দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হার ৮৩ রানের। প্রায় নয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে হার ৭ আন্তর্জতিক ম্যাচের সবকটিতেই। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশড অতিথিরা।
পচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে রোববার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২২৪ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি এটা সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে ১৮ ওভার ৩ বলে ১৪১ রানে গুটিয়ে যায় সাকিব আল হাসানের দল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান মিলার। তার দানবীয় ইনিংসের পর অনেকটাই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা।
প্রথম ওভারে ১৭ রান নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। ইমরুল কায়েসের রান আউট দিয়ে পরের ওভারেই কেটে যায় ছন্দ। পাল্টা জবাব দেওয়ার মতো ব্যাটিং করেন কেবল সৌম্য সরকার। তিনিও ফিরে যান ২৭ বলে ৪৪ রান করে।
সাকিব, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান যেতে পারেননি দুই অঙ্কেই। থিতু হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। হয়নি তেমন কোনো জুটি। দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা দেখা যায়নি কারোর মাঝে।
পুরো ২০ ওভারও টিকেনি বাংলাদেশ। ৯ বল বাকি থাকতেই তাদের থামিয়ে দেন বিউরান হেনড্রিকস।
এর আগে অত বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত ছিল না স্বাগতিকদের শুরুর ব্যাটিংয়ে। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের যৌক্তিকতা প্রমাণের দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নেন সাকিব। চার ওভারের টানা স্পেলে ২২ রান দিয়ে তুলে নেন ম্যাঙ্গালিসো মোসেলে ও জেপি দুমিনির উইকেট।
ঝড় তোলার আগেই এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যান মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ৩ উইকেটে ৭৮। কিন্তু পরের ১০ ওভারে বাংলাদেশের পরিকল্পনা মতো হয়নি কিছুই। আমলা-মিলারের দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
শূন্য রানে মুশফিক জীবন দেন মিলারকে। বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান আউট হতে পারতেন ২ ও ১৮ রানে। শুরুতে একটু নড়বড়ে ব্যাটিং করা মিলার এরপর দ্রুত ফিরে পান নিজেকে।
আমলা-মিলার জুটিতে রান আসে বানের স্রোতের মতো। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের পথে থাকা আমলাকে ফিরিয়ে ৭৯ রানের জুটি ভাঙেন সাইফ। ৫১ বলে ৮৫ রান করা আমলা ১১টি চারের পাশে মেরেছেন একটি ছক্কা।
আমলা ফিরলেও স্বস্তি ফেরেনি বাংলাদেশ দলে। ২৩ বলে ফিফটি করা মিলার ততক্ষণে ধরেছেন রণমূর্তি। তার টর্নেডো ব্যাটিংয়ের সামনে উড়ে যায় সব বোলার।
মিলারের তাণ্ডবের সবচেয়ে বড় ঝাপটা গেছে সাইফের ওপর দিয়ে। তরুণ অলরাউন্ডারের এক ওভারেই আসে ৩১ রান। প্রথম পাঁচ বলে ছক্কা হাঁকান মিলার। বল কোথায় ফেলবেন যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না সাইফ। শেষ পর্যন্ত অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের বলে ছয় বলে ছয় ছক্কা হজমের হাত থেকে বাঁচেন তিনি।
শেষ ওভারে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড নিজের করে নেন মিলার। আগের রেকর্ড ছিল তারই স্বদেশি রিচার্ড লেভির। উদ্বোধনী এই ব্যাটসম্যান ২০১২ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪৫ বলে।
শেষ পর্যন্ত মিলার ৩৬ বলে অপরাজিত থাকেন ১০১ রানে। ৯টি ছক্কার সঙ্গে তার ইনিংসে চার ৭টি। মিলার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১৪৬ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ৫ ওভারে ৯০ রান!
সাকিব ছাড়া আর সবার ওভারপ্রতি রান দুই অঙ্কের ঘরে। সাইফ ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৫৩ রান। রুবেল ৫১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
বোলারদের হতাশার দিনে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি ব্যাটসম্যানরাও। তাই একরাশ হতাশা নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ২২৪/৪ (আমলা ৮৫, মোসেলে ৫, দুমিনি ৪, ডি ভিলিয়ার্স ২০, মিলার ১০১*, বেহারদিন ৬*; সাকিব ২/২২, তাসকিন ০/৪১, মিরাজ ০/৪৬, সাইফ ২/৫৩, মাহমুদউল্লাহ ০/১০)
বাংলাদেশ: ১৮.৩ ওভারে ১৪১ (ইমরুল ৬, সৌম্য ৪৪, সাকিব ২, মুশফিক ২, সাব্বির ৫, মাহমুদউল্লাহ ২৪, লিটন ৯, সাইফ ২৩, মিরাজ ১৩, তাসকিন ৪, রুবেল ১*; হেনড্রিকস ১/২৮, দুমিনি ২/২৩, ফ্রাইলিংক ১/৯, প্রিটোরিয়াস ১/২৭, ফাঙ্গিসো ২/৩১, ফেলুকওয়ায়ো ১/২১)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৮৩ রানে জয়ী
সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী