এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ যা দিল
ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বকাপ ক্রিকেট মাঠে গড়িয়েছে গত ৩০ মে থেকে। এ কদিনে কেমন চলছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর? ১৪টি ম্যাচ মাঠে গড়ানো মানে আসরের এক-তৃতীয়য়াংশ খেলা শেষ। এর মধ্যে কত নাটক, কত রোমাঞ্চ। বাংলাদেশ হারিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে, পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে! একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক এ পর্যন্ত দর্শকদের কি কি দিল এবারের বিশ্বকাপ
ভারত-অস্ট্রেলিয়া কাল যখন মাঠে নেমেছে, বিশ্বকাপ তার আগেই দেখে ফেলেছে ১৩টি ম্যাচ। ৪৫ ম্যাচের গ্রুপ পর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তো শেষই। এরইমধ্যে কত নাটক, কত রোমাঞ্চের দেখা মিলেছে। কেউ সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে, কারও পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। তা কাল ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগ পর্যন্ত ওই ১৩ ম্যাচ দেখে কেমন মনে হলো বিশ্বকাপকে? কোনো নির্দিষ্ট ধারা, বা ‘ট্রেন্ড’ চোখে পড়েছে? কিছু তো সাদা চোখেই ধরা পড়ে-
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নেই
এই বিশ্বকাপ একেবারে নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচ আর কই দেখল! ১৪ ম্যাচের একটি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে, বাকি ১৩ টির মধ্যে ৭ টিতেই জয়ের ব্যবধান ৫ উইকেট বা ৫০ রানের বেশি। যে পাঁচটিতে ব্যবধান অত বেশি নয়, সেখানেও রানের হিসাবে সবচেয়ে কম ব্যবধানের জয় ১৪ রানের, উইকেটের হিসাবে ২ উইকেটের।
কোথায় রানবন্যা
বিশ্বকাপের ঠিক আগে এই ইংল্যান্ডেই ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজে চার ম্যাচে আট ইনিংসের সাতটিই হলো ৩৪০-এর বেশি রানের, ব্যস, বিশ্বকাপে রানবন্যার যত পূর্বানুমান শুরু। ৩৫০ কী ছার, ৪০০-৫০০-র আলোচনাও হলো। কিন্তু কোথায় কী! পরশু পর্যন্ত ২৪ ইনিংসের ছয়টি মাত্র পেরোল ৩০০, ইংল্যান্ডই তিনবার। ৫০ ওভারের পুরোটা ব্যাটিংও দেখেছে মাত্র ছয়টি ইনিংস। এর প্রভাব পড়েছে ওভারপ্রতি রানে, এখন পর্যন্ত যা ৫.৭৩, চার বছর আগের বিশ্বকাপের ৫.৬৫-এর চেয়ে খুব বেশি যে একটা বেড়েছে তা কিন্তু নয়।
টসে কী যায় আসে
১৩ ম্যাচের একটির ফল হয়নি, বাকিগুলোর মধ্যে ৬ টিতে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে, ছয়টিতে পরে ব্যাট করা দল। টস নামের মহাগুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে এই পরিসংখ্যান।
সুর বেঁধেছে ক্যারিবীয়রা
বোলারদের দাপট বললে চোখে ভাসবে ব্যাটসম্যানের দিকে ছুটে যাওয়া বুকসমান, বা তারও বেশি উচ্চতার বাউন্সার। কৃতিত্বটা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দিতে হয়। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে শর্ট বলের বাণে ক্যারিবীয়রা বিদ্ধ করার পরই তো বাকি দলগুলোও শর্ট বলকে আপন করে নিয়েছে। ক্রিকেটে ‘বল ট্র্যাকিং ডেটা’ এসেছে ২০০৭ সালে, সেটির হিসাবে এবার ৪৫ শতাংশ বলই শর্ট করছেন বোলাররা, ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে এ পর্যন্ত যা সবচেয়ে বেশি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো সাফল্য অবশ্য আসেনি। জ্যামাইকান তিন ফাস্ট বোলার ওশান টমাস, শেলডন কটরেল ও আন্দ্রে রাসেলের বাউন্সার-ঝড়ে পাকিস্তানকে ১০৫ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ারও ৪ উইকেট ফেলে দিয়েছিল ৩৮ রানে।
শুকনো পিচে স্পিন চলে
আইসিসির টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের প্রথাগত উইকেট থাকে না, একটু বেশি শুকনো থাকে। সে কারণে স্পিনারদের ব্যবহারও বেশি হচ্ছে। পরশু পর্যন্ত ৯০২.৩ ওভারের মধ্যে ২৮১.১ ওভার, অর্থাৎ ৩১.২ শতাংশ বোলিং করেছেন স্পিনাররা। ইংলিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ হিসাব করে দেখছে, তা নাকি ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্বকাপের পর থেকে এ পর্যন্ত বাকি চার বিশ্বকাপের গড়ের কাছাকাছিই। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে ব্যবহৃত পিচে স্পিনারদের ব্যবহার তো আরও বাড়বেই।
বেল পড়ে না
বোলাররা অভিযোগ তুলতেই পারেন, কী এক জিং বেল নিয়ে এল আইসিসি, পড়েই না! এখন পর্যন্ত যে পাঁচবার এমন ঘটেছে যে বল স্টাম্পে লেগেছে, কিন্তু বেল পড়েনি। উইকেট পাননি বোলার। প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক এভাবে ভাগ্যের ফেরে বেঁচে গেলেন, তার এক দিন পর শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুনারত্নে। এরপর একে একে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল, পরশু বাংলাদেশের সাইফউদ্দিন, আর কাল স্টাম্প বাঁচাল অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে। সাবেক পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার গতকালই টুইটটা করেছিলেন, ‘কী হচ্ছে এসব? একটা টুর্নামেন্টের প্রথম দশ দিনে বাদ দিন, আমার পুরো জীবনেই এমন ঘটনা পাঁচবার দেখিনি!’
ফিল্ডারদের ঝলক
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই টুর্নামেন্টের সেরার সারিতে জায়গা পাওয়ার মতো ক্যাচ! দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দিলে ফিকোয়াওকে ফেরাতে ডিপ মিডউইকেটে বেন স্টোকসের বাজপাখি বনে গিয়ে ওই ক্যাচের কথা এত তাড়াতাড়ি কারও ভোলার কথা নয়। দারুণ ক্যাচের তালিকা করলে মনে পড়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলকে ফেরাতে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত ক্যাচ, একই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের ক্যাচ বাউন্ডারি দড়িতে বুদ্ধি-তৎপরতার দারুণ প্রমাণ দেখিয়ে যেভাবে ধরেছেন উইন্ডিজের শেলডন কটরেল, সেসবও। পরশু ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ ক্যাচটিও বা কম কী! বাংলাদেশ সে ম্যাচে মোটেও ভালো ফিল্ডিং করেনি, অন্য দলও ক্যাচ হাতছাড়া করেছে অনেক, তবে সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে ফিল্ডিংয়ে ‘অ্যাথলেটিসিজম’ চোখে পড়ছে।
বড় হতাশা দক্ষিণ আফ্রিকা
সেমিফাইনালে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকা গুবলেট পাকাবে, এমনটা হয়তো যেকোনো টুর্নামেন্টের আগে ধরে নেন সবাই। কিন্তু এবার তো অত দেরিও করছে না প্রোটিয়ারা। শুরু থেকেই পাকাচ্ছে গুবলেট। প্রথম তিন ম্যাচের সব কটিতেই হেরে গ্রুপ পর্বেই বিদায়ের শঙ্কায়।
ফাস্ট বলের গতি বেশি
আগের যুগের ফাস্ট বোলাররা হয়তো দাবি করে বসতে পারেন, তাঁদের বলের গতি এ যুগের ফাস্ট বোলারদের চেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু ২০০৭ সালের আগে বলের গতির রেকর্ড এভাবে রাখা হতো না। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এবারই ফাস্ট বোলারদের বলে আগুন ঝরছে সবচেয়ে বেশি। স্লোয়ার বলগুলো হিসাবে নিয়েও এই বিশ্বকাপে ফাস্ট বোলারদের গড় গতি ঘণ্টায় ৮২.৩৪ মাইল, আগের তিনটি বিশ্বকাপের তুলনায় বেশি।