January 17, 2025, 4:17 am

সংবাদ শিরোনাম
শিবচরে খানকান্দি দৈয়দ আশরাফ আলী উচ্চ-বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ শিবচরে খানকান্দি দৈয়দ আশরাফ আলী উচ্চ-বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ টেকনাফ ২ বিজিবি”র অভিযানে আটক-৬ লক্ষ্মীপুরে তিন পুলিশ সদস্যকে পেটালেন সিএনজি চালকরা মধুপুরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত বেনাপোলে বিজিপি বিএসএফ সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হারিয়ে যাওয়া মায়ের খোঁজে দিশেহারা সন্তানরা ভিসা জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে পরিবহন ব্যাবসার ধ্বস তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ

এখন আমি প্রস্তুত: শান্ত

এখন আমি প্রস্তুত: শান্ত

ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক

দুর্ঘটনা কখনো আনন্দময় হয়? টেস্ট অভিষেক নিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর অনুভূতি ঠিক সেরকমই! অভিষেক তার কাছে ছিল একরকম ‘অ্যাক্সিডেন্ট’। তবে যেভাবেই হোক, একটা স্বপ্ন পূরণ তো হয়েছিল। যদিও সেই স্বপ্ন হারিয়ে গিয়েছিল এক লহমায়। কিন্তু হারিয়ে যাননি শান্ত। খেটেছেন, ঘাম ঝরিয়েছেন, শাণিত করেছেন নিজেকে। অর্জন করেছেন টেস্ট দলে নিজের জায়গা। কণ্ঠে তাই আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, “এখন আমি প্রস্তুত।” ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের বাংলাদেশ টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন শান্ত। ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান একটি টেস্ট খেলেছেন আরও দেড় বছর আগে। তবে বিস্ময়করভাবে, টেস্ট স্কোয়াডে তার জায়গা পাওয়া এবারই প্রথম! বাংলাদেশের ২০১৬-১৭ মৌসুমের নিউ জিল্যান্ড সফরে ছিলেন শান্ত। তবে মূল দলের অংশ হয়ে নয়। বিশাল বহরে তাকেসহ আরও কয়েকজনকে নেওয়া হয়েছিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায়। উদ্দেশ্য ছিল দেখা, শেখা, অনুশীলন করা, অভিজ্ঞতা অর্জন। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের আগে একসঙ্গে চোটে ছিটকে গেলেন মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস। একাদশ দাঁড় করানোই তখন দায়। খুলে গেল শান্তর সৌভাগ্যের দুয়ার। ডেভেলপমেন্ট স্কোয়াড থেকে একবারেই টেস্টের টিকিট! অভিষেকে বলার মতো রান করতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৫৬ বলে ১৮, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ বলে ১২। তবে বলার মতো ছিল তার লড়াইয়ের চেষ্টা। ক্রাইস্টচার্চের কঠিন কন্ডিশনে সাউদি-বোল্ট-ওয়াগনারদের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি লড়াই করা, টেকনিক-টেম্পারামেন্টের পরীক্ষা দেওয়া, ১৮ বছর বয়সী একজনের জন্য খুব খারাপ কিছু ছিল না। অনুমিতভাবেই এরপর বাইরে চলে গেছেন দলের। তবে সেই দূরে যাওয়া ছিল কেবল আরও ভালো করে কাছে আসার জন্যই। হাই পারফরম্যান্স দলে খেলেছেন। রান করেছেন। ‘এ’ দলে খেলেছেন। রান এসেছে। ‘এ’ দলকে নেতৃত্বেও দিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যাটে রানের জোয়ার। আজ হোক বা কাল, জাতীয় দলে ফেরাটা তার জন্য একরকম অবধারিতই ছিল। শান্তর বিশ্বাস ছিল, এবারই হয়তো আসবে ডাক। মনের কোণে থাকা সেই আশা পূরণের উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল আলাপচারিতায়। দ্রুতই ডাক পেতে হবে, এমন তাড়া আমার ছিল না। আমি শুধু চেয়েছি রান করে যেতে। যেখানেই সুযোগ পেয়েছি, চেয়েছি ভালো করতে, উন্নতি করতে। জাতীয় দলে খেলতেই হবে, এমন ভাবনা মাথায় থাকলে চাপ হয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, যদি বলি এবার আশা ছিল না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন পারফরম্যান্স ছিল, মনে হচ্ছিল এবার হয়ে যেতে পারে। কেমন ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে শান্তর পারফরম্যান্স? ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এবার ৪ সেঞ্চুরিতে ৭৪৯ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। দুটি সেঞ্চুরি ছিল শেষ তিন ম্যাচে, যখন চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে চাপ প্রবল। জাতীয় লিগে করেছিলেন ৫৯.৭৫ গড়ে ২৩৯ রান। বিসিএলে ৩৯ গড়ে ৩৯০। সাদা পোশাকে হয়ত অসাধারণ ছিল না পারফরম্যান্স, কিন্তু সব মিলিয়ে গোটা মৌসুমে ছিলেন দারুণ। তবে শুধু এই মৌসুমের পারফরম্যান্সের পুরস্কার নয় টেস্ট দলের ডাক। তাকে খুব যতœ করে, সময় নিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে প্রথম খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। এরপর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে পরিচিতি পেয়েছেন দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে। গড়েছেন আন্তর্জাতিক যুব ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। এরপর হাই পারফরম্যান্স ও ‘এ’ দলে আলো ছড়িয়ে এখন আবার টেস্ট ক্রিকেটের উজ্জ্বল আঙিনায়। পরিস্থিতির কারণে আচমকা টেস্ট খেলে ফেলা বাদ দিলে তার অগ্রগতি বলা যায় হয়েছে আদর্শ পথ ধরে। দেশের ক্রিকেটে তিনি সেই বিরলদের একজন, বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে সব ধাপ পার হয়ে, পারফর্ম করে, মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে তিনি এলেন টেস্ট দলে ‘প্রস্তত’ শব্দটি তার নিজের কথায়ও উঠে এলো বারবার। ধাপে ধাপে এগিয়েছেন বলেই হয়তো নিজেকে খুব ভালো করে জানেন শান্ত। টেস্ট অভিষেক হুট করে হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজেও হয়ত প্রস্তুত ছিলাম না। এখন আমি অনেকটাই তৈরি। এই দেড় বছরে অনেক ম্যাচ খেলেছি, রান করেছি। চেষ্টা করেছি উন্নতি করতে। আগের চেয়ে আমি এখন অনেক পরিণত। টেস্ট যখন খেলেছি, তখনও জানতাম আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। অনেক শিখতে হবে। বয়সভিত্তিক দলে পারফর্ম করলে অনেকেই সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পান। আমার একটু সময়ে লেগেছে বলে ভালোই হয়েছি। আমি এটা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েই চেষ্টা করেছি উন্নতি করতে। জানি এখনও আরও অনেক শেখার আছে। তবে এটুকু বলতে পারি, আগের চেয়ে আমি এখন অনেক বেশি প্রস্তুত।

প্রস্তুত কতটা, সেই উত্তর দেবে সময়। তবে উন্নতির প্রমাণ এই মৌসুমে তার ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে। টেকনিক-টেম্পারামেন্ট বরাবরই তার বড় সম্পদ। এখন টেকনিক আরেকটু আঁটসাঁট হয়েছে। আগের চেয়ে আরও বেড়েছে পেশি আর কবজির জোর। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শটের পরিমাণ। আগে তার শট ছিল সীমিত কিছু, এখন খেলতে পারেন অনেক শটই। ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেই এই উন্নতি, জানালেন শান্ত। আমি চেষ্টা করেছি শট বাড়াতে। এবার ঢাকা লিগে আমার স্ট্রাইক রেট (৯৭.৫২) ভালো ছিল শট বেড়েছে বলেই। এখনকার ক্রিকেটে অনেক ধরনের শট খেলতে হয়। এমনিতে যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব আশা করি। টেস্ট খেললে সেভাবেই খেলার চেষ্টা করব। তবে হাতে অনেক শট থাকলে আত্মবিশ্বাসও বেশি থাকে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই তাকে মনে করা হয়েছে দেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ। সেই প্রত্যাশা এখন আরও বেড়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে তার পারফরম্যান্সে। টেস্ট দলে তার ফেরাটাও তাই প্রত্যাশার পাহাড়কে সঙ্গী করে। শান্ত নিজেও জানেন, প্রত্যাশা মানেই চাপ। তবে সেটা সামলানোর বিশ্বাসও তার আছে। দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি, তখনও প্রত্যাশার চাপ ছিল। এখনও আছে। নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা আছে, পরিবারের প্রত্যাশা আছে, অন্য সবার আছে। ক্রিকেট খেলছি, দেশের হয়ে খেলতে চাই, এসব চাপ তো থাকবেই। মানিয়ে নিতেই হবে। তাকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটেই বেশি আশা বাংলাদেশের। ধ্রুপদি একজন টেস্ট ব্যাটসম্যান পাওয়ার স্বপ্ন পূরণের অন্যতম বাজি তিনি। একই স্বপ্নে বসত শান্তর নিজেরও। এই পথটুকু যেভাবে পাড়ি দিয়েছেন, সামনের পথচলায়ও সেভাবে এগোতে চান একটু একটু করে। টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন, আপাতত লক্ষ্য, এবার একাদশে সুযোগ পেতে চাই। সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে চাই।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর