January 21, 2025, 7:35 am

সংবাদ শিরোনাম

সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দালালরা

সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দালালরা

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

রাজধানীসহ দেশের সকল জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে দালালদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয়। তাদের কাজ সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া। আর রোগী ভাগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত বখরায় স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন নিরব থাকছে। অথচ সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নেয়া রোগীদের উন্নত চিকিৎসার অজুহাতে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হলেও রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে সরকারি হাসপাতালেই। রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও দালালরা বিপুল টাকার মালিক হয়েছে। কারণ রোগী ভাগিয়ে নিয়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে নানা কলা কৌশলে টাকা আদায় করছে ওসব প্রতিষ্ঠান। নামমাত্র সেবা প্রদান করে হাতিয়ে নেওয়া হয় বড় অঙ্কের টাকা। অযথা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এবং ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী রিলিজের দিন পর্যন্ত একাধিক বিষয়ের উপর বিল তৈরি করা হয়। কেউ কেউ যদি টাকা পরিশোধ করতে না পারেন তবে রোগী আটকে রেখে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে গজিয়ে উঠেছে বিপুলসংখ্যক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ওসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত দালালরাই মূলত সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে। যদিও সরকারি হাসপাতালে এক্সরে, সিটিস্ক্যান, এমআরআই, আলট্রসনোগ্রাম, ইসিজিসহ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধাই রয়েছে। কিন্তু কমিশনের লোভে এক শ্রেণির সরকারি ডাক্তাররা রোগীদের সরকারি হাসপাতালের আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকে পাঠাচ্ছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী, কিডনি, পঙ্গু, হৃদরোগ, চক্ষু, নিউরোসায়েন্স ও শিশু হাসপাতালকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুরের বাবর রোড ও তার আশপাশের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সড়কের দু’পাশে শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। আধাকিলোমিটার রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬০টি হাসপাতাল। শত শত রোগী আর দালালে গিজগিজ করছে ওই এলাকা। ওসব সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরাই ওই এলাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর টার্গেট। সেজন্য বিপুলসংখ্যক দালাল নিয়োগ করা হয়েছে। তারা রোগী ধরার ফাঁদ পেতে বসে থাকে।  তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিজস্ব মার্কেটিং প্রতিনিধি আছে। যারা বেতন হিসেবে আবার কমিশন হিসেবে কাজ করে। মূলত তারাই রোগী সংগ্রহের কাজ করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওসব প্রতিনিধিরা সকাল থেকেই সরকারি হাসপাতালে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করে। রোগী ভাগানো নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। রোগী ও তাদের স্বজনদের সরকারি হাসপাতার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে লোভনীয় অফারে উন্নত চিকিৎসার ফাঁদে ফেলা হয়। অনেক সময় রোগী নিয়ে চলে টানা হেঁচড়াও। আর হাসপাতাল থেকে একবার ক্লিনিকে নিয়ে যেতে পারলেই শুরু হয় টাকা আদায়ের নানা কলা-কৌশল। চিকিৎসার বালাই নাই। উল্টো আদায় করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে বড় অঙ্কের টাকা। ওসব অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালালেও তাদের অসাধু কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় প্রভাবশালীর ওসব সিন্ডিকেটের অবৈধ চিকিৎসা বাণিজ্য চলছেই। ওসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশের কোনো অনুমোদন নেই। আর সেগুলোর তদারকি করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) এর অধীনে একটি ভিজিলেন্স টিমের। ওই টিমের সঙ্গে ওই সমস্ত দালাল নির্ভও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারাও পাচ্ছে নিয়মিত বখরা। এসব কারণে ওই ভিজিলেন্স টিমের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ।

সূত্র জানায়, দেশে কর্মরত অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অবস্থা ভয়াবহ। ওসব প্রতিষ্ঠানের সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চড়া ফি দিয়েও ওসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাওয়া যায় না। তাছাড়া ওসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছে অনেক অনিয়ম। নেই নিজস্ব চিকিৎসক। আবার চিকিৎসক না হয়েও ভুয়া সনদ তৈরি করে এসব হাসপাতালে-ক্লিনিকে অনেকে চিকিৎসা দিচ্ছে। ফলে দালালদের মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার আশায় ওসব প্রতিষ্ঠানে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি না কমে বরং বাড়ে। আর সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মুখ খোলারও সাহস নেই। কারণ রোগী ভাগানোর দালালরা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় কাজ করে।

সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এমন বেহাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কয়েক দফা একটি নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর আলোর মুখ দেখিনি। সরকারি হাসপাতালের আশপাশের একটা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক থাকতে পারবে না এমন বিধান জারি জরুরি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর