January 19, 2025, 11:31 pm

সংবাদ শিরোনাম
শিবচরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্ম বার্ষিকী পালিত পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নন্দীগ্রামে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মশালা অনুষ্ঠিত ধনবাড়িতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আহতদের জন্য দোয়া ও জনসভা অনুষ্ঠিত টেকনাফে পাহাড়ের খাদ থেকে হাতির মরদেহ উদ্ধার শেরপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে কর্তৃক চক্ষু শিবির ও ১২ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর তার স্ত্রী জানে না সে সধবা নাকি বিধবা-ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ধনবাড়িতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আহতদের জন্য দোয়া ও জনসভা অনুষ্ঠিত  কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অনিয়ম ও মহাজাতকের ভয়াবহ প্রতারণা । পর্ব ০১ মহা দূনীর্তিবাজ ও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন,অতিরিক্ত সচিব, মোঃ তোফাজ্জেল হোসেনের সাতকাহন

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণের কথা অস্বীকার সেনা তদন্ত প্রতিবেদনে

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণের কথা অস্বীকার সেনা তদন্ত প্রতিবেদনে

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক             

 

রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক নৃশসংশতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এক প্রতিবেদনে বলেছে, তাদের সৈন্যরা সেসব কিছুই করেনি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া কিংবা লুটপাটের কোনো ঘটনায় সেনা সদস্যরা জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সেনাবাহিনী কীভাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে, ধর্ষণ, লুটপাট করছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কথায়। ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে। আর বিবিসি লিখেছে, তাদের প্রতিবেদক রাখাইন সফরে নিজে চোখে যা দেখেছেন, তার সঙ্গে বর্মি সেনাদের তদন্ত প্রতিবেদন সাংঘর্ষিক। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেনাবাহিনীর ওই প্রতিবেদনকে বর্ণনা করেছে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে। মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনের ওই অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। সেখানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এবারের সঙ্কট শুরুর পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর একদল বিদেশি সংবাদিককে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখাইনে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল দেশটির সরকার। সাংবদিকদের ওই দলে ছিলেন বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিবেদক জোনাথন হেড। নিয়ন্ত্রিত ওই সফরেও বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়তে দেখার কথা পরে এক প্রতিবেদনে জানান বিবিসির ওই সংবাদিক। তিনি সেখানে লিখেছেন, মিয়ানমারের পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় বৌদ্ধদের তিনি রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিতে দেখেছেন। সর্বস্ব হারিয়ে গায়ে গুলির ক্ষত নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানো রাহিঙ্গারাও গ্রামে গ্রামে হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাখাইনের বৌদ্ধদের দেখার কথা বলেছেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ফেইসবুকে তারা যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, কয়েক হাজার গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সেনাবাহিনী কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেনি। কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি, যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনাও সেনাবাহিনী ঘটায়নি। গ্রামবাসীদের গ্রেফতার করে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে সোনা-রুপার গয়না, গবাদি পশু বা যানবাহন নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। সেনাবাহিনী কোনো মসজিদে আগুন দেয়নি। কাউকে গ্রাম ছাড়তে বলা হয়নি, সেনা সদস্যরা কাউকে হুমকিও দেয়নি। বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার সঙ্গেও সেনাবাহিনী জড়িত নয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং তাদের হুমকিতেই হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে যে হামলার পর সেনাবাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়, তার পেছনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি দলকে দায়ী করে আসছে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। তাদের চোখে এই মুসলিম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অবৈধ অভিবাসী। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এটাই প্রমাণ করেছে যে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো ইচ্ছে তাদের নেই। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাতে বিচার এড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই দায়িত্ব নিতে হবে। এদিকে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে ফিলিপিন্সভিত্তিক ম্যানিলা বুলেটিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের ৩১তম সম্মেলনে যোগ দিতে ম্যানিলায় আছেন সু চি। গত সোমবার সম্মেলনের একটি প্লেনারি সেশনে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দেন বলে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র হ্যারি রক জানিয়েছেন। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার বলেছে, তারা কফি আনান রিপোর্ট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে, তারা ত্রাণ সহায়তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা ওই অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট আলোচনায় তোলে বলে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন ফিলিপিন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, জ¦ালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে গত ২৫ অগাস্ট থেকে আড়াই মাসে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে গত কয়েক দশক ধরে। তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও তাতে গা করেনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। অগাস্টে রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের তরফ থেকে বলা হয়, ১৯৯২ সালের প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় ‘যাচাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নিতে তারা প্রস্তুত। এর ধারাবাহিকতায় সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। এরপর গত মাসের শেষ দিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমারে যান। সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ১০ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৯২ সালের চুক্তি এখন আর ‘বাস্তবসম্মত নয় জানিয়ে ওই বৈঠকে নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মিয়ানমারের জবাব এখনও পায়নি বাংলাদেশ। এদিকে রাখাইন রাজ্যে অভিযানের দায়িত্বে থাকা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল মাউং সোয়েকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর