September 17, 2024, 5:13 pm

সংবাদ শিরোনাম

অনিয়মের অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংকের

অনিয়মের অভিযোগে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংকের

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক  

 

দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়মের কারণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও কাজ বন্ধ থাকবে না। সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালের জুলাইয়ে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের জুনে ওই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সংশোধন করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানো হলেও ওই সময়ের মধ্যে কর্মসূচির কাজ শেষ করার সম্ভাবনা নেই। বরং প্রকল্প বাস্তবায়নে নিম্নমানের কাজসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক ৩০ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় । পরবর্তীতে অতিরিক্ত আরো ৪০ কোটি ডলার দেয়ার কথা। তাছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যের ডিএফআইডি, সুইডিশ সিডা, কানাডিয়ান সিডা, জাপানের জাইকা, ইউনিসেফ ও অস-এইডসহ ১০ দেশ ও দাতা সংস্থাও ওই কর্মসূচিতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেজন্য এলজিইডিতে একটি সেলও রয়েছে। তারাই এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের শুরু থেকেই অনিয়মের কারণে তার ব্যয় ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৫ শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে যেসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাঠে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই, অথচ বেতন নিচ্ছেন মাত্রাতিরিক্ত। গত ৫ বছরে ওই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। তাছাড়া কারণে-অকারণে বিদেশ ভ্রমণেরও অভিযোগ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ওসব অসঙ্গতির কারণে বিশ্বব্যাংক অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থ ফেরত চেয়েছে। পাশাপাশি অস্বাভাবিক হারে ব্যয়বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটির কার্যক্রম পুনরায় খতিয়ে দেখছে বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেজন্য ৮ মাস ধরে ওই প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে বিশ্বব্যাংক। ওই সময়ে প্রকল্পের কর্মকর্তারা কোনো ধরনের বেতন-ভাতাও পাননি।

সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত বিদ্যালয়ের অর্ধেকেই ভবন নির্মাণ হয়নি। মেয়াদ ও ব্যয় বাড়লেও প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রত্যাশিত গতি নেই। যেখানে বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই টিউবওয়েল বসানোর পাশাপাশি শৌচাগার নির্মাণও বাকি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন সংস্কার বা নতুন ভবন তৈরির কাজে ধীরগতির কারণে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর ছাদ ও দেয়াল  থেকে সিমেন্ট ও চুন খসে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ছে শ্রেণীকক্ষে। দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই স্কুল ভবনগুলোর এমন অবস্থা। জামালপুর জেলায় এখনো ১৮২টি স্কুল ঝুঁকিপূর্ণ। ওই স্কুলগুলো ভেঙে নতুন ভবন করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তারপর ১৬টি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা হলেও বাকিগুলোর অবস্থা করুণ। একইভাবে কিশোরগঞ্জে ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ঝুঁকিপূর্ণ; নেই কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ওসব স্কুল ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় একটি স্কুল নির্মাণের ৪ বছরের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে ওই বিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হয়েছিল। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলের বাইরে ক্লাস করানো হয়। তাছাড়া মিঠাপুকুরে ৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। মিঠাপুকুরের ওই ৬ বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন না করেই ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। ওই বরাদ্দের টাকা দিয়ে ভবনে হালকা রঙ করার পাশাপাশি কেবল একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরে ৫টি বিল-ভাউচারে দরজা-জানালা মেরামত, ড্রেন নির্মাণ, রঙ করা ও মিস্ত্রি খরচ দেখিয়েছেন দেড় লাখ টাকা।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের বিষয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (শিক্ষা) এ কে আজাদ জানান, প্রওাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির বেশির ভাগ কাজই হচ্ছে সরকারি অর্থায়নে। তাই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করলেও কাজ বন্ধ থাকবে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে এলজিইডি কাজটি করছে। প্রকল্পে এমন কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে যেসব ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিম্নমানের কাজ করায় ওই প্রকল্পের ১৪টি ঠিকাদার প্রওতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর