অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার, প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর এ দেশের জনগণ দীর্ঘদিন থেকেই নাখোশ। অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসকদের খামখেয়ালিপনারও। এ ছাড়াও চিকিৎসাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনাগত ত্রম্নটিও রয়েছে। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগীই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অথবা অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রে চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। রোগীদের এই প্রবণতার মধ্যে চিকিৎসকদের ওপর আস্থাহীনতাও একটি বড় কারণ। এমনও দেখা গেছে, দেশে চিকিৎসারত একজন রোগী একইসঙ্গে ১০ রকমের ওষুধ সেবন করে লাখ লাখ টাকা খরচ করেও রোগ ভালো করতে পারছে না। অথচ ভারতে গিয়ে এক বা দুই প্রকার ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ রোগ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকদের অজ্ঞতা ও অপারগতা। এর পেছনে অনভিজ্ঞতা ও অদক্ষতাও কাজ করে। ফলে দেখা দেয় নানা বিপত্তি। অনেক সময় ভুল চিকিৎসার কারণেও রোগীর অকাল মৃত্যু ঘটে। কোনো রোগী ডাক্তারের কাছে চিকিৎসাসেবা নিতে গেলে ওই ডাক্তার না বুঝেই রোগীকে এক গাদা ওষুধ দেবেন। যার মধ্যে থাকবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক। কোনো রকম বাছবিচার না করে রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে- যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক, একই সঙ্গে দুঃসংবাদও। কারণ এর অপব্যবহারের ফলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৫০ সালের মধ্যে ওষুধের অপব্যবহার কেড়ে নেবে কোটি প্রাণ। বাংলাদেশের জন্য প্রতি বছর কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন এবং ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসূহ কী পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করে থাকে, তার একটি পরিসংখ্যান নির্ণয় করা এখন সময়ের দাবি। দেশের প্রায় সব হাসপাতালে শতকরা ৯০ ভাগ রোগী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৫০ ভাগ রোগী ডাক্তারের পরামর্শে অযৌক্তিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের ওপরের অংশের সংক্রমণ, অস্ত্রোপচারের আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা ও সহিংস ঘটনায় আক্রান্ত্মদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যত্রতত্র এর ব্যবহার রোধে ও বিক্রির ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অবশেষে টনক নড়ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। বিশ্ব স্বাস্থ্যও গ্রহণ করেছে সচেতনতামূলক কর্মসূচি।
আমরা মনে করি, এ ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার রোধ করা সম্ভব না হলে একদিকে যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসবে অন্যদিকে, যেকোনো ধরনের সংক্রামক ব্যাধি উপশমের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজেই আসবে না। অর্থাৎ ধীরে ধীরে সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়বে। এ ছাড়া অর্থহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি রোগীর চিকিৎসা মেয়াদ বেড়ে যায়। অনেক সময় চিকিৎসকরা হীন উদ্দেশ্যে বা না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। যার ফলে রোগীর ভোগান্ত্মিসহ অর্থেরও অপচয় হয়।
মনে রাখতে হবে চিকিৎসা একটি সেবামূলক গুরম্নত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পেশা। এখানে সব চেয়ে বড় প্রয়োজন প্রত্যেক চিকিৎসকের সচেতন হওয়া এবং সাবধানতা অবলম্বন করা। এর কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটলে রোগীর বিপদ অবধারিত। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদেরও সচেতন হতে হবে।
তবে এমন একটি জনগুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি নীতিমালা থাকা জরম্নরি। আমাদের প্রত্যাশা সরকার ও সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি করে দ্রম্নত তা কার্যকর করবে। আর এটা করা সম্ভব না হলে রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়তেই থাকবে।