মা
মাহবুবে খোদা টুটুল
আজ আর কোন আজানের ধ্বনি তাড়িত করে না তোমাকে
তসবিহ পুঁতিগুলোর বেহিসাবি গননা
তবুও একটাই হিসাব অবুঝ মনে এলোমেলো খোঁজে সকাল রাত দুপুরে
তোমার বাবু ভাত খেয়েছে কিনা?
জুঁই কি করে?
অহনা কখন আসবে?
কতদিন ওকে দেখিনা!
অপার কি ঘুমায়?
ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন আজও তোমার চিন্তার কেন্দ্র বিন্দু!
উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই
ছোট বিছানাটাই যেন সমস্ত পৃথিবী এখন।
রক্তিও কেও না
একজন অশিক্ষিত আয়া
যাকে একেক সময় একেক নামে ডাকো
সেই খালারাই আজ তোমার পরম আত্মীয়!
কিছু আর্থের বিনিময়ে পরম যত্নে
তোমাকে লালন পালন করছে।
যে কাজটা আমার করার কথা ছিল
যে প্রত্যাশা আমিও করি
আমার সন্তানদের কাছ থেকে।
আজকাল আমাদের তো অনেক কাজ মা
সংসার,সন্তান, অফিস,আদালত
সামাজিক, রাজনৈতিক, টাকা,পয়সা
সবকিছু দেখভাল করা এই আর কি?
সুইপারের কাজ,অর্বাচীন কথা শোনার সময় আজকাল বড়ই অভাব!
কি অদ্ভুত সুন্দরী ছিলে তুমি মা?
বয়সের ভাড়ের চেয়ে জীবনের ভাড়ে তুমি পুঙ্গ।
এক মাথায় আটটি খাতার হিসেবে কষতে কষতে তুমি আজ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
স্রোতের বিরুদ্ধে তোমার অবিচল যাত্রায়
তোমার মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে
আটটি জাহাজকে তুমি নঙ্গর করলে ঠিক ঠিক স্হানে।
তোমার উঠান আজ আবর্জনার স্তুপ
তোমার হাতে লাগানো নিমগাছটার গোড়ায় পোকার বাসা
যে কোন সময় ভেঙে পরবে
তোমার বারান্দা এখন তেলাকুচা গাছ,আগাছা আর মাকরসার অভয়ারণ্যে
তোমার প্রিয় ফল আম
সবসময় তুমি আম খেতে
তোমার আম গাছ দুটিতে এখনও অনেক আম ধরে
কিন্তু তুমি আর আম খেতে পারো না
তোমার প্লেনের সিড়ির মত সিড়ি দিয়ে কেও আর উঠে এসে তোমায় ডাকে না সকালে হাটার জন্য
তনুকার মা,শুভর মা সাথে গল্পের ইতি টেনেছো
বহুদিন আগেই
তোমার প্রতিবেশি মায়া আপা,অর্জুন,চিকার বউ আর মমির মার কথা এখন মনে করতে কষ্ট হয়।
আট ছেলেমেয়ে র নামটাও তোমার স্মৃতির সীমানার বাইরে মাঝে মাঝে ঘুরপাক খায়।
তোমার সেই ভালোবাসার নকশী করা প্রিয় খাটে এখন আর কেউ ঘুমায় না।
তোমার গোছানো সংসার তোমার মতই আজ বড়ই অগোছালো।
আজন্ম তোমার চোখের লোনা জল
নিথর নিস্তব্ধ অব্যক্ত কষ্টের কাব্যিক প্রকাশ।
তুমি এক মহাকাব্য মা।
প্রাইভেট ডিটেকটিভ/০৯ আগস্ট ২০১৯/ইকবাল