সিলেটে টানা ১সপ্তাহ ধরে চলা দাবদাহে অতিষ্ঠ ছিল জনজীবন কিন্তু বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। তবে শনিবার মধ্যরাত থেকে বৃষ্টি নামে সিলেটে। কিন্তু এই স্বস্তিটাও স্থায়ী হল না। মাত্র দেড়ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ এলাকা। বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। মাত্র বন্যার ধকল কাটানো নগরবাসীর জন্য এই জলাবদ্ধতা চরম দুর্ভোগ হয়ে পড়ে। সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। দেড় ঘন্টা বৃষ্টির হলে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ এলাকা। অনেক উঁচু এলাকাতেও পানি উঠে যায়। তবে বৃষ্টি থামার পর সকালে এই পানি নেমে গেছে। রাতে নগরের সোবহানিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে হাঁটুর উপরে পানি জমে গেছে। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি গুড়া। নগরীর সোবহানীঘাট ছাড়াও বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, লোহারপাড়া, বড়বাজার, লামাবাজার, মদিনামার্কেট, চারাদিঘিরপাড়, সওদাগরটুলা, যতরপুর, উপশহর, শিবগঞ্জ, শাপলাবাগ, তালতলা, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, জল্লারপাড়, ভাতালিয়া, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, মেন্দিবাগ, দরগামহল্লা, লালদিঘিরপার, কুয়ারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটুপানি জমে। এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি উঠে যায়। মধ্যরাতে ঘরে পানি ঢুকায় মানুষজন পরেন চরম দুর্ভোগে। নগরীর উপশহরে পানি নামার পর সবকিছু পরিষ্কার করে কিছুদিন আগে মাত্র ঘরে ওঠেন মানুষজন। আবার পানি ঢুকে পড়ল। তাদের দুর্ভোগ যেন শেষই হচ্ছে না। শনিবার রাতের বৃষ্টিতে পানি ঢুকে পড়ে সিলেটের বইয়ের বাজার হিসেবে পরিচিত জিন্দাবাজারের রাজা ম্যাবশনেও কিন্তু মার্কেটের ভেতর পানি ঢুকে কয়েক লাখ টাকার বই ভিজে নষ্ট হয়। এর আগে ১৮ জুন বন্যার পানি ঢুকে মার্কেটের কোটি টাকার বই নষ্ট হয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়। গত ১৫ জুন থেকে তৃতীয় দফায় বন্যা শুরু হয় সিলেটে। এতে তলিয়ে যায় সিলেটের ৮০ শতাংশ এলাকা। নিন্মাঞ্চলে এখনও বন্যার পানি থাকলেও নগর থেকে পানি নেমেছে। এর আগে গত মে মাসে আরেক দফা বন্যায় পানি ঢুকে নগরের বেশিরভাগ বাসা বাড়িতে। নগরীর শিবগঞ্জ এলাকায় খোলা ড্রেন হলে আবর্জনা আটকে থাকত না, কিন্তু বক্স কালভার্টে আবর্জনা আটকে থাকছে। ফলে পানি কাটতে পারছে না। এতে অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যায় বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা আবর্জনা এসে ড্রেনে জমা হয়ে পড়ে। নাম বলতে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, সিসিক’র উচিত ছিল বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেয়া কিন্তু তারা তা করেনি। তাদের দোষে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নগরী তলিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, ‘নগরের ড্রেনগুলো খুব সরু আকারে নির্মাণ করা হয়েছে, ছড়াগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। তাই পানি কাটতে পারছে না। আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি কাটতে পারছে না কিন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জলাবদ্ধতার জন্য নদীর পানি বৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছেন। তিনি জানান, সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ছড়া-খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে উল্টো নদীর পানি শহরে ঢুকছে। তবে এবার নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। তবু জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হলো নগরবাসীকে।