সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সম্পদ লোভী ছেলের জিম্মিদশা থেকে সার্বিক নিরাপত্তাসহ প্রাণে বাঁচাতে বয়োবৃদ্ধ বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা গোলেজা বেগমের করুণ আকুতি।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার ছাপড়হাটী ইউনিয়নের উত্তর মরুয়াদহ গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, আল-আমিন ও মেয়ে ফাতেমা বেগম মিলে বাবা ইব্রাহিম আলী (৮৭) ও মা ৮৫ বছর বয়সী গোলেজা বেগমকে জিম্মি করে সম্পত্তি কুক্ষিগত করছে।
আশরাফুল ইসলাম বিভিন্ন সময় বাবা ও মায়ের প্রতি অকথ্য নির্যাতন, জুলুম ও হত্যা করার ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ২৬৭৭/১০ নম্বর দলিলমূলে বাবার কাছ থেকে বসবাসের ঘরবাড়ি, দোকানঘর সম্বলিত বাণিজ্যিক শ্রেণির ৪ শতকসহ ও অন্যান্য দাগের ৬৬ শতক জমি লিখে নেয়।
এরপর ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তারিখে ৭৯০৮ নম্বর দলিলমূলে আরো ৯ শতক জমিসহ মোট ৭৫ শতক জমি লিখে নেয়। এছাড়া, একই কায়দায় বিভিন্ন তারিখে ৫৭ শতক জমি বিক্রি করে সমস্ত টাকা (১ কোটি ১৪ লাখ), অন্যান্য জমি-জমা, গাছপালা, গরুসহ বাবা-মায়ের সমস্তকিছুই হস্তগত করে ২ কোটি টাকার বেশি পরিমাণে কুক্ষিগত করে। নিজে পাগলামীর ভান করে পিতার কাছ থেকে সম্পত্তি বিক্রির টাকায় মোহরানা বুঝে দিয়ে পর্যায়ক্রমে ১ম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার আগে লেখাপড়া ও চাকরির নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর ২য় বিয়ে করে।
এরপর আশরাফুলের সঙ্গে আল-আমিনও যোগ দিয়ে পিতাকে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে বিভিন্ন তারিখে ৬৫ শতক জমি তার নামে দলিল করে নেয়। আল-আমিনের দলিলকৃত ৬৫ শতক জমির স্থলে অতিরিক্ত পরিমাণে জমি ভোগ করে বাবার সংসারের লাখ লাখ টাকা কুক্ষিগত করে।
এরপর পালাভারি করতে আশরাফুল বাবাকে ৮ শতক জমি ছোট বোন ফাতেমার নামে লিখে দিতে বাধ্য করায়। সবশেষে গত ২০ নভেম্বর ডাক্তার দেখানোর ছলে বাবা ইব্রাহিম আলীকে গোপনে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে আশরাফুল ইসলাম নিজ নামে ৯ শতক ও ফাতেমার নামে ৪ শতক জমি দলিল করে দিতে বাধ্য করে। যার দলিল নং- ৭৯০৯/২৪। এ দলিল ২ টিতে লেখক (মোক্তার) একাকীই সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন। আশরাফুল, আল-আমিন ও ফাতেমা বেগম এখানেই থেমে নেই। বাবা-মাকে জিম্মিদশায় রেখে তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোন কথা বলতে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করে। অন্যথায়, খুন করার জন্য তৎপরতা দেখায়।
এদিকে, বাবার দলিল করে দেয়া ২৬ শতক জমির বিষয়ে কথা বলতে গেলে মালিক ও স্বত্ববান আবু বক্কর সিদ্দিককে হত্যা করবে। অন্যথায় বাবাকে হোক আর মাকেই হোক। দু’জনের যে কোন একজনকে খুন করে আবু বক্কর সিদ্দিককে হত্যা মামলায় ফেলবে বলে গভীর ষড়যন্ত্রমূলক হুমকী প্রদান করছে। এরআগে একদিন গত বৃষ্টির রাতে আশরাফুল ইসলাম তার মা গোলেজা বেগমকে পরনের কাপড় দিয়ে গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে রাস্তার ধারে অমানুসিক নির্যাতন করে।
এ ঘটনায় কঞ্চিবাড়ি পুলিশের সহযোগিতায় প্রাণে রক্ষা পান বৃদ্ধা মা। ফলে আশরাফুল, আলা-আমিনকে তার সহযোগিতা সার্বক্ষণিক থাকে। বয়োবৃদ্ধ ইব্রাহিম আলী প্রাণ ভয়ে আশরাফুল, আল-আমিনের নানান অত্যাচার ও সম্পত্তি লিখে নেয়াসহ প্রাণে হত্যা করার তৎপরতা বিষয়ে খোলামেলা কিছু না বললেও আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, বৃদ্ধা স্ত্রীসহ তার জীবনের সার্বিক নিরাপত্তার বড়ই অভাব। এরা (আশারাফুল, আল-আমিন) তাকেই হোক আর তার স্ত্রীকেই হোক প্রাণে মেরে ফেলে বক্করের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করবে। আর না হয় বক্করকেই মেরে ফেলবে। তাই, আমি বক্করকে কিছুই দিতে পারলাম না, দূরে থেকে ওকে দোয়া করি। সত্য কথা বলতে পরিনি। ওর জীবনের ঝুঁকি আছে। তাইভেবে ওরেই বিরুদ্ধে মিথ্যা হলেও বলতে হয়। বক্কর তো সহজ-সরলভাবে চলে। সে এদের মতো কাউকে ঠকাতে জানেনা।
সেজন্য ওর বিপদ বেশি। তাছাড়া, আশরাফুল ও আল-আমিনের হাত থেকে বাঁচতে আগে অনেকবার পুলিশকে অভিযোগ করে, পুলিশ ডেকে এনেও কোন লাভ হয়নি। বরং, পরবর্তীতে এদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা বলেন, আশরাফুল ও আলামিনের এসব কু-কীর্তি সবাই জানে। অনেকবার সমাধানের চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি।
উল্লেখ্য, গোলজার হোসেন নামে বড় ছেলে সাড়ে ৭ বিঘা জমিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ কুক্ষিগত করেছে। তিনিও না-কি বাবা-মাকে অসংখ্য নির্যাতন করেছে। তাছাড়া, এদের মা গোলেজা বেগমও সংসারের টাকায় তার বাবার বাড়িতে সাড়ে ৬ বিঘা জমি কিনে ঐ জমিসহ সংসারের লাখ লাখ টাকা কুক্ষিগত করেছেন বলে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে।