December 30, 2024, 11:19 pm

সংবাদ শিরোনাম
হিলিতে সবজিসহ আলু পেঁয়াজ ও আদার দাম কমেছে ইসলামপুরে সাবেক পৌর মেয়র আঃ কাদের শেখ আটক গাইবান্ধায় ৮২ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই মহিলা মাদক কারবারি আটক। মধুপুরে ৩দিন ব্যাপি পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দিতে দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাই উলিপুরে যুবদল নেতার মৃত্যু নিয়ে দোকানপাট ভাঙচুর ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ যশোরের পল্লীতে আদালতের ভুয়া ডিক্রি ও জাল দলিল বুনিয়াদে ভূমিদস্যুদের জমি জবর দখলের চেষ্টা উখিয়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে কলেজ ছাত্র নিহত খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১ম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে দুইটি পরিবহন ও লরির ত্রিমূখী সংঘর্ষ

যেভাবে জলাতঙ্ক থেকে বাঁচবেন

যেভাবে জলাতঙ্ক থেকে বাঁচবেন

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

জলাতঙ্ক বার্ যাবিস প্রাণীবাহিত মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা হলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং মৃত্যুর হার শতভাগ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর জলাতঙ্কে দুই হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৮০ হাজার লোক জলাতঙ্কের প্রতিষেধক নেয়, যাদের জলাতঙ্কবাহিত সন্দেহজনক প্রাণী কামড় দিয়ে থাকে। কারণ : জলাতঙ্ক বার্ যাবিস সাধারণতর্ যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। দুই ধরনের ভাইরাস আছে- স্ট্রিট বা ওয়াইন্ড ভাইরাস এবং ফিক্স ভাইরাস।

কোথায় থাকে : সব স্তন্যপায়ী প্রাণী জলাতঙ্ক বার্ যাবিস আক্রান্ত হতে পারে এবং ভাইরাসটি বহন করে এবং ওইসব প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে আসতে পারে। এশিয়া মহাদেশে কুকুরই প্রধান বাহক- যা এই রোগটি ছড়ায়। এ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বিড়াল, পাতিশিয়াল, শিয়াল, ভোঁদড় জাতীয় প্রাণী, ভালুক জাতীয় প্রাণী, নেকড়ে, বেঁজি এবং বাদুড়ের মধ্যে এ ভাইরাসটি থাকে। কম পাওয়া যায় খরগোশ, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণীর মধ্যে। উষ্ণ রক্তবাহিত প্রাণী এই ভাইরাস বহন করে। সাধারণত মুখের রস স্যালাইভায় এই ভাইরাস থাকে এবং এসব প্রাণী কামড় দিলে অন্যের শরীরে ভাইরাস সহজে প্রবেশ করে।

ইনকিউবেশন পিরিয়ড : এটা খুবই তারতম্য দেখা দেয়। সময়কাল পাঁচ-ছয় দিন থেকে কয়েক বছর হতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইনকিউবেশন পিরিয়ড ২০ থেকে ৬০ দিন। অর্থাৎ কামড় দেয়ার পর ২০-৬০ দিন পর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কী হয় :

১। রোগটি শুরু হওয়ার দুই-চার দিন আগে মনে হবে সুচ বা পিন দিয়ে কেউ শরীরে আঘাত করছে।

২। ব্যথা অনুভব হবে এবং শরীর চুলকাবে। বিশেষ করে কামড়ের স্থানে এবং এটা স্নায়ু দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়াবে।

৩। হঠাৎ করে মানসিক পরিবর্তন যেমন অস্থিরতা, স্তব্ধতা, চুপচাপ, অবসাদ, জ¦রজ¦র ভাব হবে। পরিবারের প্রতি অবহেলা ও অমনোনিবেশ অথবা অতিরিক্ত সহানুভূতি বা ভালোবাসা দেখা দিবে।

রোগ হলে : জলাতঙ্ক হলে তিন ধরনের পরিবর্তন রোগীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

১ : স্পাস্টিক বা অতিমাত্রায় অস্থিরতা, স্পর্শ করলেই লাফ দিয়ে ওঠা, ভয় পাওয়া, শব্দ শুনলে অস্থির হওয়া, কোনো কিছু দেখলে চিৎকার দিয়ে ওঠা। মুখের ভেতরে, গলায় শ্বাসনালি, খাদ্যনালি সঙ্কোচন হয়। ফলে হাইড্রোফবিয়া হবে, যাকে বলে জলাতঙ্ক অর্থাৎ পানি পিপাসা লাগবে, কিন্তু পানি পান করতে পারবে না। পানির শব্দ, পানি কাছে আনলে ভয় পাবে। এজন্য এই রোগকে জলাতঙ্ক রোগ বলে।

২ : ডিমেনশিয়া : রোগী পাগলের মতো ছটফট করবে। অস্থির হবে, ভাঙচুর করবে, ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলবে। এরপর অজ্ঞান হয়ে যাবে।

৩ : প্যারালাইটিক বা অবশ হয়ে যাওয়া। রোগ হওয়ার সাত থেকে ১০ দিন পর এ অবস্থা হবে। এ অবস্থা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী মারা যাবে।

চিকিৎসা : জলাতঙ্ক একবার হলে বাঁচার আর কোনো উপায় থাকে না। এমনকি কোনো চিকিৎসাও নেই। সুতরাং রোগী যেন আরামে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার ব্যবস্থা করা। এজন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সিস্টেমেটিক চিকিৎসা দেয়া।

যেমন স্যালাইন দেয়া, ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ, এন্টির্-যাবিস ওষুধ দেয়া, রোগীকে আলো থেকে, শব্দ থেকে, বাতাস থেকে দূরে রাখা। ঘুমের ওষুধ দেয়া, স্টেরয়েড (ংঃবৎড়রফ) দেয়া, প্রেডনিসলন, মেনিটল দেয়া যেতে পারে। এন্টি-থাইমোসাইটিস গেস্নাবিউলিন, রিবাভাইরিন,র্ যাবিস ইমিউনোগ্লবিউলিন জি দেয়া। সব কিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

প্রতিরোধ : জলাতঙ্ক রোগ দুইভাবে প্রতিরোধ করা হয় :

১। আক্রান্ত হওয়া মাত্র বা কুকুর বা অন্য জীব দ্বারা কামড় ও আঁচড় দেয়া মাত্র চিকিৎসা।

২। আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিরোধ।

৩। আক্রান্ত হওয়া মাত্র ক্ষতস্থান থেকের্ যাবিস ভাইরাস সরিয়ে ফেলা, যাতে স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হতে না পারে।র্ যাবিস প্রতিষেধক টিকা দেয়া। বাংলাদেশে প্রচুর জলাতঙ্ক রোগী দেখা যায়। সুতরাং যে কোনো পশুর কামড় বিশেষ করে কুকুর বা বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলেই জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হবে এবং কুকুর ও বিড়ালকে ১০ দিন দেখে রাখতে হবে। যদি এই ১০ দিন কুকুর বা বিড়াল ভালো থাকে চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ করা যেতে পারে। যদি কুকুর বা বিড়াল অসুস্থ হয়ে পড়ে, মারা যায় বা হারিয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসা পুরো মাত্রায় দিতে হবে।

আক্রান্ত হওয়া মাত্র : ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা। সাবান পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা। ক্ষতস্থানে স্পিরিট, পভিডোন আয়োডিন এবং টিংচার আয়োডিন দিয়ে পরিষ্কার করা। ক্ষতস্থান গভীর হলে সেখানকার ছিঁড়ে যাওয়া মাংস, শিরা, ময়লাবস্তু সরিয়ে ফেলা, প্রয়োজনে অবশ করিয়ে পরিষ্কার করা। কোনো সেলাই দেয়া ঠিক হবে না। যদি ক্ষতস্থান বড় হয় এবং সেলাই প্রয়োজন হয়, তাহলে স্থানটি এন্টির্ যাবিস সেরাম দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সেরাম না পাওয়া গেলে পভিডোন আয়োডিন অথবা টিংচার আয়োডিন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে খুব ভালোভাবে। ড্রেসিং বা ব্যান্ডেজ করা যাবে না। ধনুষ্টঙ্কারের টিকা দিতে হবে। ইনফেকশন না হওয়ার জন্য একটি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।

পশু পর্যবেক্ষণ করা : পশুর মধ্যে কুকুর ও বিড়াল হলে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, অন্যগুলোর বেলায় প্রয়োজন নেই।

কী কী পর্যবেক্ষণ করতে হবে : কুকুর ও বিড়ালে ১০ দিন ধরে নিম্নলিখিত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে কুকুর বা বিড়ালটির শরীরের্ যাবিস ভাইরাস আছে কি না।

১। চলাফেরায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না। হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়া বা ঝিমানো।

২। লক্ষ্যহীনভাবে চলাফেরা বা দৌড়ানো, কাউকে দেখে আক্রমণ বা ধেয়ে আসা।

৩। মুখে লালা ঝরা।

৪। গলার স্বর পরিবর্তন।

৫। ঘরের কোনায় বা যে কোনো স্থানে শুয়ে ঝিমানো।

৬। খাওয়ার প্রতি অনীহা বা না খাওয়া। খাদ্য নয় এমন জিনিস খাওয়া বা কামড় দেয়া- যেমন পাথর, ইট, কাঠ, কাগজ, লোহা ইত্যাদি।

৭। কুকুর বা বিড়ালটি মরে যাওয়া।

জলাতঙ্ক প্রতিষেধক নেয়া : জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে অ্যান্টির্-যাবিস ভ্যাকসিন বা টিকা এবং অ্যান্টির্-যাবিস সেরাম দিতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সন্দেহ থাকলে পুরো ডোজ ভ্যাকসিন নেয়া উচিত।

বর্তমান যুগে আধুনিক চিকিৎসায় নিম্নলিখিতভাবে ইনজেকশন দেয়া হয়। এর আগে ১৪টা ইনজেকশন নাভির পাশে দিতে হতো, যা ছিল কষ্টকর। সুতরাং আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গের্ যাবিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বাজারের্ যাবিস ও অ্যান্টির্-যাবিস ভ্যাকসিন পাওয়া যায়।

কিভাবে দিবেন : ইনজেকশন প্রথম দিন দেয়ার পর তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ডোজ, সাত দিনে তৃতীয় ডোজ, ১৪ দিনে চতুর্থ ডোজ, ২৮ বা ৩০ দিনে পঞ্চম ডোজ (অর্থাৎ ০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ বা ৩০ দিনে) দিতে হবে।

আক্রান্ত হওয়ার আগে প্রতিষেধক : যারা কুকুর, বিড়াল বা অন্য প্রাণী লালন-পালন করেন, তারা প্রতিষেধক হিসেবে টিকা দিতে পারেন। প্রথম ডোজ দেয়ার পর সাত দিনে দ্বিতীয় ডোজ, ২১ বা ২৮ দিনে তৃতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ দিতে হবে এক বছর পর।

দুই ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। চঈঊঈঠ ভ্যাকসিন তিন বছর এবং চঠ জঠ ভ্যাকসিন পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখতে সক্ষম।

সুতরাং আপনারা আদরের সোনামণি থেকে শুরু করে সবার জীবন রক্ষার্থে জলাতঙ্কের টিকা দিতে ভুলবেন না। বিশেষ করে যারা কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ইঁদুরসহ অন্যান্য প্রাণী লালন-পালন করেন। আর আক্রান্ত হলে বিলম্ব না করে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী টিকাগুলো দিয়ে নেবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর