January 15, 2025, 2:28 pm

সংবাদ শিরোনাম
তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ ঢাকায় দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করলেন সন্ত্রাসীরা: বেনাপোলে ভারতীয় ভয়ঙ্কর ট্যাপেন্টাডোল জব্দ মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ লামায়-আলীকদম অনুপ্রবেশকালে ৫৮ মিয়ানমার নাগরিকসহ ৫ দালাল আটক শিবচরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের লিফলেট বিতরন মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ সেনাবাহিনীর অভিযানে নবীগঞ্জ থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার নাটোরে ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

রোহিঙ্গাদের নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়ানোর শঙ্কা জাতিসংঘের

রোহিঙ্গাদের নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা ৬০ ছাড়ানোর শঙ্কা জাতিসংঘের

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

 

কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৬০ জনের বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যুর আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকালের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। আরও ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। অবশ্য উখিয়া থানার পরিদর্শক মো. কায় কিসলু বলেছেন, গত শুক্রবার ইনানী সৈকতের পাথুয়ারটেক এলাকায় সাগরে পাওয়া তিন শিশু ও এক নারীর লাশ মিলিয়ে মোট ২০ জনের মৃতদেহ তারা উদ্ধার করেছেন। মিয়ানমার থেকে আসা ওই নৌকায় মোট ৮০ জন ছিলেন বলে জানিয়েছেন আবদুস সালাম নামের এক রোহিঙ্গা, যিনি নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও পরিবারের আট সদস্যকে হারিয়েছেন। রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল খানিকটা কমে এলেও রাখাইনের গ্রামে গ্রামে এখনও জ¦ালাও-পোড়াও চলছে বলে বৃহস্পতিবার নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার পাওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার বুচিডং থানার মইডং গ্রাম থেকে আসা ৩৫ বছর বয়সী আবদুস সালাম বলেন, এলাকায় তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। গত সোমবার তাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর হামলা শুরু হলে পরিবার নিয়ে পালিয়ে তিনি পাহাড়ে আশ্রয় নেন। তিন দিন ধরে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পার হয়ে বুধবার রাত ৯টার দিকে আমরা নৌকায় উঠি। মাঝির সঙ্গে কথা ছিল, আমাদের দুই পরিববারের ১৪ জনকে নিয়ে আসবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ৬৬ জন যাত্রী তোলে সে। সালাম বলেন, নৌকা নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে ভার কমানোর জন্য তাদের মালপত্রভর্তি বস্তাগুলো সাগরে ফেলে দেন নৌকার মাঝি। বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের নৌকা ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে। এ অবস্থার মধ্যে মাঝি দিক হারিয়ে ফেলেন এবং একপর্যায়ে নৌকা উল্টে যায়। এ ঘটনায় স্ত্রী, এক ছেলে, মা, ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তান ও বোনসহ আটজনকে হারিয়েছেন সালাম। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে নৌকাডুবির এ খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বড় শিরোনাম হয়। আইওএম-এর মুখপাত্র জোয়েল মিলম্যান গত শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত ৪০ জনের নিখোঁজ থাকার তথ্য আছে। আমাদের মনে হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে ৬০ থেকে ৬৩ জনে। মিলম্যান জানান, যাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তারা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। সারা রাত তাদের সাগরে কেটেছে, সঙ্গে কোনো খাবারও ছিল না। নিহতের সংখ্যা নিয়ে আইওএম-এর বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, সাগর তীরে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। এ পর্যন্ত ২০ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে এবং আইনগত ব্যবস্থা করে দাফনের কাজটি পুলিশ করছে। আইওএম ২৩ জনের লাশ কোথায় পেল তা তারাই ভাল জানে। ইনানীতে তল্লাশি অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা সাফায়েত হোসেন এবং ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই স্টাইলিন বড়ুয়াও গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ২০ জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য জানান। এদের মধ্যে ১২ জন শিশু ও ৮ জন নারী। উখিয়া থানার পরিদর্শক মো. কায় কিসলু জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় ২৭ জনকে তারা জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে নয় জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শুক্রবারই ইনানী মেরিন ড্রাইভের পাশে দু্টি কবরস্থানে ২০ রোহিঙ্গাকে দাফন করা হয়। অস্থায়ী মর্গে লাশ শনাক্তের সময় এবং পরে গণকবরে লাশ দাফনের সময় স্বজনদের আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবুল কালাম নামে ৫৫ বছর বয়সী একজন জানান, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক নাতি রয়েছে নিহতদের মধ্যে। গত শুক্রবার দুপুরে তাদের লাশের সামনে বসে কাঁদতে দেখা যায় কালামকে। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে এসে গরু-ছাগল আর খাবার যা ছিল, সব নিয়ে যায়। পরে তাদের আর্মি ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে বলা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বলে কিছু নেই। এরপর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি সীমান্তের পথ ধরেন। লালু মিয়া নামের একজন রয়টার্সকে বলেন, সাগরে তীরের কাছে এসে তাদের নৌকাটি একটি পাথরে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এ ঘটনায় স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ছেলেকে হারিয়েছেন লালু। তার দুই সন্তানের খোঁজ এখনও মেলেনি।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর