ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
সৌম্য সরকারের দারুণ ইনিংসে অনেকটা সময় সমান তালে লড়াই করেও পেরে উঠল না বাংলাদেশ। পার্থক্য হয়ে গেল দুই দলের শেষের ব্যাটিং। শেষ ৫ ওভারে ঝড় তোলা দক্ষিণ আফ্রিকা পেল আরেকটি জয়।
প্রথম টি-টোয়েন্টি ২০ রানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল জেপি দুমিনির দল।
ব্লুমফন্টেইনের ম্যানগাউং ওভালে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ১৯৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৯ উইকেটে ১৭৫ করে বাংলাদেশ।
বিশাল রান তাড়ায় দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন সৌম্য। অন্য প্রান্তে পাননি খুব একটা সহায়তা। ফুল টস বলে স্কয়ার লেগ ফিল্ডারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইমরুল কায়েস।
প্রিয় পজিশন তিন নম্বরে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অধিনায়ককে ফিরিয়ে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট নেন ৩৩ বছর বয়সে অভিষিক্ত পেসার রবি ফ্রাইলিংক।
অন্য প্রান্তে রান আসছিল ¯্রােতের বেগে। দারুণ ড্রাইভ ও পুলে বাউন্ডারি তুলে নিচ্ছিলেন সৌম্য। স্পিনে বেরিয়ে এসে হাঁকিয়েছিলেন ছক্কা। প্রথম ফিফটির পথে থাকা বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো। ৩১ বলে ৫টি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৭ করে ফিরে যান সৌম্য।
প্রিয় স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বাঁহাতি স্পিনার অ্যারন ফাঙ্গিসোর বলে সীমানায় এবি ডি ভিলিয়ার্সের হাতে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিম। ফেলুকওয়ায়োর বলে আকাশে তুলে দিয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। দুটি ছক্কায় ১৬ রান করে তাদের অনুসরণ করেন সাব্বির রহমান।
তিন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায় ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় বাংলাদেশ। দারুণ চেষ্টা করেছিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তবে তার অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে কেবল।
১০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২ উইকেটে ৯৭। বাংলাদেশের ৩ উইকেটে ৯৭। এরপরই বাংলাদেশের ছন্দপতন। ডট বল বেশি খেলে চাপ বাড়িয়ে রান তোলার তাড়ায় উইকেট হারায় অতিথিরা। ১৫ ওভার শেষেও রানে দু দল ছিল পাশাপাশি। কিন্তু মাচ কার্যত তখনই শেষ। দক্ষিণ আফ্রিকা হারিয়েছিল ৪ উইকেট। বাংলাদেশ তখন হারিয়ে ফেলেছে ৬টি।
চার পেসার নিয়ে নামা বাংলাদেশ বোলিং শুরু করেছিল স্পিন দিয়ে। সাফল্যও আসে দ্রুত। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে বোল্ড করে হাশিম আমলাকে বিদায় করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরু থেকে ঝড় তোলা কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে এবি ডি ভিলিয়ার্সের জুটি জমে উঠতে সময় নেয়নি। টর্নেডো ইনিংস খেলা ডি ভিলিয়ার্স একপর্যায়ে ৭ বলের মধ্যে হাঁকান ছয়টি বাউন্ডারি। এর সবই যে বাজে বল ছিল এমন নয়। দারুণ শটে গ্যাপ বের করে নিয়েছেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
দুই প্রান্তে স্পিন আনার পর ভাঁটা পড়ে রানের ¯্রােতে। মিরাজ-সাকিবের দুটি আঁটসাঁট ওভারে তৈরি হওয়া চাপ ছক্কায় উড়াতে চেয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সঙ্গে হয়ে যেত ফিফটি। পারেননি তিনি, মিরাজের বলে লং অফে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে।
২৭ বলে খেলা ডি ভিলিয়ার্সের ৪৯ রানের ইনিংসটি গড়া ৮টি চারে।
চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া ফাফ দু প্লেসির জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া জেপি দুমিনি ফিরেন দ্রুত। সাকিবকে ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন ইমরুলের হাতে। লং অফে সহজ ক্যাচ কঠিন করে মুঠোয় নেন তিনি।
ক্যারিয়ার সেরা ৫২ ছাড়িয়ে আরও দূরে চোখ রাখা ডি কককে এলবিডব্লিউ করে ফেরান রুবেল হোসেন। পেসারদের মধ্যে এদিন তিনিই ছিলেন সেরা বোলার। ৪৪ বলে খেলা ডি ককের ৫৯ রানের ইনিংসটি সাজানো ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলার ও ফারহাদ বেহারদিনের ৫ ওভার স্থায়ী ৬২ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে যায় দুইশ রানের কাছে। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন ১৭ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩৬ রান করা বেহারদিন।
৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। একটি করে উইকেট নেন সাকিব ও রুবেল। রুবেল ছাড়া অন্য পেসাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন শফিউল ইসলাম। ২ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
প্রথম দফায় চারটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। সেবার চার ম্যাচেই হেরেছিল দল। হার দিয়েই শুরু হল অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় দফা। এখনও ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সুযোগ আছে। দেশে ফিরে যাওয়ার আগে বোরবার পচেফস্ট্রুমে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৯৫/৪ (ডি কক ৫৯, আমলা ৩, ডি ভিলিয়ার্স ৪৯, দুমিনি ১৩, মিলার ২৫*, বেহারদিন ৩৬*; সাকিব ১/২৮, মিরাজ ২/৩১, রুবেল ১/৩৪, তাসকিন ০/২১, শফিউল ০/৩৩, সাইফ ০/২০, মাহমুদউল্লাহ ০/২৩)
বাংলাদেশ: ১৭৫/৯ (ইমরুল ১০, সৌম্য ৪৭, সাকিব ১৩, মুশফিক ১৩, সাব্বির ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩, সাইফ ৩৯*, মিরাজ ১৪, তাসকিন ০, শফিউল ১, রুবেল ২*; প্যাটারসন ২/২৯, হেনড্রিক্স ২/৪২, ফ্রাইলিংক ২/৩৩, ফেলুকওয়ায়ো ২/২৫, দুমিনি ০/১৫, ফাঙ্গিসো ১/৩০)
ম্যাচসেরা: এবি ডি ভিলিয়ার্স