January 15, 2025, 11:44 am

সংবাদ শিরোনাম
তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ ঢাকায় দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করলেন সন্ত্রাসীরা: বেনাপোলে ভারতীয় ভয়ঙ্কর ট্যাপেন্টাডোল জব্দ মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ লামায়-আলীকদম অনুপ্রবেশকালে ৫৮ মিয়ানমার নাগরিকসহ ৫ দালাল আটক শিবচরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের লিফলেট বিতরন মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ সেনাবাহিনীর অভিযানে নবীগঞ্জ থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার নাটোরে ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

নীলফামারির সৈয়দপুরে স্বামী, দেবর, জায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা।

পার্বতীপুর প্রতিনিধি;
স্বামী, শ্বাশুড়ি, দেবর ও যায়ের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহননের চেষ্টাকারী স্বনামধন্য এক মারোয়াড়ী পরিবারের গৃহবধূ জ্যোতি অবশেষে মারা গেছেন।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর)  রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । এখবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে । আজ ছিল তাঁর জন্মদিন।গত বৃহস্পতিবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে তিনদিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন দুই সন্তানের জননী ওই অসহায় নারী । তার নিজের হাতে লেখা সুইসাইড নোটে উঠে এসেছে আভিজাত্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নির্যাতনের লোমহর্ষক অভিযোগ । এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে । মৃত গৃহবধূ জ্যোতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান ও শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কির স্ত্রী । জানা যায় , এক সপ্তাহ আগে দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তা ছবি তুলে সৈয়দপুর হিন্দু কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের কাছে ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় জ্যোতি । কিন্তু কেউই তার উপর পারিবারিক অত্যাচারের বিষয়ে সুরাহা করতে এগিয়ে না আসায় গত বৃহস্পতিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর ) দিবাগত
রাতে অস্বাভাবিক পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে । শহীদ বদিউজ্জামান সড়ক এলাকায় ভাড়া বাড়িতে এই ঘটনায় গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা টের পায় । কিন্তু তাৎক্ষণিক হাসপাতালে না নিয়ে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করতে থাকে নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী ডা . অমৃতা কুমারী আগারওয়াল । কিন্তু অবস্থার অবনতি হলেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি । শুক্রবার পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় । গত তিনদিন থেকে সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ( আইসিইউ ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন । ঘুমের ওষুধ খাওয়ার আগে ডায়েরীর পাতায় লেখা দুই পৃষ্ঠার ওই সুইসাইড নোটে জ্যোতি তার মৃত্যুর জন্য চারজনকে দায়ী করে তাদের নাম উল্লেখ করেছেন । তাঁরা হলেন , স্বামী সুমিত কুমার , শ্বাশুড়ী উমা দেবী , দেবর অমিত কুমার ও জা ডা . অমৃতা কুমারী । এক্ষেত্রে তার দুই সন্তান একেবারে নির্দোষ বলেও তুলে ধরেছেন । সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন , আমার বিয়ে হয়েছে ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর । বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুড়ী ও স্বামী – দেবর মানসিক নির্যাতন করছে । দেবরের বিয়ের পর জা অমৃতাও তাদের সাথে যোগ দিয়ে অত্যাচার চালিয়ে আসছে । এরা আমাকে চার বার মেরে ফেলার চেষ্টাও করেছে।  বেঁচে আছি সেটা আমার
ভাগ্য । আমাকে সাজিয়ে মিথ্যে বলে আমার গয়না ও জমানো টাকা নিয়েছে তারা । ফেরত দিবে বলে আজও দেয়নি । বরং টাকা ও গয়নার কথা বললেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায় । গায়েও হাত তুলেছে সবাই মিলে । আমার মা বাবা নেই । ভাই বোনদের জন্য বেঁচে ছিলাম । কে জানতো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ? তাহলেতো ভাই বোনরা ছেড়ে দিতনা । শ্বাশুড়ী উমা দেবী আমাকে কখনো দেখতে পারেনি , ভালও বাসেনি । আমার সংসার ভাঙার পেছনেও তাঁর হাত রয়েছে । তিনি উল্টাপাল্টা বলে তাঁর ছেলে সুমিতের কান ভরতো । এমনকি আমার বাচ্চা দুটোকেও এরা ভয় দেখিয়ে রাখে । একারণে তারা কিছু বলতে পারেনা । বাচ্চাদের রক্ষার জন্যও আকুতি জানিয়েছেন জ্যোতি । জ্যোতি আরও লিখেছেন , মানুষ মৃত্যুর সময় কখনো মিথ্যে বলেনা । বিশ্বাস না হলে কাজের লোক ও পাড়া প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন । আমার শ্বাশুড়ী অনেক অত্যাচার করেছে । ২১ বছর ধরে আমি শুধু কাঁদছি এরা কখনই সুখের দিন দেখতে দেয়নি । আমার মৃত্যুর বিচার চাই । জ্যোতি আগারওয়ালের বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। তাঁর স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি সৈয়দপুর উপজেলা হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র সহ – সভাপতি ।

তিনি সৈয়দপুরের সুনামধন্য দানবীর ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ তুলশীরাম আগারওয়ালার নাতি ও প্রখ্যাত শিল্পপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালার বড় ছেলে । এই ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং সুইসাইড নোটের কথাগুলো ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে । মারোয়াড়ী ব্যবসায়ী মহলসহ শিল্পপতি ও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মাঝেও সমালোচনার ঝড় তুলেছে পারিবারিক নির্যাতন ও আত্মহননের বিষয়টি । তবে সকলে আশা করেছিলেন জ্যোতি সুস্থ হয়ে তার সন্তানদের কাছে ফিরে আসবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন তিনি । শনিবার জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়াল নিক্কি মোবাইলে বলেন , সুইসাইড নোট বলে যে উড়ো চিঠির কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয় । কারন এটি আমার স্ত্রীর লেখা নয় । তার হাতের লেখার সাথে কোন মিল নেই । কিভাবে প্রমান করবেন যে চিঠিটা জ্যোতি লিখেছে । এদিকে জ্যোতির মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছে । গতকালকেও স্বামী সুমিত কুমার ও জা ডা . অমৃতা কুমারীর মোবাইল চালু ছিল । এখন সবার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে । তাদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি । পুলিশও বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , চেম্বারে খোঁজ কোন সন্ধান পাননি। একটি সূত্রমতে অমৃতার বাবার বাসায় তারা লুকিয়ে আছে নয়তো ভারতে চলে গেছে

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর