ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
ক্রিকেট পাগল চট্টগ্রামের মানুষ। এখানে ক্রিকেটের গন্ধ পেলেই মাঠে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সব বয়সের ক্রিকেট প্রেমীরা। সেই চট্টগ্রামে বসেছে বিপিএল টুর্নামেন্টের পঞ্চম আসর।
দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারের সমাগমও এবার প্রচুর। সব মিলিয়ে ক্রিকেট এখন জমজমাট বন্দরনগরীতে। ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে উঠেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
চট্টগ্রামে কোথাও ক্রিকেট খেলা হচ্ছে অথচ দর্শক নেই, এমন দৃশ্য কল্পনাই করা যায় না। অথচ গত আগস্ট মাসেও ছিল ভিন্ন চিত্র। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে সাগরিকার গ্যালারি ছিল প্রায় ফাঁকা।
স্বাগতিক বাংলাদেশ ঢাকা টেস্ট জয়ের পর চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হলেও বাস্তবে গ্যালারি ছিল দর্শকশূন্য। চট্টগ্রামের দর্শকদের যা চরিত্র, তার সাথে এই দৃশ্য ছিল একেবারেই বেমানান।
কিন্তু বিপিএলের চলতি আসরে আবার স্টেডিয়ামমুখী হয়েছেন দর্শকরা। গত দু’দিন গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়ে দলে দলে মাঠে এসেছেন ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অবস্থান শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে। যাতায়াত ব্যবস্থাও তেমন ভালো নয়। ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা রকমের বিড়ম্বনা।
স্টিকার ছাড়া কোনো গাড়িকে স্টেডিয়ামের ত্রিসীমানায় আসতে দেওয়া হয় না। গাড়ি নিরাপদে পার্কিং করারও কোনো ব্যবস্থা নেই। কোথাও পার্কিং করে গাড়ির চাবি নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে গেলেও বিপত্তি।
চাবির গোছা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা নিষেধ। রয়েছে পার্কিং সমস্যা। ফলে গণপরিবহণ নামধারী লক্কড়-ঝক্কর মার্কা যানবাহনই মূল ভরসা। আবার এসব যানবাহনে যাত্রী হলেও নেমে যেতে হয় স্টেডিয়াম থেকে অনেক দূরে। ফলে যাতায়াতের সীমাহীন কষ্টের কথা বিবেচনা করে কেউ স্টেডিয়ামমুখী হতে চান না।
দর্শকদের অনেকে ইত্তেফাককে বলেছেন, চট্টগ্রামের রাস্তার বেহাল দশার জন্য মানুষ ঘর থেকে বের হতে চায় না।
তাদের দাবি, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ঘেঁষে একটি রেললাইন চলে গেছে। তারা অন্তত খেলার দিন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সাগরিকা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন দেওয়ার দাবি জানান।
নানা বিড়ম্বনাকে সহ্য করে স্টেডিয়ামে আসার পর টিকেট না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হয়। এবার ব্যাংকের মাধ্যমে বিপিএলের টিকেট বিক্রি হচ্ছে না।
টিকেট বিক্রি হয় প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। এ ছাড়া জহুর আহমেদ চৌধুরী সংলগ্ন বিটাক মোড়ে একটি কাউন্টার থাকলেও সেখানে টিকেট পাওয়া মানে সোনার হরিণ হাতে পাওয়া।
অনেক দর্শকই অভিযোগ করেছেন তারা কালোবাজারিদের কাছ থেকে চড়া দামে টিকেট কিনেছেন। ২০০ ও ৩০০ টাকার গ্যালারির টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ ও ৮০০ টাকা পর্যন্ত। পুলিশের সামনেই কালোবাজারিরা হরদম টিকেট কেনাবেচা করছে।
স্টেডিয়ামে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। অথচ গ্যালারিতে যেসব খাদ্য কিনতে পাওয়া যায় তা খুবই নিম্নমানের। দাম চড়া হওয়ায় তা কিনে খাওয়ার সামর্থ্য অনেকের নেই।
গ্যালারির টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। দরজা, কমোড ভাঙা, বেসিনে সাবান দূরের কথা পানিই থাকে না। মহিলা দর্শকরা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনার স্তূপ দর্শকদের অস্বস্তির কারণ হয়।