মৌলভীবাজার (বড়লেখা)প্রতিনিধি:
বড়লেখায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাধবছড়া খাল অপরিকল্পিতভাবে পুন:খনন করা হয়েছে। এতে ধসে পড়ছে রাস্তা, বাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল পুন:খননে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল খননের সুফল ভোগের পরিবর্তে উল্টো এখন চার গ্রামের ১০ হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে তাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ইবিএ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার মাধবছড়া খাল পুন:খনন কাজ শুরু করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৬২ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮ টাকা। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এরপর হাকালুকি হাওর হতে ভোলারকান্দি ভায়া কামিলপুর পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার খাল পুন:খনন কাজ করে টিটিএসএল-জয়েন্ট ভেঞ্চার নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, কাজের শুরুতে পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের সঠিক সীমানা নির্ধারণ না করেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিভাবে খনন কাজ চালান।
খালের ভূমি পতিত রেখে আমবাড়ি-ভোলারকান্দি এলজিইডির ইটসলিং রাস্তা কেটে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন। সঠিকভাবে খালের ডাইক (বাধ) নির্মাণ করেননি। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে খালের মাটি বিক্রি করেছে। শত বছরের রাস্তার সিংহভাগ কেটে ফেলায় সুজানগর ইউনিয়নের সালদিঘা, ভোলারকান্দি, আমবাড়ি ও রফিনগর গ্রামের বাসিন্দারা পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাধবছড়া খালের দক্ষিণ পাড় দিয়ে যাওয়া আমবাড়ি-ভোলারকান্দি এলজিইডি রাস্তা খালের মধ্যে ধসে পড়েছে। স্বেচ্ছাচারি খাল খননে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বাসিন্দাদের এবং মসজিদ-গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর হেলে পড়েছে। চলাচলের রাস্তাটি বছর ধরে একেবারেই চলাচল অনুপযোগী।
ইউপি সদস্য মক্তার আলী, সাবেক ইউপি সদস্য ছলফু মিয়া, সালদিগা গ্রামের বাসিন্দা রজব উদ্দিন, লুৎফুর রহমান, হারিছ আলী, ছিদ্দিকুর রহমান, মুসলেহ উদ্দিন, শিক্ষক ফখরুল ইসলাম প্রমুখ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড মাধবছড়ার সঠিক সীমানা নির্ধারণ না করেই ইচ্ছামতো অপরিকল্পিত খনন কাজ শুরু করে। উত্তর পাশে খালের ভূমি পতিত রেখে দক্ষিণ দিকের এলজিইডির ইটসলিং রাস্তার সিংহভাগ কেটে ফেলে। এলাকাবাসী রাস্তা কাটতে বাধা দিলে পাউবো’র কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের লোকজন বিগত সরকারের দলীয় প্রভাব ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে খনন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যায়। পাউবো’র খাল খনন এলাকাবাসির গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি রাস্তাতো গেছেই, সাথে বসতবাড়ির এবং মসজিদ গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এলাকাবাসির প্রশ্ন কার উপকারের জন্য এই খাল খনন প্রকল্প। আর প্রকল্পের পৌনে চার কোটি টাকা গেলইবা কোথায়। তারা তদন্তপূর্বক খাল খননের অনিয়ম-দুর্নীতি আর অর্থ লোপাটের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম জানান, খনন কাজের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি এখন চলাচল অনুপযোগি ও ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি জনসাধারণের চলাচল উপযোগি করতে খালের পাড়ের কিছু মাটি এনে রাস্তায় ফেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল ব্যবস্থা নিতে বড়লেখা ইউএনওকে চিঠি লিখেছেন। এতে এলাকাবাসির মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ১৬ কিলোমিটার পুনঃখনন কাজের ৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার সমাপ্ত হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে।
তবে, সরেজমিনে খনন কাজ চলমান থাকতে দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রথম বছর (২০২২ সাল) খাল খননের নামে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে গেছে পাউবো। এরপর আর কোনো কাজই হয়নি!