অপরিকল্পিত অধিভুক্তি
রাজধানীর সাতটি কলেজ নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে কী লাভ হলো? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এসব কলেজের বিভিন্ন জটিলতা নিরসনের জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আট মাস পার হতে চলেছে, কিন্তু জটিলতা এখনো কাটেনি।
এখনো স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা চাকরির আবেদন করতে পারছে না। সম্মান কোর্সে ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়াও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। এখনো পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের পাঠ্যক্রমেই পড়ালেখা করতে হচ্ছে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীকে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজÑএই সাতটি সরকারি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। হঠাৎ করেই কাজটি করা হয়। কোনো পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছিল না। ফলে বিবিধ সমস্যায় পড়েছে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও।
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের তথা শেষ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। মৌখিক পরীক্ষার আগে অধিভুক্তির বদল ঘটে। ফলে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের দায়িত্ব বর্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। কাজটি এখনো সম্পন্ন হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা ফল পেয়ে গেছে গত ১৪ মে। তারা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছে। কিন্তু উপর্যুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পারছে না। সমস্যা নিরসনের দাবিতে তারা আন্দোলন করেছে। পুলিশের পিটুনিও খেয়েছে। তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী দৃষ্টিশক্তিই হারিয়ে ফেলেছে।
বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামি ১৫ অক্টোবর সম্মান কোর্সের নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় পড়ালেখার মান উন্নত হবে বলে আশা করেছিল শিক্ষার্থীরা। উল্টো মান কমেছে বলে তাদের অভিযোগ। সেশনজটও বেড়েছে। যারা কোর্সের মাঝামাঝি রয়েছে, তারা নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে আতঙ্কিত। দুই বছর এক পাঠ্যক্রমে পড়ে পরের দুই বছর নতুন পাঠ্যক্রমে পড়লে সমস্যা হওয়ারই কথা।
কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার উদ্দেশ্য ছিল ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুষ্ঠু এবং শিক্ষার মান উন্নত করা। কিন্তু কাজটি বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনিতেই অনেক সমস্যা। নতুন সাতটি কলেজের অন্তর্ভুক্তি সমস্যার পাল্লা আরো ভারী করেছে। লোকবল ও কাঠামো নির্দিষ্ট না করেই হঠাৎ এ কাজ করা হয়েছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। দ্রুত তাদের রেহাই দেওয়া উচিত। চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে যারা বসে আছে, তাদের ফল দ্রুত ঘোষণা করা দরকার। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট মহল ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ ভেবেচিন্তে ও প্রস্তুতি নিয়ে করবে বলে আমরা আশা করি।