September 14, 2024, 4:43 am

সংবাদ শিরোনাম
যৌথবাহিনীর অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৫, মৃত্যু-২ বোরহানউদ্দিন কুঞ্জেরহাট বাজারে, অনুমতি বিহীন ওষুধের গুদাম সিলগালা সাধক কবি কাজী হেয়াত মামুদ এর কবর জিয়ারত করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল শহীদদের স্মরণে ‘মিশন গ্রিন বাংলাদেশ’-এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী চিলমারীতে দূর্নীতির অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি পল্লী বিদ্যুৎ এর লুকোচুরি খেলায়, সাধারণ মানুষ নাজেহাল হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জেল পলাতক আসামী মোঃ রুবেল’কে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব নাটোরে সাবেক কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার পার্বতীপুরে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় অতিষ্ঠ জনজীবন আর্থিক সাহায্যের আবেদন বিরল রােগ থাইমাস গ্লান্ডে আক্রান্ত রিয়াদ বাঁচতে চায়

শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতকে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতকে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারত ও প্রতিবেশী অন্যান্য দেশকে সহযোগিতা করতে চায় বাংলাদেশ। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা-কলকাতা রুটে বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল, দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতুর ওপর ট্রেন চলাচল এবং ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেনের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধার উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের দিল্লিতে নিজ কার্যালয় থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একে একে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন দুদেশের মধ্যে ট্রেনের তিনটি নতুন সেবার। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কলকাতা থেকে যুক্ত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রথমে ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেনের যাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধা, এরপর দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতুর ওপর ট্রেন চলাচল এবং শেষে খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৫ সালের আগে দুই দেশের মধ্যে যেসব রেল যোগাযোগ ছিল, তার সবই চালু করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার। দক্ষিণ এশিয়া একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ভারত এবং অন্যান্য নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের দুদেশের কল্যাণের জন্য আগামীতে এ ধরনের আরো অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সব সময় আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকব, বলেন প্রধানমন্ত্রী। বন্ধন শুধু রেলের বন্ধন না, আমাদের এই বন্ধন যেন আমাদের দুই দেশের জনগণের মাঝে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমাদের কাম্য, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ইমিগ্রেশন সুবিধা ও বন্ধন ট্রেন চালুর মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে। এতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনার ওপর জোর দেন। মোদী বলেন, আমাদের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের এই বন্ধন প্রটোকলের মধ্যে রাখতে চাই না। বক্তব্যে শুরুতে দুই দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী বাংলায় বলেন, দুই দেশবাসীকে আমার অভিনন্দন জানাই। আজ আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরো সুদৃঢ় হল। নতুন ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস ও মৈত্রী এক্সপ্রেসের বহির্গমন ও কাস্টমস কার্যক্রমের পাশাপাশি ভারতের ঋণ সহায়তায় নির্মিত দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর উদ্বোধন হয়। মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে বা আসার পথে এতদিন যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হত। এখন ঢাকা থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। গন্তব্য শেষে কলকাতায় হবে ভারতীয় অংশের ইমিগ্রেশন। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ভৈরব ও তিতাসের পুরনো সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে। ভারতীয় ঋণে সেখানে নতুন দুটি সেতু হওয়ায় ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই ট্রেন চলাচল করতে পারবে, যাতে যাতায়াতের সময়ও কমে আসবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান। শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদী এই চার প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও হাওড়ায় তার কার্যালয় নবান্ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। রেল সেতু উদ্বোধনের সময় ভৈরব থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। লাইন অব ক্রেডিট তহবিলের মাধ্যমে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য ভারতের সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলওয়ে খাতে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সহযোগিতা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি; বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্ন্ত যে সমস্ত লাইনগুলো চালু ছিল, যা ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল- সেগুলো পুনরায় চালু করার। কলকাতা-খুলনা রুটের নতুন ট্রেন বন্ধন এক্সপ্রেস উদ্বোধনীর দিনে কলকাতার চিতপুর স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ভিডিও কনফারেন্সে দুই দেশের দুই সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সবুজ পতাকা উড়িয়ে এই যাত্রার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনীতে বাংলাদেশ ও ভারত এখন শুধু রেল, সড়ক, নদী বা আকাশ পথে সংযুক্ত নয় মন্তব্য করে গত মে মাসে সাউথ-এশিয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সহযোগিতার ক্ষেত্র মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ, উপকূলীয় নৌপথ, বিদ্যুৎ গ্রিড ইত্যাদির মাধ্যমেও সংযুক্ত। আমাদের সংযুক্ত হওয়ার এসব নতুন নতুন পথ সার্বিক সংযোগের কাঠামোতে বিচিত্র মাত্রা যোগ করেছে। এখানে আমি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, সম্প্রতি আমাদের এই যোগাযোগ মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতেই ভারতের জনগণকে দিওয়ালি এবং বিজয়ার ‘বিলম্বিত’ শুভেচ্ছা জানান। ভিডিও কনফারেন্সে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চার প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করতে পারায় নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-কলকাতা এবং খুলনা-কলকাতার মধ্যে আরামদায়ক ভ্রমণে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে যাত্রীরা সুবিধা পাবে। আজকে যে একটা নতুন দ্বাড় উন্মোচিত হল; তাতে আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘চমৎকার’ সম্পর্ক একান্ত ভাবে অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের শুভকামনার কথা প্রকাশ করে মোদী বলেন, আমরা চাই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ যেন আরো মজবুত হয়। এই যোগাযোগের মূল লক্ষ্যই হল, দুইদেশের জনগণের মধ্যে যোগোযোগ। মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা ও কলকাতা রেল স্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের সুবিধার কথা তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে অনেক সুবিধা হল। এতে যাত্রার সময় প্রায় তিন ঘণ্টা কমে গেল। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৬৫ সালের পূর্ব পর্ন্ত যে সমস্ত লাইনগুলো চালু ছিল, সেগুলো পুনরায় চালু করা নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ১৯৬৫ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে আমরা এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে ‘বিশ্বস্ত সহযোগী’ হতে পারা ভারতের জন্য আনন্দের বলেও মন্তব্য করেন মোদী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ যত বৃদ্ধি পাবে, দুদেশের তত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি হবে। আমাদের দু’দেশের মৈত্রী ও বন্ধন আরো গতি পাবে। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘পূজনীয়’ হিসাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধন আরো সৃদৃঢ় হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন। মমতা বলেন, দুই দেশের ঐক্য, দুই দেশের মৈত্রী, দুই দেশের সম্প্রিতি, দুই দেশের সংহতি, দুই দেশের ভাষার বন্ধন আরো সৃদৃঢ় হোক। আমাদের ওয়ান অফ দি বেস্ট ফ্রেন্ড ইন দি ওয়ার্ল্ড বলেও আমি মনে করি। আর দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের রিলেশন খুবই ভালো..এবং আমি এখনো মনে করি, আমাদের রিলেশন আরো ভালো হোক, সুন্দর হোক, সার্থক হোক। ভিডিও কনফারেন্সেই মোদি ও মমতাকে আবারও বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ সফরের নিমন্ত্রণ জানান মমতা।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর