কারও কি রাতের মাঝামাঝি হঠাৎ শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়ার মতো করে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে? এতে মনে হতে পারে কোনো কিছু যেন তার শ্বাসতন্ত্রে আটকে যাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি যদি খুব স্থূলকায় হোন এবং এ সমস্যা যদি অনেক দিনের হয় এবং নিদ্রাকালে অতিরিক্ত নাক ডাকেন তবে তা একসময় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তাই সে অবস্থা দেখা দিলে তাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। অনেকে একটু সুন্দর ঘুমের জন্য এবং সুন্দর স্বপ্নের জন্য ঘুমাতে যান। এদের অনেকেই জানেন না যে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতাজনিত শ্বাসযন্ত্রণা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রতিবন্ধকতাজনিত শ্বাসরোধ সমস্যা যদিও আস্ত্মে আস্ত্মে দেখা দেয় তবুও রোগীকে স্থায়ীভাবে শারীরিক অবনতির দিকে নিয়ে যায় এবং এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। যদি ঠিক সময়ে এ সমস্যা নির্ণয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে পরে তা অন্যান্য রোগের মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এ ধরনের শ্বাসরোধজনিত সমস্যা সাধারণত যাদের পেশা খুব বেশি মনোযোগ এবং পরিশ্রমগত তাদের জন্য বেশি কষ্টদায়ক হয়। গাড়ির চালক এবং যারা বৃহৎ আকারের মেশিন চালান তাদের জন্য এ সমস্যা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এ রোগের উপসর্গ হলো- শ্বাসকষ্ট যা শ্বাসনালির প্রতিবন্ধকতায় সাধারণত শ্বাসনালির উপরিভাগের অস্বাভাবিক অবস্থায় হয়ে থাকে এবং এ প্রক্রিয়া সারা রাত ধরে বারবার হতে থাকে। এ সমস্যাটিকে আরও সুন্দরভাবে নির্ণয় করা যায়। যদি সাত ঘণ্টার ঘুমের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ বার এ শ্বাসরোধ অবস্থা ঘটে, যাতে প্রতিবারে ১০ সেকেন্ডের মতো সময় পর্যন্ত্ম নাক এবং মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকে। রোগী নাক ডাকতে থাকে যখন শ্বাসনালির উপরিভাগে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকে। ল্যারিংসের মুখগহ্বরের অংশ হলে শব্দ সৃষ্টির সাধারণ স্থান এবং এ বিরক্তিকর শব্দ সৃষ্টি হয় মুখগহ্বরের তালু, জিহ্বার পেছনের অংশ এবং ল্যারিংসের দুই দিকের মাংসপেশির কার্যকর দুর্বলতা বা শিথিলতার কারণে। স্বল্পস্থায়ী শ্বাসরোধ হওয়ার কারণ- রক্তের মধ্যে তাড়াতাড়ি অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়।
অক্সিজেনের এ ঘাটতি রোগীর দরকারি ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং বারবার ঘুম ভেঙে যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত যারা নিদ্রাকালে বেশি নাক ডাকেন তাদের শতকরা ৫০ ভাগ থাকেন স্থূলকায় ও বেশি ওজনধারী। নাক ডাকা স্বাস্থ্যবান পুরম্নষ এবং মহিলাদের অনেকের মধ্যেই থাকে যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে যদি তার সঙ্গে খুব বেশি স্থূলকায় শরীর ও নিয়মিত মদপান এবং স্স্নিপিং পিল খাওয়ার অভ্যাস থাকে তবে তা পরে এ প্রতিবন্ধকতাজনিত শ্বাসকষ্টে রূপ নিতে পারে। সমস্যাটি জটিল না হওয়া পর্যন্ত্ম এটা শনাক্ত করা খুব একটা সহজ নয়। অনেক ক্ষেত্রে ধরাই পড়ে না। কারণ এ সমস্যা খুব আস্ত্মে আস্ত্মে বাড়তে থাকে যার মারাত্মক পরিণতি রোগী অনেক সময় জানতেও পারে না। এ সমস্যায় বেশি ওজন, স্থূলকায় শরীর এবং ল্যারিংসের শিথিলতা ছাড়াও আরও অনেক কারণ আছে। যাদের বড় আকারের টনসিল এবং এডিনয়েড গস্ন্যাড, বিভিন্ন কারণে নাকের প্রতিবন্ধকতা, মুখের অভ্যন্ত্মর ও গলায় টিউমার, মোটা জিহ্বা এবং মিক্সিডিমা প্রণিধানযোগ্য কারণ।
এ রোগের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- নিদ্রাকালে বার বার শ্বাসরম্নদ্ধ অবস্থায় রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের প্রচেষ্টায় অস্বাভাবিক শরীর নড়াচড়া, ঘুমের মধ্যে অস্থিরতা এবং কাজের সময় ঘুম ঘুম ভাব দেখা দেয়া, দুর্বলতা, দৈনন্দিন কাজে অবসাদ, মাথাব্যথা এবং প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ লোপ পাওয়া। এ থেকে আস্ত্মে আস্ত্মে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। যেমন- করপোলমোনেল, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। এ রোগ সাধারণত পুরম্নষের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। এটা শনাক্ত করতে হলে কান ও গলা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হয়। হৃদযন্ত্রের জন্য ইসিজি, বুকের এক্স-রে ও বস্নাডপ্রেসার পরীক্ষা করতে হবে এবং ঘুমের মধ্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা, যেমন- ইসিজি ও রক্তে গ্যাসের পরিমাণ দেখতে হয়। উন্নত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুমের পরীক্ষাগার স্থাপন করে এ রোগ নির্ণয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যারা ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিক নাক ডাকেন তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই কারণ নাক ডাকা সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ স্বাস্থ্যবান লোকের মধ্যেও দেখা যায় যারা শুধু অন্যের ঘুমের অসুবিধাই সৃষ্টি করেন এবং তাদের কোনো শারীরিক ঝুঁকি থাকে না। এ সমস্যার চিকিৎসা ও রোগের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন চিকিৎসার ধরন ঠিক করা হয়। তবে সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো দেহের অতিরিক্ত মেদ কমানো, রাতে মদপান এবং ঘুমের ওষুধ বর্জন করতে হবে। তাতে কাজ না হলে শ্বাসনালির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।