আব্দুস সামাদ আজাদ-মৌলভীবাজারঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা আমাদের প্রতিবেশি। প্রতিবেশির প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকেও আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনারা রান্নাঘরে কি পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করিনা, আমাদের রান্নাঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না। আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়ী ও সম্প্রীতির কথা বলেন, আপনারা নিজের চেহারা এর আগে একটু আয়নাতে দেখুন। আপনারা সেখানে যাদের মাইনোরেটি বলেন, তাদের সাথে আপনারা কি আচরন করেন? আমাদেরকে সাম্প্রদায়ি সম্প্রীতির ছবক দিতে হবেনা। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এর প্রমান দিয়েছেন এদেশের রাজনৈতিক দল ও আলীম উলামারা।
তিনি ওবায়দুল কাদেরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন ৫ আগষ্টের পরে কি দুই দিনে বাংলাদেশে পাঁচ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল? কারণ যাদেরকে তারা দোষ দিত তারা এ দেশকে ভাল পেত। তাদের কোন দিদির বাড়ি নেই, তাদের কোন স্বামীর বাড়ি নেই। এই দেশে মহান আল্লাহ্ আমাদের পয়দা করেছেন, গর্বের সহিত এদেশকে নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই। তারা দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও কান্ডজ্ঞান হীন হলেও জাতি দায়িত্ব জ্ঞান সম্পন্ন। যার প্রমান দেশের মানুষকে আমরা ভালবাসি।
গেল তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাদের বয়স আজ ৩০ থেকে ৩২ বছর হয়েছে তারা ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোটের অধিকার স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ গণহত্যা করেছিল। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর আগে ব্যাংক, বীমা সহ আর্থিক খাতগুলো লুটেফুটে গিলে খেয়ে বিদেশে পাচার করেছে।
শনিবার ২১ ডিসেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন দলটির আমীর। প্রায় ৫৩ বছর পর উম্মুক্ত স্থানে এই প্রথম জামায়েত কর্মী সম্মেলন করে জামায়াত।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে আরও বলেন, আমরা তাড়াতে পারিনি, ওদেরকে বিদায় করতে পারিনি, আমি গর্বিত আমাদের সন্তানরা সেই কাজটি করতে পেরেছে। ওই সন্তানদের আমি ভালবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দেব।
তিনি আরও বলেন, পালায় যারা সন্ত্রাসী ও অপরাধী, যে দেশকে ও জনগণকে ভালবাসে সে কখনও দেশ ছেড়ে পালায় না। চোর-ডাকাতের লিডার শেখ হাসিনার মুখ ভরা বুলি দিয়েছিলেন আমি পালাব না। অবশেষে ছাত্রজনতা আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
বহু কায়দা করে মঈন উদ্দিন, ফখরুদ্দিনের হাত ধরে পেছনের দরজায় বুঝাফেরা করে, নির্বাচনী ইঞ্জিনিয়ারিং করে ২০০৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছিল, সে নির্বাচনে তারা জয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ক্ষমতায় বসেই সেই খুনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে তারা হাতে নেয়।
সর্বপ্রথম তারা খুন করে পিলখানায় ৫৭ জন চৌকৌশ অফিসারকে। ওই খুনের মাধ্যমে চক্রান্ত করে বিডিআরকে ধ্বংস করে দিল। কারা হত্যা করেছিল? বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে রাতে অন্ধকার করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করেছিল স্বৈরাচারী সরকার। ওই হত্যাকান্ডের আমরা বিচার চাই।
তিনি বলেন, জামায়াতের নেতাদের তড়িগড়ি করে সাজানো সাক্ষী দিয়ে ঠান্ডা মাথায় রায় দিয়ে জামায়েত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। কেউ কেউ জেলের ভেতরে মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী লীগ সাড়ে পনের বছর খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এর জানান দেয় ক্ষমতায় আসার ২ বছর আগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্যে লগি বৈঠার তান্ডব চালিয়ে হত্যা করে লাশের উপর দাড়িয়ে নর্তন কর্দন করেছিল। তখনি তারা জাতীকে জানিয়ে দিয়েছিল আমরা ক্ষমতায় আসলে খুনের রাজনীতি করবো।
জেলা জামায়াতের আমীর প্রকৌশলী মোঃ শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মোঃ ইয়ামীর আলীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর ও কেন্দ্রিয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মো: ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিুবুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন, খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, হবিগঞ্জ জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মো: আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলার সাবেক আমীর মো: কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখার আমীর ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমীর মো: ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার আমীর মো: এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমীর অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমীর আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমীর মাও. ইসমাঈল হোসেন, কমলগঞ্জ উপজেলা আমীর মো: মাসুক মিয়া।
জেলার ৭টি উপজেলা থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। কর্মী সমাবেশটি এক পর্যায়ে জনসভায় রুপ নেয়।