যোগাযোগের সকল মাধ্যমে ব্যাপক উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি সড়ক ও জনপদে ঢাকাবাসির দুঃখ যানজট যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার
রওশন আরা বেবি
এক গবেষণামূলক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা শহরে যানজটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। শুধু তাই নয় এই কারণে প্রতিদিন কর্মব্যস্ত মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পথেই।
নষ্ট হচ্ছে মেধা বিকাশের মননশীলতা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কাজের প্রতি, যে কেউ অফিসিয়াল কিংবা কোন ব্যক্তিগত কাজে দূরের কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা করলে প্রথমেই সেই যানজটের কথা ভেবে আত্কে ওঠে। মাথায় টেনশন আসে। সি.এন.জি রিক্সা কিংবা পাবলিক বাসে চড়ে তাকে গন্তব্যস্থলে যেতে হবে।
যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাহন রয়েছে তাদের ও কমবেশী টেনশন হয়ে থাকে কিন্তু যাদের ব্যক্তিগত যানবাহন নেই তাদেরকে বাধ্য হয়েই চড়তে হয় সিএনজি, রিকশার কিংবা পাবলিক বাসে। ঢাকা শহরে সি.এন.জি ও রিকশাতে চড়া বেশ কঠিন কাজ। সি.এন.জি চালকরা পছন্দ সই জায়গায় চড়া মূল্যের ভাড়া না পাওয়ার আশ্বাস পেলে শত অনুনয় বিনয় করলে কোন লাভ হয় না। এবার আসা যাক রিক্সার কথা, দূরে কোথাও রিকশা নিয়ে পাওয়ার কথা তো চিন্তাই করা যায় না।
ধারের কাছে কোথাও গেলে বিশ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দাবি করে বসে। তাদের কেউ কেউ রাজি না হলে ডাবল ভাড়া দেওয়ার কথা বললে ও কোন লাভ হয় না। আর ভিআইপি রোডে রিকশা চলাচল তো নিষেধই।
এবার আশা যাক পাবলিক বাসের কথায় । আর পাবলিক বাস মানেই হচ্ছে গরুর খামার, ঠাসাঠাসি ঠেলাঠেলী, ধাক্কাধাক্কির প্রতিযোগীতা। দুসহ্য গরমে কিংবা কনকনে শীতে দুমরে মোচড়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও বাসে উঠতে হয় বাধ্যবাধকতার কারণেই।
কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে অনেকেই। অফিসের এসাইনম্যান্টের উদ্দেশ্য বা ব্যক্তিগত কোন কাজে কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে রাস্তায় যানজটের কারণে বিশ মিনিটের জায়গায় এক ঘন্টার উপরে সময় লেঘে যায়। তাতে করে সময়ের কাজ সময়ে সম্পূর্ণ হয় না।
আবার প্রত্যেক গাড়ির ড্রাইভারের উদ্দেশ্য তার টার্গেট মোতাবেক অর্থ উপার্জন করা। যেখানে গাড়ির ভাড়া দশ টাকা, সেখানে সিটিং বলে ভাড়া নিচ্ছে ডবল। সিটিং বাস ভেবে যখন যাত্রীরা বাসে উঠে ঠিক তখনই যাত্রীরা দেখে অল্প সময়ের মধ্যে বাস আসলে সিটিং না লোকাল বাসে পরিনত হয়ে গেছে। অথচ ভাড়া নেওয়ার সময় কড়ায় গন্ডায় সিটিং ভাড়া নিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে বাসের ড্রাইভার ও বাসের হেলপার যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের জন্য দুব্যবহারও করে শুধু তই নয়, অনভিজ্ঞ গাড়ি চালক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটায়। বেশি ভাড়া দাবি করাতে অনেক সরল যাত্রী তাদের চাওয়া ভাড়া দিয়ে দেয়, অন্যদিকে অনেকে ন্যায্য ভাড়া দেওয়ার প্রতিবাদ করলে শুরু হয় গাড়ির হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে সমস্যা। সমস্যার কথা বলে আর শেষ করা যাবে না।
বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হলেও রাজধানী ঢাকা শহরে যানজট যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়েই দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণ, যথাস্থানে যথাযথ ফ্লাইওভার নির্মাণ না করা, ফ্লাইওভারে যানবাহন চলাচলে অনাগ্রহ, টোল প্রদানে অনিহার কারণে টোল বিহীন রোড ব্যবহার করা ইত্যাদি।
এছাড়া ও রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। রাজধানী ঢাকার প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ভ্যান, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে কিংবা স্লো করিয়ে বিভিন্ন কারণে কাগজপত্র দেখানোর অজুহাতে ঘুষ, চাঁদা, মামলা ঠুকে দিতে দেখা যায়। কখনো কখনো পন্যবাহী কাভার্ড ভ্যান, পন্যবাহী ট্রাক, মোড়ে মোড়ে কিংবা যত্রতত্র থামিয়ে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ট্রাফিক পুলিশকে চাঁদা গ্রহণ করার দৃশ্যও চোঁখে পড়ে।
ইদানিং রাজদানীর ভি,আই,পি এলাকায় বিশেষ করে গুলশান বনানীতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সি.সি ক্যামেরায় ভিডিও ফুটেজে ধারন করে গাড়ির নাম্বার প্লেট থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে মিডিয়া কেস নামে গাড়ির মালিকের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মালিককে নয়শত পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিয়ে এই মিডিয়া কেস উঠাতে হয়। এতে অনেক বৈধ কাগজপত্রধারী গাড়ির মালিককে অহেতুক হয়রানীর শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এই হলো রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশের রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজির ধরণ। শুধু তাই নয়, জনসচেতনতার অভাব ও যথাযথ ট্রাফিক আইন না মানা এবং ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পথচারীদের রাস্তা পারাপার হওয়া ও রাজধানীর এই যানজটের অন্যতম কারণ বলে বিশেজ্ঞরা মনে করেন। প্রশ্ন হলো ঢাকা শহরে ঢাকা বাসীর দুঃখ এই যানজট নিরসনের শেষ কোথায়?