July 27, 2024, 8:54 am

সংবাদ শিরোনাম
বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের অভিযানে ১০ হাজার ইয়াবাসহ যুবক আটক পার্বতীপুরে নব-নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাই চেয়ারম্যানদ্বয়ের সংবর্ধনা রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা হতে জাল সার্টিফিকেট ও জাল সার্টিফিকেট তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ ০২ জন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ র‌্যাব-১০ এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা হতে ইয়াবাসহ ০১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড় ধ্বসে নারী-শিশু নিহত পীরগঞ্জে মসজিদের দোহাই সরকারি খাস জমির গাছ কর্তন পার্বতীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক হোসেন এর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন দারুসসালাম লাফনাউট মাদ্রাসার দস্তারবন্দী নিবন্ধন ফরম বিতরণ শুরু পীরগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর শিশু’র লাশ উদ্ধার মাদক মামলায় ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামী আলাউদ্দিন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০

বন উজাড়ে হুমকির মুখে হরিণের অভয়ারণ্য নিঝুম দ্বীপ

বন উজাড়ে হুমকির মুখে হরিণের অভয়ারণ্য নিঝুম দ্বীপ

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

 

সাগরের বুকে জেগে ওঠা দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র নিঝুম দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত এ দ্বীপটি ভেসে উঠার পর ৮০’র দশকে বন বিভাগ এখানে বনায়ন করে। এরপর ১৯৮৫ সালে সরকার এই দ্বীপে মাত্র ২ জোড়া হরিণ অবমুক্ত করলে পরবর্তীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজারে। ২০০১ সালে সরকার নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান ও হরিণের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। এক সময় এ বনে ৩০ হাজার হরিণ থাকলেও বন উজাড় হওয়ায় এ সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৮-১০ হাজারে।

নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ এই কয়েক হাজার হরিণ। গাছ কেটে বসতি গড়ে উঠায় আবাসস্থল হারাচ্ছে হরিণ। এছাড়াও রাত-বিরাতে শিকারীরা হরিণ শিকার করে পাচার করছে, আর শিয়াল-কুকুরের আক্রমণে হরিণের প্রাণহানি ঘটছে অহরহ। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় নোনা পানি বনে ঢুকে হরিণের খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক সময় প্রাণ বাঁচাতে হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। অবার খাদ্য ও অবাস সংকটে হরিণ নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্য দ্বীপগুলোতে চলে যাচ্ছে। দ্বীপে গাছ ও হরিণ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কমছে পর্যটক। হরিণ না দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের।

এছাড়া যতবার ঝড়-জলোচ্ছ্বাস দেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হেনেছে, ততবারই বুক এগিয়ে দিয়ে রক্ষাকবচ হয়েছে নিঝুম দ্বীপের বিস্তীর্ণ সবুজ বেষ্টনী। কিন্তু নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত ৮১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত যে দ্বীপ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে মায়ের মতো আগলে রাখে, সে দ্বীপের সবুজ বেষ্টনী এখন অস্তিত্ব সংকটে। পঞ্চাশের দশকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা অপরূপ সৌন্দর্যের নিঝুম দ্বীপ এখন অনেকটা নিষ্প্রাণ-শ্রীহীন। পুরো এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে বনের গাছ কাটার মহোৎসব। একসময় যেখানে বন বিভাগের মাধ্যমে সাড়ে ১২ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বাগান করা হয়েছিল, সেটি কমতে কমতে সাড়ে তিন হাজার একরে নেমে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে চিত্রা হরিণের খাবার কেওড়াগাছের পাতা। বনের গাছ কাটতে কাটতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে হরিণের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

কয়েক হাজার হরিণই নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। গাছ কেটে বসতি গড়ে উঠায় আবাসস্থল হারাচ্ছে এসব হরিণ। এছাড়াও রাত-বিরাতে শিকারীরা হরিণ শিকার করে পাচার করছে, আর শিয়াল-কুকুরের আক্রমণে হরিণের প্রাণহানি ঘটছে অহরহ। দ্বীপের চারদিকে বেড়িবাঁধ না থাকায় নোনা পানি বনে ঢুকে হরিণের খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে অনেক সময় প্রাণ বাঁচাতে হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। অবার খাদ্য ও অবাস সংকটে হরিণ নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্য দ্বীপগুলোতে চলে যাচ্ছে। দ্বীপে গাছ ও হরিণ কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে কমছে পর্যটক। হরিণ না দেখে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের। দ্বীপে গাছ ও হরিণ কমে যাওয়ায় কমছে পর্যটকও।

নিঝুম দ্বীপের জাহাজমারা রেঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাটিতে কেওড়াগাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। আবার কোথাও কোথাও কৌশলে কেওড়াগাছের নিচে শ্বাসমূল কেটে ফেলে রাখা হয়েছে, যাতে করে ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়। লবণাক্ততার কারণে নিঝুম দ্বীপে শুধু কেওড়াগাছ হয়। আর এই গাছের দাম খুবই কম। তাই গাছ বিক্রির দিকে কারো মনোযোগ নেই। সবার নজর গাছ কেটে সেখানে বসতি গড়ে তোলা। বনের গাছ কেটে সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসতভিটা।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন বিভাগের জমি জবরদখল করে নিঝুম দ্বীপে বর্তমানে পাঁচ হাজার পরিবার বসবাস করছে। পাঁচ হাজার পরিবারে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বন বিভাগের জমির ওপর অবৈধভাবে বসবাস করছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, এখানে আমাদের নিজস্ব জনবল অত্যন্ত কম। স্বল্প জনবল নিয়ে আমরা বেশ কয়েক বার বন বিভাগের জমি ফিরে পেতে উচ্ছেদে বের হয়েছি। কিন্তু স্থানীয়রা উল্টো একজোট হয়ে আমাদেরকে মারতে আসে।

নিঝুম দ্বীপকে ‘দ্বীপ’ বলা হলেও এটি মূলত একটি ‘চর’। নিঝুম দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান। ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর এবং চুর মুরি- এই চারটি চর মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ সালের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ছিল ২২ হাজার যা পরবর্তীতে বেড়ে ৩০ হাজারে দাঁড়ায়। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে অনেকে দাবী করেন। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬ হাজার ৯৭১ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাঁটা পড়লে শুকায়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এ ছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।

তবে অনিয়ন্ত্রিত বন উজাড়ের কারণে দ্বীপটির জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে।

দ্বীপটির একজন জনপ্রতিনিধি জানান, নিঝুম দ্বীপে সীমানা প্রাচীর না থাকা, খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ হাজার হরিণ থেকে কমে ৮-১০ হাজারে নেমে এসেছে। অনেক সময় হরিণ পাচার হয়। তাছাড়া প্রতিটি ছোট বা মাঝারি হরিণ মূল্য ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলে টাকার লোভে অনেক স্থানীয় বাসিন্দা হরিণ শিকার ও পাচারের সঙ্গে জড়িত। হরিণ কমে যাওয়ায় পর্যটকও কমে গেছে।

নোয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা বলছেনন, মানুষ বন উজাড় করছে। এতে হরিণ বিচরণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে নিঝুম দ্বীপ ছেড়ে হরিণ পার্শ্ববর্তী বনে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বন বিভাগের বিট অফিসারদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর