September 19, 2024, 10:09 am

রাজস্ব ফাঁকি ও নিরাপত্তা রোধে বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো নিয়ে গড়িমসি

রাজস্ব ফাঁকি ও নিরাপত্তা রোধে বন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসানো নিয়ে গড়িমসি

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানিতে কনটেইনার স্ক্যানিংয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ২০০৯ সালেই স্ক্যানিং মেশিনের বাধ্যবাধকতা চালু করা হয়। কিন্তু শুরু থেকে বন্দরের ১২টি গেটের বিপরীতে মাত্র ৪টি স্ক্যানার বসানো হয়েছে। তারপর একাধিকবার স্ক্যানার মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে আলাদা একটি স্ক্যানিং বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৯ সালের শেষদিকে ৫৬ কোটি টাকায় বন্দরে ৪টি স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়। মূলত রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধের পাশাপাশি কনটেইনারে কোনো বিস্ফোরক, অস্ত্র বা নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টিকারী কোনো পণ্য আছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্যেই এসব স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ওসব স্ক্যানিং মেশিন বর্তমানে পরিচালনা করছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ‘এসজিএস’। বর্তমানে স্ক্যানার সংকটে আমদানি-রফতানি পণ্য ছাড়করণে দীর্ঘসময় লাগছে। বিদ্যমান এ সংকট নিরসনে ইতিমধ্যে একাধিকবার ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত দাবিও জানানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর স্থানান্তরযোগ্য একটি স্ক্যানারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমদানিকারকদের ভোগান্তি আরো বাড়ছে। যদিও চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় অঘোষিত ও বিস্ফোরকজাতীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি নিরাপত্তাঝুঁকি কমাতে ২০০৯ সাল থেকেই স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু বাধ্যতামূলক হলেও শুরু থেকেই স্ক্যানার সংকটের অজুহাতে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার স্ক্যানিংয়ের আওতায় আনা হয়নি।

সূত্র জানায়, বিগত ২০১৬ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো এক কাঠামো প্রস্তাব অনুযায়ী চট্টগ্রাম কাস্টমস ১৮৩ জন নতুন লোকবল নিয়োগ ও বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানোর পাশাপাশি আলাদা একটি বিভাগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল। একই প্রস্তাব অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগেও পাঠানো হয়েছে। তাতে ১৮৩ জন লোকবল নিয়োগ, ১২টি গেটের জন্য ১২টি স্ক্যানার মেশিন, ১০টি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকরণ যন্ত্র, ৭টি মাইক্রোবাস, ৩৭টি কম্পিউটারসহ সিসিটিভি, টেলিফোন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের উল্লেখ ছিল।

সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্যানার সঙ্কটে ১২টি গেটের মধ্যে মাত্র ৪টিতে স্ক্যানার মেশিন থাকায় পণ্য খালাসের সময় পণ্যভর্তি যানবাহনের দীর্ঘ জট তৈরি হয়। সম্প্রতি মোবাইল স্ক্যানারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ সংকট আরো বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব নতুন স্ক্যানার কেনার পাশাপাশি কার্যক্রম আরো দ্রুত সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে বন্দর ও দেশের নিরাপত্তা বাড়ার পাশাপাশি অবৈধ বা বিস্ফোরক পদার্থের প্রবেশ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) লুৎফর রহমান জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে স্ক্যানিং বিভাগ চালুর একটি উদ্যোগ ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন ধাপ শেষে বিষয়টি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে প্রাথমিকভাবে স্ক্যানিং বিভাগের কাজ শুরু করা যাবে। যদিও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে আরো বেশি সময় লাগতে পারে। বর্তমানে বন্দরের জেটিতে স্ক্যানার মেশিনের সংকট রয়েছে। নতুন স্ক্যানিং বিভাগ হলে এ সংকট নিরসনের পাশাপাশি আধুনিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে আপাতত চলমান সংকট নিরসনে শিগগিরই টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আশা করা যায় আগামী জানুয়ারির মধ্যেই নতুন স্ক্যানার মেশিন বন্দরের সব জেটিতে বসানো সম্ভব হবে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর