আটক ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে মুক্তির প্রস্তাবে সৌদি সরকার
ডিটেকটিভ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি আরবে সাম্প্রতিক ধরপাকড়ে আটক হওয়া ব্যক্তিদের অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ার খবরে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একটি সংবেদনশীল সময়ে দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরোধীদের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে আটক রাজপরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়ীদের বলা হচ্ছে, সরকারকে নগদ অর্থ দিয়ে তারা মুক্তি পেতে পারেন। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিশ্চিতভাবেই এমন পদক্ষেপে বলপূর্বক অর্থ আদায় বা চাঁদাবাজির হুমকি রয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের সদস্য ও দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের ওপর চালানো এ ধরপাকড়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ৮২ বছরের বর্তমান রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজের পুত্র যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনিই সৌদি সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার। তবে এরইমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, বয়োবৃদ্ধ বর্তমান রাজা হয়তো শিগগিরই ছেলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ চাইছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এখন আটককৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে তাদের সঙ্গে একটি মীমাংসায় আসার কথা বলা হচ্ছে। সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে মুক্তি পেতে পারেন তারা। এ প্রক্রিয়ায় আইনি লড়াই এড়িয়ে যাওয়াও সহজ হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক একজন ঝুঁকি পরামর্শক আইহাম কামেল। তিনি বলছেন, এই ধরপাকড় কম সময়ের মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমানের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। যদিও এখানে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কথা বলা হচ্ছে; তবে বাস্তবে এটা যুবরাজকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। ধরপাকড়ের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে তাকে আর্থিক সুবিধা দেবে। সৌদি রাজপরিবার থেকে ২০১ জনকে আটকের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে রাজদরবারের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা এরইমধ্যে ৫০০ ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে প্রিন্স, মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের তালিকায় রাজপরিবারের সদস্য এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী আল ওয়ালিদ বিন তালাল এবং তার কন্যা প্রিন্সেস রিম বিন তালালের নামও রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের অনেককেই রাখা হয়েছে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের ফলে অন্তত ১৭ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনে প্রায় দুই ডজন সামরিক কর্মকর্তা এবং বহু ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্লেষক আইহাম কামেল-এর মতে, নিঃসন্দেহে সৌদি আরবে দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। কিন্তু অভিজাতদের এভাবে অভিযুক্ত করার বিষয়টি দীর্ঘ মেয়াদে দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। এখানে বিকল্প হচ্ছে সম্পদ জব্দ করার মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া। এই অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে। এমন চিন্তাভাবনার অবশ্য সমস্যাও রয়েছে। লোকজন এখন কিভাবে এবং কাদের সঙ্গে নিরাপদে ব্যবসা করা যায়, সে বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবে। শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে নিজ দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধরপাকড়ের পর এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চ্যালেঞ্জই হবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বড় পরীক্ষা।