November 8, 2025, 3:45 am

সংবাদ শিরোনাম
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা-মৌলভীবাজারের চার আসনেও মনোনয়ন চূড়ান্ত প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ নিতে সম্মত এনসিপি বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়েছে ধানক্ষেত, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা ঝিকরগাছায় নাতিজামাই এর হাতে নানা শ্বশুর খুন র‍্যাব-১৩ এর অভিযানে লালমনিরহাটে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এস্কাফ (ESKuf) ও গাঁজাসহ ১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রংপুরের মোবারক আলী হত্যা মামলার মূলহোতা গ্রেপ্তার নবীগঞ্জে বার বার মেয়ে প*রকিয়া**য় জড়িয়ে পরার কারণে নিজ হাতে খু*ন করলেন পিতা বেনাপোল সীমান্ত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার। সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে রাতের আঁধারে বালু হরিলুট

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

 

ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি সনদ দিয়ে নিজের নামের আগে ‘ডক্টর’ উপাধি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি পরিচালক ড. মোঃ সৈয়দ আহমদও পিএইচডি ডিগ্রি কিনেছেন।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি কিনেছেন। সম্প্রতি ইন্ডিপেন্ডেন্ট  টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনলাইনে পিএইচডি করেছি। যার ক্যাম্পাস ছিল কাকরাইলে। কাকরাইলের সেই ক্যাম্পাস আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখন সেই ক্যাম্পাস আর নেই।

এখান থেকে যারা তথাকথিত পিএইচডি করে ডিগ্রি করে সনদ নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি তো ভুয়া বা অবৈধ। তাহলে আপনার ডিগ্রিও কী ভুয়া? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এখন কিছু বলা যাবে না। পরে বিস্তারিত লিখিত দেব।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে বলেন, আমেরিকায় এ ধরণের অসংখ্য ইনস্টিটিউট রয়েছে যেগুলোকে সেখানে ব্রিফকেস বা এ্যাপার্টমেন্ট ইউনিভার্সিটি বলে। এগুলো অনলাইনে ডিগ্রি বিক্রি করে। বাংলাদেশে এই ধরণের ইউনিভার্সিটির শাখা বা এজেন্ট রয়েছে।

তিনি বলেন, এসব শাখা বা এজেন্টদের কাছে যদি কোনো ধরনের ডিগ্রি চাওয়া হয় তাহলে তারা বলবে- ডিগ্রির দাম নির্ধারণ করবে, কি বিষয়ে ডিগ্রি দরকার এবং কতদিনের মধ্যে ডিগ্রি লাগবে তাও একজনে চাহিদা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান ডিগ্রি দেয়। এমনকি যদি কারও বাড়িতে এসে ডিগ্রি দিয়ে যেতে হয় সেক্ষেত্রে বাড়তি ফি দিলে এসব প্রতিষ্ঠান ডিগ্রি দিয়ে দিবে।

টাকার বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া সনদ কখনোই ব্যবহার করা যাবে না এবং এটা অবৈধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এভাবে টাকা দিয়ে ডিগ্রি কিনে নিজের নাম ভারি করার লোকের তালিকা ছোট নয়। এ তালিকায় সরকারি উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন লোকের নাম রয়েছে যারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকার বিনিময়ে পিএচডি ডিগ্রি কিনে নিজের নামের আগে ডক্টরেট উপাধি ব্যবহার করছেন এবং সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।

আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডাক্তার রেজোয়ানুর রহমান। তার সনদ ঘেটে জানা যায়, তিনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৮-২০০৯ শিক্ষা বর্ষে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি একটা কাজ করছি। ওই কাজ করার পর যদি কেউ আমাকে ডিগ্রি দেয় তাহলে আমি নেব না কেন? আমি তো বলব না যে, এটা আমাকে দিয়েন না।

ডিগ্রি বিক্রি করে এমন প্রতিষ্ঠানের কোন হিসেব নেই। এ তালিকায় রয়েছে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা টাকার বিনিময়ে সনদ বিক্রি করে। এ প্রতিষ্ঠান থেকেই সনদ কিনেছেন অসংখ্য ব্যক্তি।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উত্তরার ক্যাম্পাসে গেলে সেখানে কেয়ারটেকার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায় না। তবে ব্যাংক এ্যাকাউন্টসহ ছাত্র ভর্তির অনেক তথ্যই পাওয়া যায় সেখানে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির আরেক ক্যাম্পাস বিজয়নগরে গেলে তারা এসব বিষয় অস্বীকার করে। কোন পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয় না বলে তারা জানায়। এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো একবার ধরা পড়লে অন্য নাম ধারণ করে আবার রমরমা ব্যবসা শুরু করে।

অনুসন্ধানের বিষয়ে খবর পেয়ে আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। তবে বন্ধ করার আগে সেখান থেকে সব ধরনের তথ্য অনুসন্ধান টিম জব্দ করে। এসব তথ্য ঘেটে বেরিয়ে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখান থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন যা দেখলে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা হবে পাঠকদের।

এ তালিকায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ ওয়াজেদ আলী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রকল্পের প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ ড. মোঃ মনোয়ার হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ড. নিলুফার চৌধুরী, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. হুমাউন কবির চৌধুরী, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. শ্যামা পদ দে, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের উপসচিব ড. রবিউর রেজা সিদ্দিকী, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের আরেক উপসচিব ড. মোঃ তাজুল ইসলাম।

তালিকায় আরো রয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. জনেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. দেওয়ান মোঃ মতিনুর রহমান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাবেক পিএস এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব থাকাকালে অননুমোদিত এই আমেরিকান ওয়ার্ল্ড  ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন। এ বিষয়ে দৈনিক সমকালে কয়েকবছর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিলো ‘এমফিল/পিএইচডির কারখানা’। ওই প্রতিবেদনে এ এস মাহমুদের বিরুদ্ধে অবৈধ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া যায়। মাহমুদ গত বছর অবসরে যান।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর