July 27, 2024, 9:14 am

সংবাদ শিরোনাম
বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের অভিযানে ১০ হাজার ইয়াবাসহ যুবক আটক পার্বতীপুরে নব-নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাই চেয়ারম্যানদ্বয়ের সংবর্ধনা রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা হতে জাল সার্টিফিকেট ও জাল সার্টিফিকেট তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ ০২ জন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ র‌্যাব-১০ এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা হতে ইয়াবাসহ ০১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড় ধ্বসে নারী-শিশু নিহত পীরগঞ্জে মসজিদের দোহাই সরকারি খাস জমির গাছ কর্তন পার্বতীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক হোসেন এর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন দারুসসালাম লাফনাউট মাদ্রাসার দস্তারবন্দী নিবন্ধন ফরম বিতরণ শুরু পীরগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর শিশু’র লাশ উদ্ধার মাদক মামলায় ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামী আলাউদ্দিন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০

রাস মেলায় যেতে উপকূল এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি ॥ তৎপর হরিণ শিকারিরা

রাস মেলায় যেতে উপকূল এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি ॥ তৎপর হরিণ শিকারিরা

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে ২ নভেম্বর হতে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন ব্যাপী সুন্দরবনের দুবলারচরে ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পুন্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। উৎসরে অংশগ্রহণ করতে উপকূল অঞ্চলের পুন্যার্থী তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সুন্দরবনে প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যেও রাস পূর্ণিমার মেলাকে ঘিরে শিকারীদের হরিণ নিধনের প্রস্তুতিও চলছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার শিকারীরা রাসমেলার আড়ালে হরিণ শিকারের জন্য ফাঁদ, জাল, বড়শিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলার অর্ধশতাধিক শিকারি সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী শিকারে সক্রিয় রয়েছে। এসব শিকারি চক্র হরিণ নিধনের পর মাংস, চামড়া, হাঁড়, শিং বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লন্ডন ভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ বাংলাদেশ ও জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারের বেশি হরিণ শিকারিদের হাতে মারা পড়ে। বন বিভাগের হিসাব মতে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে। বনের আয়তন খাদ্য ও পরিবেশের ওপর এর সংখ্যা নির্ভর করে। প্রতিবছর কয়েক হাজার হরিণ মারা পড়ে। আবার কয়েক হাজার হরিণ জন্ম নেয়। সূত্রমতে ৮/১০ বছরের ব্যাবধানে বনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার হরিণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হরিণ শিকারি চক্রের দৌরাত্ম আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশবিদরা ধারণা করছেন, সারা বছর সুন্দরবনে শিকারি চক্রের হাতে যে পরিমাণ হরিণ শিকার হয় রাসমেলার সুযোগে সেই সমপরিমাণ হরিণ শিকারের আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের শিকারি চক্র বার বার আটক হলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে মুক্তি পাওয়ায় শিকারি চক্রের তৎপরতা বেড়ে গেছে। অভিনব কায়দায় তারা হরিণ শিকার করে। শিকারি সূত্রে জানা গেছে, লাইলনের তৈরি ফাদ,জাল পেতে, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, তীর, গুলি করে, কলার মধ্যে বড়শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদ ও ঘাস পাতার ওপর চেতনা নাশক ওষুধ দিয়ে হরিণ নিধন করা হয়। ফাঁদ পেতে শিকারিরা লাঠি নিয়ে আশেপাশে লুকিয়ে থাকে। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তারা ছুটে গিয়ে হরিণকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে হরিণ দুর্বল হয়ে পড়লে নৌকায় করে সুবিধামত স্থানে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখে। পরে সময় ও চাহিদামত হরিণ জবাই করে মাংস, চামড়া, শিং ও হাঁড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়। রাসমেলাকে সামনে রেখে পেশাদার শিকারিরা বনজীবী সেজে বন বিভাগ থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাস মারমিট নিয়ে মেলা শুরুর পূর্বেই হরিণ শিকারের উ্পকরণ নিয়ে বনের মাঝে লুকিয়ে রেখে আসে। রাস মেলা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপালসহ উপকূলীয় এলাকার শিকারিরা মেলা শুরু হওয়ার ১০/১৫ দিন আগে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা উপকরণ দিয়ে হরিণ শিকার করে। আবার রাস মেলা শুরু হলে বিশেষ কায়দায় উ্পকরণ নিয়ে যাওয়া শিকারিরা তীর্থ যাত্রীদের সাথে একত্রিত হয়ে মিশে যায়। মেলার আনন্দে মেতে উঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দেয় এ ফাদ দিয়ে হরিণ নিধন যজ্ঞে মেতে উঠে। রাসমেলার সময় হিরণপয়েন্ট, দুবলাচর আলোর কোলসহ বিভিন্ন চর ও সুন্দরবন সাগর মোহনায় পুণ্যার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যাটকসহ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় জনসমুদ্রে শিকারি চক্র মিশে গিয়ে চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ নিধনে মেতে উঠে। ব্যাপক নজরদারি থাকলেও শুধুমাত্র হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এ বিশাল মেলায় দর্শনার্থীরূপে আগত শিকারিদের কোনভাবে আটকে রাখা সম্ভব হয় না।
পুন্যাস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ আটটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টকার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। অনুমোদিত আটটি পথ হলো বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোস্টা হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলারচর। কদমতলা হতে ইছামতি নদী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়-য়া শিবসা-শিবসানদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। কৈখালী স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন হয়ে পশুর নদী দিয়ে দুবলার চর, বগী-বলেশ্বর-শুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর। শরণখোলা স্টেশন- সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীরা ২ হতে ৪ নভেম্বর এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পথে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত রুটের পছন্দমতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবেন। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট  ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি/সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্র সাথে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, মাইক বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যে কোনো অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে যাত্রীদের বিরত থাকতে হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুন স্বাক্ষরিত পত্রে এ সকল তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, প্রতি বছর রাস মেলার সময় কয়েক হাজার হরিণ নিধনের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত হরিণ নিধন হচ্ছে। এভাবে হরিণ নিধন হলে হরিণের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে। এর ফলে বিপন্ন হবে সুন্দরবনের চিত্রাহরিণ। বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন হারাবে তার ঐতিহ্য।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর