ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার ওপর থেকে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা (আইটিইএস) থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চারটি সংগঠন।
প্রযুক্তি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, বিদেশি সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের ‘ভার্চুয়াল বিজনেস সেবা’ সংজ্ঞার বিস্তৃত ব্যাখার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে একত্র হয় তারা।
এতে যোগ দেয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( আইএসপিএবি)।
নতুন অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৬৮১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৯৩ কোটি টাকা কম।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট কমিয়ে দেওয়ায় তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ‘অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।”
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, “সরকারের মন্ত্রণালয়, সেক্টরগুলো যখন ই-গভার্নেন্স ও ই-সার্ভিসের আওতায় এনে সবকিছু ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে, তখন সেখানে যে অ্যালোকেশন রাখা হয়েছে তাতে কি করে হয়?”
তার সঙ্গে সুর মেলান বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, বাক্য’র সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ, আইএসপিএবির সভাপতি এম এ হাকিম।
এবারের বাজেট প্রস্তাবে অনলাইনভিত্তিক যে কোনো পণ্য বা সেবার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরকে এ সেবার আওতাভুক্ত করে ‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবার উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
এছাড়াও ডেটাবেইস, প্রডাক্টিভিটি সফটও্য়্যার, যোগাযোগে ব্যবহৃত সফটওয়্যার, স্বয়ংক্রিয় ডেটা প্রসেসিং মেশিনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেমের মতো সফটওয়্যার আমদানিতে সব খাতে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে এই খাতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির কথাও বলা হয়েছে।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বেশ কটি সফটওয়্যার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির সিদ্ধান্তকে পরিবর্তনের দাবি জানান।
তিনি বলেন, “অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেইস, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সাইবার সিকিউরিটি আমদানির ওপর থেকে শুল্ক কমানোর জন্য বেসিস থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি কম্পিউটারের অন্যান্য সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং মূসক সম্পূর্নরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা অন্যান্য সফটওয়্যারের উপর আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানাই।”
আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে দেশে বিদেশি সফটওয়্যার আমদানি বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন বেসিস সভাপতি।
সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, “দেশিয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশের জন্য আমরা বেশকটি দাবি তুলেছিলাম, স্গেুলো বাজেটে বাস্তবায়িত হয়নি। দেশে বিদেশি সফটওয়্যার আমদানি বাড়লে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার দামও বেড়ে যাবে। ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির সিদ্ধান্তও জাস্টিফাইড মনে হয় না।
“বিদেশি সফটওয়্যার আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড়ের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর নানা সেবা থেকে সরকার আরও অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে।”
দেশি সফটওয়্যারের বিকাশ ও শিল্পের সংরক্ষণে বাজেট প্রস্তাবে আরও দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করেছিলেন বলেও জানান কবীর।
বিভিন্ন সংস্কারমূলক প্রকল্পে দেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব না দিয়ে বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ায় খাতটি ‘বিকশিত হচ্ছে না’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আগামী বছর সফটওয়্যার খাত থেকে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার কথাও জানান বেসিস সভাপতি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় এসে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলেও জানান।
এবারের বাজেট অনলাইন প্লাটফর্ম বা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনা-বেচায় পাঁচ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘ভার্চুয়াল বিজনেস’ সেবার সংজ্ঞায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বাণিজ্য নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেওয়ায় এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুস্পষ্ট বক্তব্যও আশা করেন তিনি।
বেসিসের তৈরি ভ্যাট ক্যালকুলেশন সফটওয়্যারটি রাজস্ব বোর্ড ব্যবহার করতে শুরু করলে রাজস্ব আদায় আরও ‘বৃদ্ধি পাবে’ বলেও মনে করেন বেসিস সভাপতি কবীর।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ইনফো সরকার প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে যখন অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির কথা বলছে, তখন নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্টের উপর আরোপিত ২২.১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক আরোপের প্রস্তাবের নিন্দা জানিয়েছেন আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম।
তিনি বলেন, “সরকার যখন সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বিস্তৃতির কথা বলছে, তখন এই ভ্যাট আরোপ তার অন্তরায়। শুধুমাত্র ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমালেই হবে না। এর পাশাপাশি নেটওয়ার্ক ইক্ইুপমেন্টের উপর শুল্ক প্রত্যাহার না হলে ইন্টারনেট সেবার দাম বেড়ে যাবে। তখন গ্রাহক পর্যায়েও দেখা দেবে অসন্তুষ্টি।”
হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের উপর শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে দেশের বিজনেস আউটসোর্সিং প্রসেস (বিপিও)খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বাক্য সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান শরীফ।
“বিপিও খাতটি পুরোপুরি নির্ভর করে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের উপর। দাম বেড়ে গেলে আউটসোর্সিং খাতটি আর বিকশিত হবে না। ইন্টারনেট পেনিট্রেশনও মারাত্মকভাবে বাধা পাবে।”
ঘোষিত বাজেটে ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের মূল্য প্রায় ’১১ শতাংশ’ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করে বিসিএস।
বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পাশাপাশি ইউপিএস-আইপিএস ও ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজারে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিও তুলেন। এই শুল্ক হার আগের মতো ১০ শতাংশ রাখার দাবি তোলেন তিনি।