রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে স্থলসীমান্ত ও বিমানবন্দরগুলোতে রেডএলার্ট
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে স্থলসীমান্ত ও বিমানবন্দরগুলোতে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। বিশেষ কারণ ছাড়া একপ্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী দেশী-বিদেশী নারী-পুরুষের পাকিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে যাতায়াত। একই সাথে তালিকাভুক্ত পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতাওে চালানো হচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। পাশাপাশি কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদিও গুলশান এলাকাটিতে এখন এমনিতেই কড়া নিরাপত্তা রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে এমন তথ্য মিলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কোন কোন গোষ্ঠী কাজে লাগানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী একটি ইসলামী দল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে উস্কে দিতে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে। যেসব দেশ মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে জঙ্গীদের দিয়ে সেসব দেশের নাগরিকদের ওপর হামলা চালানোর জন্য প্ররোচিত করা হচ্ছে। সম্প্রতি মিয়ানমারকে উচিত শিক্ষা দিতে হুমকি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এ সুযোগে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সান্নিধ্য লাভ এবং দেশে আইএসের তৎপরতা থাকার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছে গোষ্ঠীটি। যাতে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ চাপে থাকে। সূত্রটি দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক থাকার পর সম্প্রতি দেশে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির শীর্ষ নেতা হাতকাটা মাহফুজের বরাত দিয়ে বলছে, দেশে ও দেশের বাইরে পলাতক থাকা জঙ্গীরা গোপনে সক্রিয় রয়েছে। তারা পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা বাংলাদেশী জঙ্গীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা বাংলাদেশী জঙ্গীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে মিয়ানমারের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। তবে এমন জিহাদে ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গীদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে থাকা বাংলাদেশী এবং দেশ দুটির বিভিন্ন জঙ্গী সদস্যরা। তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে মিয়ানমারের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে চায়।
সূত্র জানায়, বিদেশী জঙ্গীদের সহায়তা করছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করে পাকিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গী আব্দুল করিম টুন্ডা। তার সাথে পাকিস্তানের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন ছাড়াও দেশটির জামায়াত নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। আব্দুল করিম টুন্ডা মূলত জেএমবির সদস্য। জেএমবির আমীর ও জামায়াতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কারাবন্দী মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের জামাই ইজাজ ওরফে কারগিল। তার হাত ধরেই আব্দুল করিম টুন্ডা জেএমবিতে যোগ দিয়ে উচ্চতর জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে ২০০৯ সাল থেকে ইজাজের সঙ্গে পাকিস্তানে যায়। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া জঙ্গীদের ট্রেনিং, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে আব্দুল করিম টুন্ডা।
সূত্র আরো জানায়, মূলত টুন্ডা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অবস্থানরত বাংলাদেশী এবং দেশ দুটির জঙ্গীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। তারা বাংলাদেশে ঢুকে বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলা করে মিয়ানমারের ঘটনার প্রতিশোধ নিতে চায়। সে লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশে পলাতক কোন কোন জঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। বিদেশ থেকে কোন জঙ্গী যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য স্থল সীমান্ত ও বিমানবন্দরগুলোতে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। বিশেষ বয়স ও কারণ ছাড়া পাকিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় যাতায়াত একপ্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর দেশে পলাতক থাকা জঙ্গীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিশেষ নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশেই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণের কাজ চলছে। দেশী-বিদেশী জঙ্গীদের যাতায়াত ঠেকাতে স্থল সীমান্তে ও বিমানবন্দরগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ রয়েছে। আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) সংগঠনের সদস্যদের ওপরও নজরদারি চালানো হচ্ছে।