কুলাউড়ায় বৈধ ও অবৈধ করাতকল থেকে মাসোহারা আদায় করে বনবিভাগ
মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার
কুলাউড়া উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত ৫৪ টি করাতকলের মধ্যে বনবিভাগের সর্বশেষ করা তালিকা অনুযায়ী ২৮টি করাতকলকে বৈধ ঘোষনা করা হয়। অথচ সরকারি করাতকল বিধিমালা অনুযায়ী উপজেলার ৫৪ টি করাতকলই অবৈধ। আর সেই সুযোগে বৈধ ও অবৈধ করাতকল থেকে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা মাসোহারা আদায় করে থাকে কুলাউড়া বনবিভাগ। অবৈধ করাতকল মালিকরা বনকর্তাদের চাহিদামত টাকা না দিলে পরিচালনা করা হয় উচ্ছেদ অভিযান। জানা যায়- বনবিভাগের সর্বশেষ ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮টি করাতকল বৈধ এবং ২৬টি করাতকল অবৈধ হিসেবে করাতকলের তালিকা করা হয়। করাতকল বিধিমালা আইন ২০১২ এর ৭ (ক) অনুযায়ী সরকারি বনভূমির সীমানা হতে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাতকল স্থাপন করা যাবে না এ নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের সর্বশেষ প্র্রতিবেদন অনুযায়ী ২৮টি বৈধ করাতকল বনভূমির সীমানা হতে সর্বোচ্চ দুরত্ব ৯ কিলোমিটার এবং সর্বনি¤œ দুরত্ব ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই স্থাপিত। অথচ অবৈধ করাতকলের তালিকায় মাত্র ৮টি করাতকল রয়েছে বনভূমির সীমানার ৫কিলোমিটার দুরত্বে। যার কারনে সেগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়নি। কাদিপুর ইউনিয়নের কিয়াতলা ও ছকাপন বাজারের পাশে দুটি করাতকলে দিনরাত অবৈধ কাঠ এনে সংঘবদ্ধ কাঠ চোরাকারবারিরা কাঠ চেরাই করে বিভিন্ন ফার্নিচার কারখানায় বিক্রি বলে এলাকাবাসী জানান। এব্যাপারে বন বিভাগ ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সুফল পায়নি এলাকাবাসী। তাছাড়া কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার এলাকায় মো. আব্দুল আজিজ শামীমের করাতকল এবং মো. লুৎফুর রহমানের করাতকল দুটি পাশাপাশি অর্থাৎ একশ গজের মধ্যে অবস্থিত। বনবিভাগের প্রতিবেদনে মো. আব্দুল আজিজ শামীমের করাতকল বনভূমি হতে ৯ কিলোমিটার আর মোঃ লুৎফুর রহমানের করাতকল বনভূমি হতে ৪ কিলোমিটার দুরত্বে অবিস্থিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর মো. লুৎফুর রহমানের করাতকল, শরীফপুর ইউনিয়নের নসিরগঞ্জ বাজার থেকে মামুন মিয়ার করাতকল, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিঙ্গাজিয়া বাজার থেকে সিপার আহমদের করাতকল উচ্ছেদ করা হয়। এসব করাতকল উচ্ছেদের নেপথ্যে পাশর্^বর্তী করাতকল মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ এবং উচ্ছেদকৃত করাতকল মালিকরা বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সন্তোষ্ট করতে না পারাই মুল কারণ বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সুত্র জানায়- প্রতিমাসে ২৮টি বৈধ করাতকল থেকে ৪২ হাজার এবং ২৬টি অবৈধ করাতকল থেকে ৬৫ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ৭ হাজার টাকা মাসোহারা আদায় করে থাকে বনবিভাগ। আর মাস শেষে এসব টাকা আদায় করেন বনবিভাগের একজন মালি। তার নিজস্ব মোটরসাইকেল চড়ে তিনি সারা মাস বিভিন্ন করাতকলে ছুটে বেড়ান। টাকা আদায়ের কারণে তাকে বনবিভাগের আর কোন দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তিনি চাকুরিতে যোগদানের পর থেকেই কুলাউড়াতে আছেন। ইতোমধ্যে তাকে ১০ বার বদলী করা হয়েছে। কিন্তু তিনি উপরের কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে টিকে আছেন । এদিকে কুলাউড়া বনসম্প্রসারণ কেন্দ্রের মাত্র একশ গজের মধ্যে ৩টি করাতকল রয়েছে। এই করাতকলগুলোতে বৈধর চেয়ে অবৈধ কাঠ বেশি চেরাই করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সম্প্রসারণ কেন্দ্রেই অফিস ও রাত্রি যাপন করেন কুলাউড়া রেঞ্জ অফিসার। অথচ এই করাতকলগুলোতে অবৈধ কাঠ আটকের ব্যাপারে কোন অভিযান পরিচালনা করেন না রহস্যময় কারণে। শুধু এই করাতকলগুলোই নয় উপজেলার কোন বৈধ-অবৈধ কোন করাতকলেই অবৈধ কাঠ আটকের ব্যাপারে অভিযান পরিচালিত হয়নি। কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, অবৈধ করাতকল উচ্ছেদ অভিযান করতে হলে ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন হয়। তাই আপাতত অভিযান বন্ধ আছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে যারা লাইসেন্স পেয়েছে, তারা ২০১২ সালের আগে পেয়েছে। অবৈধ ২৬টির মধ্যে ২৩টি ২০১২ সালের আগের, তাহলে তারা কেন লাইসেন্স পেলো না ?- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- তারা কেন নেয় নাই, তারাই ভালো বলতে পারবে। মাসোহারা উত্তোলনে আকবর আলী ক্যাশিয়ার কি-না? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কোন ক্যাশিয়ার নাই। লোকাল ছেলে হিসেবে, তিনি সব কিছু চেনেন। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন।