দূষণের উপাদান
বিপদ এবং বিপর্যয়ের উপাদান এখন শহর নগর ছাড়িয়ে গ্রাম-গঞ্জে পৌঁছে গেছে। আর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যাচ্ছে তা। দিন দিন এই উপাদান হয়ে উঠেছে জীবনযাপনের অপরিহার্য পণ্য। কিন্তু এর যে ভয়াবহ দিক সে সম্পর্কে নেই সচেতনতা। বরং অজ্ঞতার গহ্বরে চাপা পড়ে আছে এই পণ্য ব্যবহারের কুফল। তাই অবলীলায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্লাস্টিক পণ্য। বোতল, থালা, বাটি, গ্লাস, খেলনা, ফুল, আসবাবপত্র, গৃহসজ্জা সামগ্রী, দরজা, জানালা, খাবার ও পণ্যের মোড়ক, মাদুর, এমনকি পরিবেশ রক্ষাকারী গাছের গোড়ায়ও দেখা যায় প্লাস্টিকের টব। মার্কিন ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ক্যান্সারের যে আটটি কারণ উল্লেখ করেছে প্লাস্টিক তার মধ্যে অন্যতম। দেশে নিয়মিত প্লাস্টিক পদার্থের ব্যবহারে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। পরিবেশবিদ ও চিকিৎসকরা বলছেন, পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক পণ্য। অসচেতনতার কারণেই মানুষ এগুলো ব্যবহার করছে। প্লাস্টিক পণ্য পাঁচ শ’ বছরেও মাটির সঙ্গে মেশে না। নর্দমা, ড্রেন হয়ে নদী-নালা ও সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে, ক্ষতি করছে। বছরে আশি লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে যাচ্ছে। প্লাস্টিক পানি, মাটি ও পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে। যেখানে-সেখানে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ফেলে মানুষ নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে। প্লাস্টিক পণ্যের প্রকারভেদ ও পরিবেশে এর প্রভাব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানান, প্লাস্টিকের রকমফের রয়েছে। যেমন কোন প্লাস্টিক একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হয়। কিছু প্লাস্টিক নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহার করতে হয়। আবার কিছু প্লাস্টিক দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করতে হয়। এদেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিক অত্যন্ত নিম্নমানের। এগুলো অপচনশীল। ফলে কোন প্লাস্টিকের কন্টেনার কৌটা বা সামগ্রী ফেলে দিলে বছরের পর বছর তা মাটিতেই থাকে, মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এতে মাটির গুণগত মান ও উর্বরতা নষ্ট হয়। ভূমির যে প্রাণ তথা গাছ, উদ্ভিদ, তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটির ভেতরে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। নদী, খাল, বিলের ¯্রােতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এগুলো সবই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যাগ, কসমেটিক্স প্লাস্টিক, গৃহস্থালির প্লাস্টিক, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্যের পুনঃচক্রায়ন হয় না। এগুলো পরিবেশ থেকে বর্জ্যরে আকার নেয়। পানিতে থাকা প্লাস্টিক একসময় কণায় রূপ নেয়। সেগুলো যদি মাছ গ্রহণ করে, তবে সেই মাছ খেলে মানুষের শরীরে সেই প্লাস্টিক প্রবেশ করবে। সাধারণত প্লাস্টিক পদার্থে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক রঞ্জক মেশানো হয়। এসব রঞ্জক কারসিনজেন হিসেবে কাজ করে ও এন্ডোক্রিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রে যে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হয় তা ভার্জিন প্লাস্টিক। অথচ এদেশে বার বার পুড়িয়ে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা হয়। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়। উপকূলের মাছের পেটে এখন হরেক রঙের পলিথিন পাওয়া যায়। মাছের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করছে প্লাস্টিক ও পলিথিন।
পরিবেশের ক্ষতিকারক পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প এখনই ভাবতে হবে। প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টব, থালাবাসন কোনটাই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্লাস্টিকের দূষণ বন্ধ করতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তা না হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও মানবের ওপর। পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা জরুরী। একই সঙ্গে পরিবেশ সচেতন ও পরিবেশ রক্ষায় মানুষ দায়িত্বশীল হয়ে উঠলে তা হবে অত্যন্ত ইতিবাচক। জনসক্রিয়তা গড়ে উঠলে এর ব্যবহার বন্ধ হতে পারে।