দেশে উচ্চশিক্ষার মান না বাড়লেও বাড়ছে প্রতিষ্ঠান
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
দেশে উচ্চ শিক্ষার মান না বাড়লেও বাড়ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের চেষ্টা করলেও অন্যান্য লক্ষ্যে পিছিয়ে রয়েছে। যদিও কোনো লক্ষ্যেই সন্তোষজনক মানের কাছাকাছিও নেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলো। তার পরও দ্রুত বাড়ছে ওসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। মূলত গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃজন ও বিতরণ এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিই হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে গত কয়েক বছরে দেশে গড়ে উঠেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও মানের বিষয়টি রয়েছে অধরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১০ সালে দেশে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৫৭২টি। ২০১৬ সাল শেষে ওই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫৪। অর্থাৎ ৬ বছরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৪ শতাংশ। তার বাইরে রয়েছে পলিটেকনিক এবং অন্যান্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেগুলোয় ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা সনদ দেয়া হয়। ২০১৫ সালে ওই ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল এক হাজারের বেশি। আর ওসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোগে।
সূত্র জানায়, উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের পথে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান আন্তর্জাতিক মানের হলেও কলেজগুলো অনগ্রসর অবস্থানে রয়েছে। আর সুশাসনের বিবেচনায়ও কলেজগুলো পিছিয়ে রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তা প্রতিষ্ঠিত। কলেজগুলোয় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়টি এখনো মনোযোগের বাইরেই রয়ে গেছে। কারণ দেশের অধিকাংশ কলেজে প্রকট শিক্ষক ও অবকাঠামো সঙ্কট রয়েছে। সরকারের পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী প্রতি একজন শিক্ষকের বিপরীতে সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৩। ওই অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তো বটেই, জাতীয় মানদণ্ডেরও অনেক নিচে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেই ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তার পরও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৫টি। তার মধ্যে ১৯৯২-২০১১ দুই দশকে অনুমোদন পায় ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ ২০১২-১৬ পাঁচ বছরের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪৩টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে কোনো ধরনের নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই পরিচালিত হচ্ছে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। ওসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উল্লেখ করার মতো নয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নীতিনির্ধারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখেন বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টির অধিকাংশ সদস্যের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাদানের পরিবর্তে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
এদিকে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, আগে আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য খালি আসন পেত না। অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাত উচ্চশিক্ষার জন্য। তাই আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রথমে এর প্রসার ঘটিয়েছি। এখন আমরা মনোযোগ দিচ্ছি গুণগত মান নিশ্চিতে। এ লক্ষ্যে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার।