শব্দদূষণ শব্দসন্ত্রাস
শব্দদূষণের ফলে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে- জীবিকার প্রয়োজনে যাদের প্রতিদিন মহানগরীর বড় বড় সড়ক ব্যবহার করতে হয় তারা হাড়ে হাড়ে টের পান শব্দদূষণ কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী। গাড়ির হর্ন, বিভিন্ন প্রচারণার মাইক, মিটিং-মিছিল ইত্যাদি মিলিয়ে ঢাকা শব্দদূষণের এক নরকপুরী। অসহনীয় শব্দ উৎপন্ন করে থাকে কনক্রিট করার মেশিনগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ মানুষের জন্য সহনীয়। অথচ ঢাকার সায়দাবাদ ও মহাখালী এলাকায় শব্দ উৎপন্ন হয় এক শ’ ডেসিবলের ওপরে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষ থাকলেও এর কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় ও রাস্তার পাশের বাসায় মানুষের বসবাস করতে হয়। গবেষকদের মতে, হঠাৎ করে ১৪০ ডেসিবল শব্দমাত্রা আমাদের কানে বা শ্রবণেন্দ্রীয়ে প্রচ- ব্যথা তৈরি করতে পারে। আর ১৯০ ডেসিবল মাত্রা শ্রবণ শক্তি একেবারে নষ্ট করে দিতে পারে। বর্তমানে ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা যে পর্যায়ে আছে, এভাবে চলতে থাকলে একসময় ঢাকার মানুষের শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হৃদরোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বাধাগ্রস্ত হতে পারে শিশুর মানসিক বিকাশ। এমনকি শিশুর মেধার বিকাশ ব্যাহত হতে পারে মারাত্মকভাবে।
সিগন্যালে লাল বাতি দেখে থেমে যাওয়া বিবিধ গতির যানবাহন রেসের ঘোড়ার মতোই ছুট লাগায় সবুজ সঙ্কেত পেয়ে। রীতিমতো গ-ারের মতো তেড়েফুঁড়ে আসতে থাকে মোটরসাইকেলগুলো। হর্ন বাজানো অনেক স্থানেই নিষিদ্ধ তবু প্রতিটি মোটরসাইকেলই হর্ন বাজাতে বাজাতে ছোটে। আবার আবাসিক এলাকার ভেতরে গলিপথ দিয়ে হাঁটলেও শোনা যায় প্রাইভেটকারের তীব্র স্বরে হর্ন বাজানো। পথচারীকে চমকে দিয়ে তার হৃৎপি-কে যাতনা না দিয়ে যেন শান্তি নেই! শব্দদূষণ হলো নীরব ঘাতক, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের ক্ষতি করে মানুষের। অথচ শব্দদূষণের প্রতিকারে তেমন কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। রাজধানীতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই নতুন গাড়ি নামছে। রাস্তা সীমিত, আর রাস্তার বাহন সীমাহীন। সেই সঙ্গে অসীম তার শব্দদূষণ। ঢাকার রাজপথে হরেক রকম উচ্চ শব্দের ভেতর সবচেয়ে অসহনীয় মনে হয় এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। সাইরেন একটানা বেজে চলে, তার থামাথামি নেই। এই সাইরেন শুনে বরং সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম ঘটে। সুতরাং ঢাকার পাড়ায়-পাড়ায় গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে নির্বাচিত মেয়রের পক্ষে একটি নোটিস পাঠানোর অনুরোধ করতেই পারে ঢাকাবাসী। একইসঙ্গে মোটরসাইকেলগুলোর হর্নের ব্যাপারেও একটা কার্যকর অভিযান চালানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। প্রচলিত আইনে মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য শব্দমাত্রা ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ আছে, কিন্তু কেউ তা মানছে না। তাই এটি মানা ও বাস্তবায়নের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে ও আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শব্দদূষণ তথা শব্দসন্ত্রাস রোধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে জোরালো সামাজিক আন্দোলন জরুরী হয়ে পড়েছে।