নরসিংদীর আজিজা হত্যা মামলা
ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে পুলিশ তৎপর ॥ নেয়া হচ্ছে না এজাহারভুক্ত আসামিদের জবানবন্দি
নরসিংদী প্রতিনিধি
শিবপুরের চাঞ্চল্যকর আজিজা হত্যামামলা তদন্ত কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে পুলিশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। যা তাদের সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সন্দিগ্ধ ৩ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলেও এজাহারভুক্ত মূল আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায়ে পুলিশ রহস্যজনক ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছে। আজিজাকে পুড়িয়ে মারার অব্যবহিত পর গ্রেফতারকৃত চাচাতো দাদি তমুজা বেগমকে ২ দিনের রিমান্ডে নিলেও রহস্যজনক কারণে তার নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়নি। তাকে ২ দিন থানায় রেখে বিনা জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে সোপর্দ করে দিয়েছে। অথচ তিনি গ্রেফতারের পরই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিলে, আজিজাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। একইভাবে র্যাব-৯’র জওয়ানরা সাড়া জাগানো প্রক্রিয়া হত্যামামলার মুল আসামী আজিজার চাচী বিউটি আক্তার ও তার মা সানোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করার পরও পুলিশ তাদের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করছে না। বিউটি আক্তার ও সানোয়ারা বেগমকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে বউ আদরে রেখে আদালতে সোপর্দ করে দিয়েছে। মূল আসামিদের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পারায় আজিজা হত্যামামলার বিচার তিরোহিত হয়ে পড়েছে। উপরন্তু সন্দিগ্ধ আসামী সুজন, রেজাউল ও রোমানকে গোপনে গ্রেফতার করে, গোপনে স্বীকারোক্তি আদায় করে তা সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রকাশ করে দেয়ায় মামলার তদন্ত ক্ষেত্রে বাদী পক্ষই এখন আসামি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্দিগ্ধ আসামিদের জবানবন্দীর উপর পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনের পর আসামি পক্ষের লোকেরা পুলিশের বক্তব্যকে হাইলাইট করে দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলন করে মামলার বাদী, পুড়িয়ে মারা আজিজার পিতা আব্দুস সাত্তারকে পাল্টা আসামি বানিয়ে দিয়েছে। আসামি বিউটি আক্তারের পিতা বাচ্চু মিয়া ও তার সহযোগিরা মামলার বাদী আজিজার পিতা আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে। নিহত আজিজার পিতা আব্দুস সাত্তার জানিয়েছে, আসামিদের অপপ্রচারই প্রমাণ করে যে তারা পরিকল্পিতভাবে আমার কন্যা আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এখন তারা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য আমার ও আমার নিরপরাধ কন্যার বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী রচনা করে প্রচার করছে। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ বলেছে, আজিজাকে কেউ পুড়িয়ে মেরেছে নাকি, সে আত্মহত্যা করেছে তা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। অথচ চিকিৎসকগণ বলছেন আগুনে পুড়ে কেউ মারা গেলে পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে তা শতভাগ নির্ধারন করা সম্ভব নয়। কেউ আগুনে আত্মহুতি দিয়ে মারা গেলে কিংবা কেউ কাউকে আগুন লাগিয়ে বা আগুনে ফেলে হত্যা করলে এ ব্যাপারে ময়না তদন্তে এইটুকু চিহ্নিত হবে যে, ভিকটিম আগুনে পুড়ে মারা গেছে কি না। আত্মহত্যা বা হত্যাকান্ড প্রমাণিত হবে অবস্থাভিত্তিক প্রমাণের মাধ্যমে। আজিজার পিতা আব্দুস সাত্তার বলেছেন, আমি যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি তা স্বাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই করেছি। কিন্তু পুলিশ কেন আমার এজাহারকে গুরুত্ব না দিয়ে সন্দিগ্ধ আসামিদের জবানবন্দীকে গুরুত্ব দিচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী জানিয়েছেন, পুলিশ তদন্ত করবে মামলার এজাহারকে মূল ভিত্তি করে। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারকে বাদ দিয়ে, এজাহার বহির্ভূত সন্দিগ্ধ আসামিদেরকে গোপনে গ্রেফতার করে আবার গোপনে নেতিবাচক স্বীকারোক্তি আদায় করে তা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করে প্রকারান্তরে বাদী ও এজাহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার শামিল। আজিজাকে পুড়িয়ে মারার পর এই হত্যাকা-ের ঘটনা টেলিভিশন চ্যানেলসহ পত্রপত্রিকায় একটি জাতীয় সংবাদে পরিনত হয়। স্থানীয় এমপি, রাজনীতিক, ডিসি, এসপি, র্যাব, সিআইডি, ডিবি পুলিশ, এনজিওসহ বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই নিষ্ঠুর হত্যাকা- মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় হতবিহব্বল হয়ে পড়ে। ঘটনার অবব্যহিত পর মামলার মূল আসামি বিউটি আক্তার ও তার মা সানোয়ারা বেগম, চাচাতো ভাই রুবেল আত্মগোপন করেন। র্যাব-৯’র জওয়ানরা দীর্ঘ ৩ দিন খোজাখুঁজি করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিউটি আক্তার ও তার মা সানোয়ারা বেগমকে সিলেটের মীরেরগাও থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের অবব্যহিত পর তারা র্যাবের নিকট হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে বলে জানা যায়। এই খবর সারা দেশে দ্বিতীয়বার জাতীয় খবরে পরিণত হয়। কিন্তু নরসিংদী পুলিশ ঘটনাটিতে যথেষ্ট আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিউটি আক্তার ও তার মা সানোয়ারা বেগম পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায়ই তাদের আইনগত প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের পূর্বেই হঠাৎ গোপনে গ্রেফতারকৃত ৩ সন্দিগ্ধ আসামির নেতিবাচক জবানবন্দি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করার পর তদন্তের মোড় ঘুরে যায়। এছাড়া মামলার আরেকজন মূল আসামি রুবেল এখনো পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারেও পুলিশ তৎপর হচ্ছে না। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদেরকে কোনো তথ্য প্রদান করছে না।