত্বকের অতিরিক্ত তেল তৈরির গতি ধীর করে দেয় বাড়তি এস্ট্রজেন এবং প্রোজেস্টেরন এর নিঃসরণ এর মাত্রা কমিয়ে দিয়ে। যে প্রক্রিয়া পিরিয়ড শুরু হবার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এটা হরমোনের উঠানামাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে বলে ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমে যায় অনেকখানি। তবে জন্ম বিরতিকরণ পিল খাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক জানান, “যেহেতু সকল নারী ভিন্ন, সেহেতু এটা জেনে রাখা খুবই জরুরি যে কিছু সংখ্যাক নারীর জন্য এই পিল ব্রণের প্রাদুর্ভাব দূর করার ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে, তবে সকলের ক্ষেত্রে নয়।”
২/ হাত দিয়ে মুখের ত্বক স্পর্শ করা যাবে না
বাসাতে থাকলে অথবা অফিসে, কাজের মাঝে বেখেয়ালে মুখে হাত দিয়ে রাখা কিংবা হাত দিয়ে মুখে অকারণে খোঁচানো বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, হাতে প্রচুর পরিমাণে ময়লা, জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা মুখের ত্বকের সংস্পর্শে এসে ক্রিয়া শুরু করে। পিরিয়ড শুরু হবার আগে যেহেতু ত্বক অনেক বেশী স্পর্শকাতর হয়ে যায়, সেহেতু এই সময়ে আরও বেশী সতর্ক থাকতে হবে। মুখে কোন কারণে হাত দেওয়ার প্রয়োজন হলে অথবা মেকআপ করার প্রয়োজন হলে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
৩/ মোবাইল ফোনের স্ক্রিন পরিষ্কার রাখা
যেহেতু এটা পিরিয়ডের সময়ের ব্রণ, প্রাকৃতিকভাবেই এটা মুখের চোয়ালের অংশে বেশী করে দেখা দেয়। এর সাথে আরো বেশি সহযোগিতা করতে মোবাইল ফোনের যেন জুড়ি নেই! “অনেকেই বোঝেন না, তাদের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে কত বেশী পরিমাণে জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। যেগুলো মুখের গালে এবং চোয়ালের অংশে নতুনভাবে ব্রণ তৈরি করার জন্য অনেকাংশে দায়ী,” বলেছেন ব্যাংক।
৪/ ওয়ার্কআউট কিংবা ব্যায়াম করার পর গোসল করা
ওয়ার্কআউট কিংবা ব্যায়াম এর সময়সূচীর পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে, যেন শেষ করার পর ভালোভাবে গোসল করে ফেলা যায়। কারণ, প্রতিবার ব্যায়ামের পর শরীরে অনেক বেশী ঘাম হয়। যেটা শরীরে এবং ত্বকের ব্যাকটেরিয়া এবং ত্বকের তেল এর সাথে মিশে ব্রণ তৈরি করে। ঘেমে গেলে শুধুমাত্র মুখ ধোয়া যথেষ্ট নয়। কারণ, ব্রণ শুধুমাত্র মুখেই নয়, পিঠে, কাঁধেও দেখা দিতে পারে। যে কারণে প্রতিবার ওয়ার্কআউট এর পরে ভালোভাবে গোসল করে নিতে হবে।
৫/ ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া
বেশীরভাগ নারীর ক্ষেত্রেই উপর্যুক্ত নিয়মগুলো দুই-একটি অথবা সবগুলো মেনে চললে ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়া একেবারেই কমে যায়। তবে সকলের ক্ষেত্রে সকল নিয়ম কাজ করে না। কিছু নারীর পিরিয়ড শুরু হবার আগে থেকেই খুব বেশী পরিমাণে ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া শুরু করে। একই সাথে শুধুমাত্র সাধারণ ব্রণ নয়, অনেকের সিস্টিক ব্রণের প্রাদুর্ভাবও দেখা দিতে থাকে। সেক্ষেত্রে, অবশ্যই ভালো কোন ডার্মাটোলজিষ্ট এর পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়াও ব্যাংক আরো জানান, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পিরিয়ডের সময়ে ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমে যেতে শুরু করে। যেহেতু বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যেতে থাকে, সেহেতু ব্রণের সমস্যা দেখা দেওয়াও কমে যায়।