July 27, 2024, 12:34 pm

সংবাদ শিরোনাম
বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের অভিযানে ১০ হাজার ইয়াবাসহ যুবক আটক পার্বতীপুরে নব-নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাই চেয়ারম্যানদ্বয়ের সংবর্ধনা রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা হতে জাল সার্টিফিকেট ও জাল সার্টিফিকেট তৈরীর সরঞ্জামাদিসহ ০২ জন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ র‌্যাব-১০ এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা হতে ইয়াবাসহ ০১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড় ধ্বসে নারী-শিশু নিহত পীরগঞ্জে মসজিদের দোহাই সরকারি খাস জমির গাছ কর্তন পার্বতীপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক হোসেন এর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন দারুসসালাম লাফনাউট মাদ্রাসার দস্তারবন্দী নিবন্ধন ফরম বিতরণ শুরু পীরগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর শিশু’র লাশ উদ্ধার মাদক মামলায় ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামী আলাউদ্দিন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দেশী-বিদেশী পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন সম্পৃক্ত

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দেশী-বিদেশী পাঁচটি জঙ্গি সংগঠন সম্পৃক্ত

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় দেশী-বিদেশী পাচঁটি জঙ্গি সংগঠন সম্পৃক্ত ছিল। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান গতকাল বুধবার অষ্টম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানিতে এ তথ্য তুলে করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম আগামি ১৩ নভেম্বর সোমবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আদালত এক আদেশে বলেন, আগামি ১৩, ১৪ ও ১৫ নভেম্বর মামলার কার্যক্রম ধারাবাহিক ভাবে চলবে। যুক্ততর্কে সৈয়দ রেজাউর রহমান গতকাল বুধবার বলেন, ওই নৃশংস হামলায় দেশী-বিদেশী পাচঁটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত। সংগঠনগুলো হচ্ছে-হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ, কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদী, তেহরিক জিহাদ-ই ইসলাম, লস্করই তৈয়বা এবং মিয়ানমার আরাকানের সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। তিনি বলেন, এসব জঙ্গি সংগঠনসহ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ভয়াবহ নৃশংস ও বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ত ছিল। তৎকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, ডিজিএফআই, এনএসআই ও বাংলাদেশ পুলিশকে ওই ঘটনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করেছে। সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, জড়িত থাকার দোষ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ১২ জন আসামি ১৩টি জবানবন্দি পেশ করেছেন। আসামীদের মধ্যে জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি দুটি জবানবন্দি পেশ করেন। তার জবানবন্দির অংশ বিশেষ তুলে ধরেন তিনি। মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে-ওই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে হত্যা করা। এ ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তাবায়নে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং জড়িতদের নাম তার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। এখানে বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ কারা কারা সম্পৃক্ত মুফতি হান্নান জবানবন্দিতে তার উল্লেখ করেছেন। প্রধান কোসুঁলি বলেন, আসামীর জবানবন্দিকে সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষের আটজন সাক্ষি সাক্ষ্য দেন। সাক্ষিদের মধ্যে রয়েছেন- মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমি, মেজর (অব:) আতিকুর রহমান, মাওলানা মোসাদ্দেক, আবদুল আজিজ সরকার, মেজর (অব:) সৈয়দ মুনিরুল ইসলাম। সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগপত্রে ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে ৮৩ জন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরো ২০ জনকে সাক্ষি করা হয়। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল এ সাক্ষ্য শুরু হয়ে শেষ হয় গত ৩০ মে। আসামীপক্ষ সাক্ষিদের জেরা করেছে। এরপর সকল আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়। আসামীপক্ষে ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে। আসামীপক্ষের কোন কোন সাক্ষ্যকে জেরায় তাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে দাবি করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, ২১ আগষ্টে হতাহতের ঘটনায় আনা মামলা মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট এবং বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে আনা মামলা মহানগর ষ্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ আমলে নেয় ২০১১ সালের ১৪ জুলাই। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি বলেন, ২১ আগষ্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে. কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা-সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব:) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। এ ছাড়া ৩ জন আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন। প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করছেন আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরায় হোসেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম, আবদুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাবৃন্দও এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এ ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৯ সালের ৩ অগাস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। মামলাটি তদন্তের ভার পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর