বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গা, ২৭০ টন চাল-আটা ত্রাণ পাওয়া গেছে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন; তাদের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা হিসেবে ২৭০ মেট্রিক টন চাল ও আটা পাওয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত ২৫ অগাস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা ৪ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বর্তমানে ১৪টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৫৭৫ জনের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিশ্রুত সহায়তা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ টন আটা সরকারের হাতে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সরকার সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবে জানিয়ে মায়া বলেন, ইউএনএইচসিআর খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়সহ সার্বিক সব ধরনের সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ডব্লিউএফপি আগামি চার মাস চার লাখ মানুষের খাবার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ডব্লিউএফপি ইতোমধ্যে উখিয়ার ১৪টি স্থানে ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু করেছে; সেখানে তাদের ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আর বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ১৪ হাজার ইউনিট (প্রতি ইউনিটে ১০০০ লিটার) খাবার পানি সরবারহ করছে। এ ছাড়া ১০০টি টিউবওয়েল স্থাপন ও ৫০০টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এলজিইডির সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে মায়া বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় পুলিশ ও বিজিবি সহায়তা দিচ্ছে জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আট ঘণ্টায় ৬৪ হাজার লিটার খাবার পানি সরবারহ করতে পারে- এমন চারটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কাজ শুরু করেছে। মায়া বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চার লাখের বেশি মানুষকে খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা দিতে একটি অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কুতুপালং এলাকায় প্রায় দুই হাজার একর জমিতে ১৪টি শেড নির্মাণের কাজ চলছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে ১৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বিক্ষিপ্তভবে কেউ যাতে ত্রাণ বিতরণ না করে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছি। এত বিপুল সংখ্যক বিদেশি নাগরিকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের জন্য কষ্টকর হলেও এ মানবিক সংকটের সময়ে সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে নতুন ক্যাম্পে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব সব ধরনরে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের সমর্থন দিয়েছে বলে জানান ত্রাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করায় এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করায় তাদের প্রকৃত সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। এ ছাড়া এর আগে আসা ৩৩ হাজার ৫৪২ জন নিবন্ধিত শরণার্থী উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে বসবাস করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।