February 19, 2025, 10:11 pm

সংবাদ শিরোনাম
লামায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যন্ত্রাংশ মেরামতের দ্রুত উদ্যোগ দরকার সকল ভাষা সৈনিকদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের দাবিতে মানবাধিকার জোটের মানববন্ধন উখিয়ায় দূর্বৃত্তের হামলায় যুবদল নেতা আহত টেকনাফে দুই লাখ ইয়াবাসহ ৭ রোহিঙ্গা আটক মিঠাপুকুরে গভীর নলকূপের পরিচালনা কমিটির দ্বন্ধে দেড়,শ বিঘা জমির চাষাবাদ অনিশ্চিত ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণে লামার ২৬ অপহৃত শ্রমিক মুক্ত জৈন্তাপুরে আপন মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে পিতাকে আটক। গোপালগঞ্জে যুগান্তরের রজতজয়ন্তী উৎসব পালিত আজহারের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল পার্বতীপুরে নিখোঁজের একদিন পর রেল লাইনের পাশ থেকে মস্তকবিহীন হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার

বিলুপ্তির পথে পটুয়াখালী রাখাইন মাতৃভাষা ॥ সংরক্ষনসহ পৃস্টপোষকতায় নেই রাস্ট্রীয় উদ্যোগ ॥

আরিফ সুমন, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :


যথাযথ চর্চা, মাতৃভাষায় শিক্ষা সংকট এবং সংরক্ষনের অভাবে সংকটের মুখোমুখি পটুয়াখালীর ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের মাতৃভাষা। ক্ষয়িষ্ণু এ জাতিসত্তার নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষা মুখে ব্যবহার করলেও লিখতে বা পড়তে পারছেনা। যথাযথ পৃস্টপোষকতা না পেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম’র জন্য মাতৃভাষা সংরক্ষন ও প্রচলন নিয়ে শংকিত এ জাতিগোষ্ঠী।
ভাগ্য বিতারিত হয়ে ১৭৮২ সালে মায়ানমারের অরাকান প্রদেশ থেকে পটুয়াখালীর জনমানবহীন, জংগলাকীর্ন  রাঙ্গাবালীতে এসে বসতি স্থাপন করে নৃ-জনগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়। পরে বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে তোলে বসতি। রাজকীয় জীবন ধারায় অভ্যাস্ত এ জাতিগোষ্ঠী হিংস্র জীবজন্তু পরিপূর্ণ জঙ্গল পরিস্কার করে গড়ে তোলে আবাদি জমি। ধীরে ধীরে এদের পাশেই গড়ে ওঠে বাংগালী বসতি। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারায়, ভাষাগত দুরত্বের কারনে দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ে রাস্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা ধারা থেকে। হয়ে পড়ে অনাগ্রসর জাতি। ভূমি বিরোধসহ নানা ঝামেলায় জড়িয়ে এ জাতিগোষ্ঠীর অনেকেই ধীরে ধীরে পাড়ি জমাতে থাকে মায়ানমানর। ফলে প্রায় ১০০টি পাড়ার ৫হাজার ১শ ৯০টি পরিবারের মধ্যে রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ায় ২৮ টি পাড়ায় ৩০৪টি পরিবারে ১১৭৪ জনগোষ্ঠীর বসবাস সমৃতি চিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে।


মিয়ানমারের উপভাষা রাখাইন ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত এ জাতিগোষ্ঠীর জন্য শুরু থেকেই মাতৃভাষায় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বিকল্প হিসেবে বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ফলে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও তারা নিজেদের ভাষা পড়তে এবং লিখতে পাড়েনা অনেকেই। ক্ষয়িষ্ণু এ সম্প্রদায়ের ১৪২ জন বিদ্যালয়গামী শিশু কিশোররা চায় মায়ের ভাষা যেভাবে মুখে বলছে সেটা পড়তে ও লিখতে। ফলে শিশু শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে ভাষাগত চর্চা টিকিয়ে রাখতে নিজেদের সীমিত পৃস্টপোষকতায় বৌদ্ধবিহারে পাঠশালা খুলে রাখাইন মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার শেষ চেস্টা করছেন সীমা বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উত্তম ভিক্ষু, আমখোলাপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উসোচিত্ত মহাথের।
উসোচিত্ত মহাথের কারিতাস বাংলাদেশের আইসিডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণীর বই পেয়ে স্বোচ্ছাশ্রমে পাঠদান করাচ্ছেন। তবে এখানে রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতাসহ অর্থিক নানা সমস্যা। মন্দিরের সীমিত পরিসরে দারিদ্রতায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কস্টকর উরেø্যখ করে আমখোলাপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উসোচিত্ত মহাথের বলেন, রাখাইন ভাষার মৌখিক চর্চা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে লিখিত এবং পঠিত কোন চর্চা ছিলনা। ফলে অনেকেই মুখে বলতে পারলেও লিখতে ও পড়তে পারেনা। একারনেই মায়ের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে মায়ানমার থেকে বই সংগ্রহ পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এতেও রয়েছে নানামুখী সমস্যা।
রাখাইন বর্নমালার পাঠ্য বইয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে রাখাইন শিশুরা যেন নিজের ভাষাকে ধারন ও লালন করতে পারে এমন দাবী করে রাখাইন অধিকার আন্দোলন কর্মী মং মিয়া বলেন, জাতিগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের অধিকার এখনও সংবিধানিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেশের ৪৫টি নৃ-জনগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষনেও রাস্ট্রের উদ্যোগ ছিলনা। অনেক ভাষার অনেক শব্দ এ কারনে হারিয়ে গেছে। যা কখনো হয়ত উদ্বার করা যাবেনা। ভাষার জন্য বুকের রক্ত দেয়া কোন রাস্ট্রের জন্য এটি কোন সুখককর বিষয় নয়। তবে দেরীতে হলেও মাত্র ৫টি জনগোষ্ঠীর মাঝে পাঠ্যবই বিতরন করছে সরকার। এখানেও উপেক্ষিত রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়।
পটুয়াখালী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সারকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় রাখাইন মাতৃভাষা সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশপাশি চাহিদার কথা জানালে শিক্ষকসহ বই সরবারহ করা হবে।

প্রাইভেট ডিটেকটিভ/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রুহুল আমিন

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর