ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
অব্যাহতভাবে চলছে রেলের তেল চুরি। এই অপকর্মেও সাথে রেলের লোকোমাস্টার, লোকো ইন্সপেক্টর, শেডম্যান ও শেডের বুকিং ক্লার্কদের জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে তেল সংগ্রহ ও শেড কিংবা স্টেশনে ইঞ্জিনে তেল লোডিংয়ের সময় চুরির ঘটনা বেশি ঘটে। আর রেলের জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত ব্যয় খতিয়ে না দেখায় বন্ধ হচ্ছে না চুরির ঘটনা। শুধুমাত্র তেল চুরি ও অপচয়ের কারণেই রেলের জ্বালানি বাবদ ৫০–৭০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। মূলত সংশ্লিষ্টদের কঠোর আইনের আওতায় না আনা এবং সঠিক পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ ও মজুদের হিসাব না রাখায় এমন পরিস্থিতি রোধ করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত এপ্রিলেও রেলকর্মীদের বিরুদ্ধে তল চুরির অভিযোগ ওঠে । রেলের পাহাড়তলী লোকোশেডে ওই তেল চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটিও করা হয়। তার আগে গত জানুয়ারিতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর লোকোশেডের পাশে রেলের ইঞ্জিন (নং–৬৫১১) থেকে ২৪০ লিটার তেল চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় চালক ও সহকারী চালককে (এএলএম) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি এখনো রেলের তদন্তাধীন রয়েছে। ২০১৬ সালের শুরুতে একটি মালবাহী ট্রেন থেকে তেল চুরির অভিযোগ ওঠে রেলের সিজিপিওয়াইয়ের লোকোমাস্টারের (এলএম) বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বিভাগের মস্তাননগর এলাকায় ওই তেল চুরির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর অভিযুক্ত ট্রেনচালককের ৩ বছরের ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করে রেলওয়ে।
সূত্র জানায়, রেলের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জ্বালানি তেল ব্যবহার ও ইঞ্জিনের রানিং কিলোমিটারের মধ্যে অসামঞ্জস্যের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাতেও তেল চুরির বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। কারণ ২০১৫–১৬ অর্থবছর রেলের ইঞ্জিন পরিচালনায় ডিজেল ব্যবহার বেড়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অথচ একই সময়ে ইঞ্জিনের রানিং কিলোমিটার বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। ইঞ্জিনের অদক্ষতা হিসাবে নিলেও জ্বালানি ও রানিং কিলোমিটার বৃদ্ধির হারে এত ব্যবধান হওয়ার কথা নয় বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
অপচয় ও তেল চুরির কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এক দশক ধরে ডিজেলের ব্যবহার ৩৪–৩৫ হাজার টনের ঘরে ঘোরাফেরা করলেও সর্বশেষ অর্থবছর তা ৪০ হাজার ১১৩ টনে উন্নীত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত ডিজেল ব্যবহার বাড়লেও সে অনুপাতে ইঞ্জিনের পরিচালন না বাড়ায় রেলের তেল চুরির বিষয়টি আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, রেলের প্রায় সব ধরনের উন্নয়ন ও অর্থ ব্যয়ে তদারকি থাকলেও জ্বালানি তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত। তেল চুরির সিন্ডিকেটটি শক্তিশালী হওয়ায় বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি করেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ইঞ্জিন ব্যবহারের দক্ষতা ও তদারকি বাড়ানোর মাধ্যমে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা গেলে প্রতি বছর রেলের প্রায় শত কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক জানান, বর্তমান সরকার বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে রেলকে শতভাগ গণমুখী ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চাইছে। কর্মকা– বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলের জ্বালানি তেলের ব্যবহারও বেড়েছে। তবে জ্বালানি ব্যবহার বাড়লেও ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধি সমান্তরাল না হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। আর রেলের তেল চুরির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।