দাম বাড়ছেই ডলারের
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী যেখানে ডলারের দাম পড়তির দিকে সেখানে বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র। এখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। দুর্বল হচ্ছে টাকা।
রফতানি কম হওয়া এবং রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ার কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ডলারের দাম বাড়লে রফতানিকারকরা লাভবান হন আর ক্ষতিগ্রস্ত হত আমদানিকারকরা।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যমূল্য পরিশোধ বা বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সেবা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতেই বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। মুদ্রার বিনিময় হার সাধারণত দুইভাবে করা হয়। নমিনাল বিনিময় হার এবং প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার। এক মুদ্রার বিপরীতে অন্য মুদ্রার যত পাওয়া যায় তাই নমিনাল বিনিময় হার। অন্যদিকে প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হারের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের দাম বেড়েছে ২০ পয়সা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার এখন ৮০ টাকা ৮০ পয়সা। জুন শেষে যা ছিল ৮০ টাকা ৬০ পয়সা। আর মার্চে ছিল ৭৯ টাকা ৬৮ পয়সা। মার্চ থেকে জুন এ তিন মাসে বাড়ে এক দশমিক ১৪ শতাংশ। আর জুন শেষে টাকা-ডলার বিনিময় হার পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সালের জুন শেষে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বাইরে কার্ভ মার্কেটে (খোলা বাজারে) ডলারের দাম আরো বেশি।
ওগএ০
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রফতানি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটি ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হিসেবে বিবেচিত। আর আমদানির দায় মেটাতে ডলার ব্যয় করতে হয়। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পুরোটাই ধারণ করেতে পারে না ব্যাংক। ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রাখতে পারে কোন ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত এ সীমা মেনে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণ করতে হয়। যখন কোন ব্যাংকে সীমার অতিরিক্ত ডলার হয়ে যায় তখন অন্য ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তা বিক্রি করে দেয় ওই ব্যাংক। মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে ডলার ক্রয় বিক্রয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গেল অর্থবছরের এপ্রিল-জুন এ তিনমাসে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রয় করে। তবে এ সময়ে কোন ডলার কেনেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি ডলার বিক্রয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভিন্ন চিত্র ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার থেকে মোট ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল। আর বিক্রি করেছিল মাত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি ধীরগতিতে এগুচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে মোট ৮৬৬ কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৮০৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ২৩ শতাংশ। এ তিন মাসের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দুই দশমিক ৮৪ শতাংশ কম রফতানি হয়েছে। এ সময়ের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। দেশে চালের সংকট থাকায় আমদানি ব্যয় বেশি বেড়েছে। এর পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও ব্যয় বাড়াচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রফতানিকারকরা বাড়তি অর্থ পাচ্ছেন। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। তবে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, তাদেরকে পণ্য বা যন্ত্রপাতির আমদানিতে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।