January 15, 2025, 5:48 pm

সংবাদ শিরোনাম
তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি সম্পন্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রজেক্টরে ভেসে উঠায় স্থানীয় জনতার প্রতিবাদ ঢাকায় দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করলেন সন্ত্রাসীরা: বেনাপোলে ভারতীয় ভয়ঙ্কর ট্যাপেন্টাডোল জব্দ মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ লামায়-আলীকদম অনুপ্রবেশকালে ৫৮ মিয়ানমার নাগরিকসহ ৫ দালাল আটক শিবচরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের লিফলেট বিতরন মধুপুর উপজেলা মেম্বার ফোরামের উদ্যোগে তিন শতাধিক কম্বল বিতরণ সেনাবাহিনীর অভিযানে নবীগঞ্জ থেকে দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার নাটোরে ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

আমেরিকা-চীন-ভারত: এক জটিল সম্পর্কের রসায়নে বাংলাদেশ

ডিটেকটিভ ডেস্কঃঃ

 

‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু এ দেশের পরবর্তী নির্বাচনে যদি তারা ক্ষমতায় না আসতে পারে তাহলে এই স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে। তাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়াটা শুধু ভারতের জন্য নয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করবে।’ ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা তাঁর এক লেখায় এই মন্তব্য করেছেন।

ভারতের চেন্নাইভিত্তিক ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইনের অনলাইন সংস্করণে গত ২০ আগস্ট প্রণয় শর্মা তাঁর লেখায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভারত ও আমেরিকার আগ্রহ, দুই দেশের স্বার্থের বৈপরিত্যসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। ‘ইফ শেখ হাসিনা লুজেস জানুয়ারি ইলেকশন, বাংলাদেশ কুড প্রলংগড পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক ইনস্টেবিলিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতের সাথে স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ভারত-বিরোধী শক্তিগুলোকে দূর করেছেন। কিন্তু নয়াদিল্লি ও ঢাকার ভয় হলো, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের সর্বশেষ অবস্থান এই সম্পর্ককে বিপদে ফেলতে পারে।

প্রণয় লিখছেন, আমেরিকা তার বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু তাদের এই প্রয়াসও সন্দেহজনক। কোনো দেশ গণতন্ত্রের পথে একটু পিছলে পড়লে তাকে ডেকে কথা বলছে, আবার আরেক দেশ একই ঘটনা ঘটানোর পরও কৌশলগত কারণে দেখেও না দেখার ভান করছে। ফলে মোদ্দা কথা হলো, গণতন্ত্র নিয়ে অভিযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেওয়া হলো কেন?

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিশেল কুগেলম্যান বলছেন, বাংলাদেশ কৌশলগত কারণে আমেরিকার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ না যে, তারা দেশটি নিয়ে কোনো নাড়াচাড়া দেওয়ার ঝুঁকি নেবে না। বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার কিন্তু আমেরিকান কৌশলের জন্য বাংলাদেশ কোনো বাজি না। এই কারণে মার্কিন প্রশাসন মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে চাপাচাপি করছে।

ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত মহাসাগরে ক্ষমতার লড়াইয়ে ভাগিদার হতে অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা। ভারত মহাসাগরের অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরের তীরে বাংলাদেশ। দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় স্বার্থের দ্বন্দ্বে আমেরিকা ও চীন থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখার নীতি নিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে ভারত–চীন দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। দুই দেশই বাংলাদেশে তাদের প্রভাব বাড়াতে সচেষ্ট। আবার এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘ বিবাদে জড়িত এবং ভয়াবহ সংঘর্ষও বাদ পড়েনি। এর ভেতরে আবার আমেরিকা নাক গলানোয় বিষয়টি জটিলতর হয়েছে। ফলে শেষমেষ গিয়ে এটা আমেরিকা-চীন দ্বন্দ্বের মধ্যে গিয়ে পড়েছে।

আবার বাংলাদেশের চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ভালো চোখে দেখছে না আমেরিকা। গত জুনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার অধিকারকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশের দেশীয় ও পররাষ্ট্রনীতি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা এবং জাতীয় বাস্তবতা মেনে উন্নয়নের পথ চয়ন করাকেও সমর্থন করে চীন। এটা ভারতের জন্য শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। একদিকে চীনের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতায় সে নিজে ও আমেরিকা রুষ্ট। আবার আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবাদে ভারত ওয়াশিংটনের ওপর প্রভাব রাখুক-শেখ হাসিনা সরকারের প্রত্যাশা। এখন চীন যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকার পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে ভারতের আশু কর্তব্য হচ্ছে ওয়াশিংটনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া, যাতে তাদের চীনের খপ্পর থেকে বের করে আনা যায়।

ভারতের ভয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে গেলে ঢাকায় তার জন্য বৈরি সরকার বসবে। অন্যদিকে চীনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক ভালো। ফলে চীনের স্বার্থে তেমন কোনো আঘাত আসবে না। মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার চীন। বছরে লেনদেনের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি ডলার।

অন্যদিকে আমেরিকা ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের বছরে লেনদেন যথাক্রমে এক হাজার কোটি ও এক হাজার আট শ কোটি ডলার। যদিও বাংলাদেশ-চীন যৌথ বাণিজ্যের বড় অংশই দখল করে আছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৭২ শতাংশ আসে চীন থেকে। পাকিস্তানের পরে বাংলাদেশ হলো চীন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা খাতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিতে ভারত ও আমেরিকা উভয়েই চিন্তিত। পেকুয়ায় সাবমেরিন কেন্দ্র বানিয়ে দিয়েছে চীন। দুটি সাবমেরিন সরবরাহ করেছে ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারা।

চীনের কাছ থেকে দূরে সরানো বাদ দিয়ে বাংলাদেশে আসলে আমেরিকার স্বার্থ কী? আমেরিকা আসলে বাংলাদেশের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শক্তিশালী করতে চায়। তারা চায় জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি অ্যাগ্রিমেন্ট এবং অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্টস- এই দুটি চুক্তিতে সই করতে। এটা হলেই দু দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদার হবে।  এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিশেল কুগেলম্যানের মতে, ‘আমেরিকা আন্তরিকভাবেই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। কিন্তু পাশাপাশি এও চায়, বাংলাদেশে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, যাতে দেশটির সাথে সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন তৈরি না হয়’।

 

 

//ইয়াসিন//

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর