ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
ডিসেম্বরের শেষ ভাগে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার কমিশন সভায় কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, আইনি জটিলত না এলে ডিসেম্বরেই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে। এজন্য তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে। আগামী বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার রোডম্যাপ রয়েছে ইসির। জাতীয় নির্বাচনের আগেই রংপুর সিটি করপোরেশনসহ নির্বাচন উপযোগী ছয় সিটির ভোট শেষ করতে হবে এই সাংবিধানিক সংস্থাকে। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহম্মেদ খান বলেন, ডিসেম্বরে রংপুর সিটির ভোট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এখন পরবর্তী করণীয় ও তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কমিশন সভায়। ডিসেম্বরের শেষার্ধে ভোট করতে গেলে কমিশন নভেম্বরের প্রথমার্ধে সুবিধাজনক সময়ই তফসিলের জন্য বেছে নিতে পারে। তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ থাকায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভোটের পরিকল্পনা রাখা হয়নি। রংপুরের পর বাকি পাঁচ সিটি ভোট নির্ধারিত মেয়াদে করার কর্মপরিকল্পনা কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই নির্বাচন হবে রংপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন। দলীয় প্রতীকেই এ ভোটে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া যাবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় কুমিল্লা সিটির ভোট করেছিল বর্তমান কমিশন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণে সেটাই ছিল এ ইসির অধীনে প্রথম নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সব দলের অংশগ্রহণে ভোট করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সংলাপ শেষ করেছে কমিশন। এ অবস্থায় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ইসির আস্থা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চের মধ্যে রংপুরে নির্বাচন করতে হবে। এ সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। পাঁচ বছর আগে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। সেই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের তৈরি ইভিএম ব্যবহারের ভাবনা থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে ইতোমধ্যে সে উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে ইসি। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তা ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। রংপুরে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে তিন মাস আগে প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হলেও কমিশন এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর; মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সে অনুযায়ী ৮ মার্চের পর নির্বাচন করা যাবে। রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে একসঙ্গে ভোট হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। সিলেট সিটির প্রথম সভা হয় ওই বছর ৯ সেপ্টেম্বর। মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ১৩ মার্চ থেকে ৮সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোট করতে হবে। খুলনা সিটির প্রথম সভা হয় ২৬ সেপ্টেম্বর। ২০১৮ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মেয়াদ পূর্ণ হবে। ৩০ মার্চ থেকে নির্বাচন উপযোগী হবে এ সিটি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ৬ অক্টোবর। মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর। ৯ এপ্রিল থেকে ওই সময়ের মধ্যে সেখানে নির্বাচন করতে হবে। বরিশাল সিটির প্রথম সভা হয় ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর। এ সিটিতে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিলে থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দলীয় প্রতীকে সিটি নির্বাচন চালুর পর নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় ভোট হয়েছে। এ ধারবাহিকতায় বাকি নির্বাচনগুলোও দলভিত্তিক হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ডিসেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে রংপুরে এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সূচি পর্যালোচনা করে বাকি সিটির ভোটের দিন নির্ধারণ করবে কমিশন।