-
- কৃষি
- রাজশাহীতে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে নতুন ২২ জাতের আলু
- আপডেট সময় March, 9, 2022, 12:25 pm
- 225 বার পড়া হয়েছে
দেশেই চাষ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের আলু। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য উন্নত জাতের আলু চাষ শুরু হয়েছে। সেই লক্ষে রাজশাহীর তানোরে ২২টি নতুন জাতের আলু নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করছে এগ্রিকনসার্ন। এর মধ্যে ২০টি জাতের আলু একেবারে নতুন। এসব জাতের আলুবীজ পরীক্ষামূলক চাষাবাদে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে চাষীরা ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করেন। এই আলু প্রতি হেক্টরে ২০ থেকে ২২ টন উৎপাদন হয়। তবে নতুন জাতের এই আলু ২৫ থেকে ৩০ টন পর্যন্ত উৎপাদন হবে প্রতি হেক্টরে। তানোর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার হরিপুরে ৩০০ একর জমিতে এমন ২২টি নতুন জাতের আলু চাষ করেছে এগ্রিকনসার্ন।
তারা বলছেন- কিটনাশক ও সেচ কম লেগেছে আলু চাষে। শুধু তাই নয়, অল্প সময়ের মধ্যে জমি থেকে এই জাতের আলু তোলা সম্ভব হয়েছে। এবছর পুরো তানোর উপজেলায় বিভিন্ন জাত মিলে ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা জানান, ‘জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ আলু কৃষক ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, আলু ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবছর রোগ বালাই কম ছিল।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- ২০২০ সালে ৩৫ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন আলু। ২০২১ সালে জেলায় জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে। এই হিসাবে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ে ছিল ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- কামারগাঁও এলাকার হরিপুরে ৩০০ একর জমিতে ২২টি নতুন জাতের আলু চাষ করেছে এগ্রিকনসার্ন। এখানে নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে থেকে আনা আলুর জাতগুলো পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে।
আলুর জাতগুলো হলো- সানসাইন, ৭ ফোর ৭, গ্রানোলা, কুইন এ্যানি, লাবেলা, অক্টো, প্রাডা, ওলাপ, মার্টা, পাইজেনও, প্রিন্সেস, ফোরজা, টাইসিয়া, গায়া, আল্ট্রা, কুম্বিকা, ডোনাটা, জুলিংকা ও জেলি। এই জাতগুলোর একেকটির একেক রকমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো আলু দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি থেকে হারভেস্ট ( উত্তোলন) করা যাবে। কোনো কোনো আলুতে সেচ বা কিটনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়। তবে গুনগত মান ঠিক থাকবে।
তানোরে নতুন ২২টি জাতের আলু নিয়ে কাজ করা এগ্রিকনর্সান-এর অ্যাডভাইজার ড. জতিস চন্দ্র সরকার জানান, ‘নতুন ২০টি জাতের আলু; আগের দু’টি জাত নিয়ে মোট ২২টি আলুর জাত নিয়ে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় জাতের তুলনায় অনেক ভালো ফলন হবে আশা করছি। এই আলুগুলো পরীক্ষামূলক দেশের পাঁচটি জেলায় চাষ করা হয়েছিল।
এর মধ্যে কয়েকটি ফার্মও রয়েছে। সেগুলো হলো- দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালী ও গলাচিপা। এইসব জেলায় আলু পরীক্ষামূলক চাষে ফলন অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমাদের চাষীরা যে আলু চাষবাদ করছে সেগুলো অনেক পুরোনো জাতের। কমপক্ষে ৩০ বছর আগের। সব দেশে নতুন জাতের আলু চাষ হচ্ছে; কিন্তু আমাদের দেশে পুরানো জাতের আলু চাষ হচ্ছে। তবে নতুন জাতের এই আলুগুলো সম্ভাবনা দুয়ার খুলবে। কারণ এই আলুগুলোর প্রোডাকশন বেশি; বিদেশে রপ্তানি উপযোগী।
বিদেশে যে ধরনের আলুর চাহিদা বেশি- সেই আলু এগুলো। এর মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে টাইসিয়া। এই জাতের আলু প্রতি হেক্টরে ৬০ টন উৎপাদন হবে। অল্প দিনে জমি থেকে উঠবে সানসাইন ও প্রাডা আলু। এই দুই জাতের আলু ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে তোলা সম্ভব। শুধু তাই নয়, একেক জাতের একেক ধরনের বৈশিষ্ট রয়েছে।
অ্যাডভাইজার ড. জতিস চন্দ্র সরকার জানান, তানোরে ২২ জাতের আলুর মধ্যে সানসাইন ৩০ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ৭ ফোর ৭ চাষ করা হয়েছে ৩০ একর, গ্রানোলা ৭০ একর, কুইন এ্যানি ২০ একর, লাবেলা ৮ একর, অক্টো ২ একর, প্রাডা ২ একর, ওপাল দশমিক ৫ একর, মার্টা দশমিক ৫ একর, পাপাজেনও দশমিক ৫ একর, প্রিন্সেস দশমিক ৫ একর, ফোরজা দশমিক ৫ একর, টাইসিয়া ৫ দশমিক ৫ একর, গায়া দশমিক ৫ একর, আল্ট্রা ২ দমকি ৫ একর, কুম্বিকা আলু চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ডোনাটা ১ একর, জুলিংকা দশমিক ৫ একর, জেলি দশমিক ৫ একর, এডিশন ৪ একর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
তানোর আলু চাষী লুৎফর রহমান জানান- এবছর ২৭ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। তিনি জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া সেচ ও কিটানাশকের খরচও কম হয়েছে। কারণ এবছর রোগ বালাই কম ছিল।
তিনি আরো বলেন, শুনেছি নতুন জাতের এই আলু ৭০ থেকে ৭৫ দিনে তোলা সম্ভব। তাতে সময় বাঁচবে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ দিন। এতে করে একটি সেচ ও কিটনাশক বাবদ চাষীর টাকা বাঁচবে। এই সময়ের আগে আলু জমি থেকে উঠে যাওয়ার কারণে আগাম ধানসহ অন্য ফসল ফলাতে পারবে কৃষক।’
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে উপজেলার কামারগাঁও এলাকার হরিপুরে আলু খেত পরিদর্শন ও স্থানীয় আলুচাষীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষকদের উদ্দেশ্যে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপ, কৃষিতে বিনিয়োগ, কৃষিতে যান্ত্রিকিকরণ, বাণিজ্যিক কৃষি, আধুনিক রপ্তানিমুখী কৃষি, নিরাপদ কৃষি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমবায় কৃষি ইত্যাদি বিষয়ের উপরে বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী।
সোহেল রানা,(রাজশাহী)তানোর প্রতিনিধিঃ
এ জাতীয় আরো খবর