জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নানাভাবেই আমরা প্রত্যক্ষ করছি। উপকূলীয় এলাকার নিচু জমিগুলো নোনা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ভূগর্ভে নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়ার আলামত শুরু হয়ে গেছে। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। সারা দেশের কৃষি ও জীবনযাত্রায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই অভিঘাতগুলো আমরা আটকাতে পারব না কিন্তু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারব। সেখানেই রয়েছে আমাদের ব্যর্থতা ও দূরদর্শিতার অভাব। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েনস ফান্ড (বিসিসিআরএফ) গঠন করা হয়েছিল। সেখানে ১৯ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তাও পাওয়া গিয়েছিল।
পরে বিভিন্ন অভিযোগে দাতারা পাঁচ কোটি ডলার বা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ফিরিয়েও নিয়েছে এবং বিসিসিআরএফের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আবার একটি নতুন তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সুরাহা না হলে নতুন তহবিল গঠন করেও বিদেশি সহায়তা খুব একটা পাওয়া যাবে না।
দেশ আমাদের, মানুষ আমাদের, ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে আমাদেরই। এ বছর বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। চালের উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন কম হয়েছে। চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে সারা দেশের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কেন শুধু বিদেশি সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকব? বন্যার একটি বড় কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া এবং বাঁধগুলোর সময়মতো ও প্রয়োজনমতো মেরামত না হওয়া। ২০ লাখ টন চালের মূল্যের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ সময়মতো খরচ করলে আজ আমাদের এতো বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হতো না। এখানেই দূরদর্শিতা, পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের অভাব। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। সেই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও মুখ থুবড়ে পড়বে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় শুধু তহবিল নয়, প্রয়োজন সদিচ্ছা, দূরদর্শিতা, সঠিক পরিকল্পনা ও তার দ্রুত বাস্তবায়ন। আমরা নিজের অর্থে যদি পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারি, তাহলে এ ক্ষেত্রে কেন প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারব না? আর সে কাজ একবারেই করতে হবে তেমনও কথা নেই। ধাপে ধাপে করতে পারি। কিন্তু বড় পরিসরে তা তো আমরা শুরুই করতে পারছি না। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার কাজটিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে, পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যেতে হবে।