May 23, 2025, 6:01 pm

সংবাদ শিরোনাম
আ.লীগ নেতা সৈয়দ মোস্তাক আলী গ্রেফতার সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ শিবচরে ভুয়া র‍্যাব সেজে প্রতারণার চেষ্টা: সাবেক সেনা সদস্য আটক দোয়ারাবাজারের নরসিংপুরে গ্রামের বিতরে বালু খেকুদের তান্ডব।। ধ্বংস হচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি লক্ষ্মীপুরে তিন পরিবারের সম্পত্তি জবরদখল ঢাকাস্থ তিতাস উপজেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামের নবগঠিত নির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ,আটক করে পুলিশে দিলো এলাকাবাসী বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল গনি এর নেতৃত্বে দালাল মুক্ত: পাসপোর্টযাত্রী সেবার মানবৃদ্ধি দোয়ারাবাজারে একাধিক মামলার আসামী ভূমি খেকু আওয়ামী লীগ নেতা আনু গ্রেপ্তার যশোরের শার্শায় তক্ষক সাপসহ দু’পাচারকারী আটক

বীরাঙ্গনার দুঃখের কথা : যুদ্ধদিনের পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানার পর সংসার ভাঙে বিভা রানীর

বীরাঙ্গনার দুঃখের কথা : যুদ্ধদিনের পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানার পর সংসার ভাঙে বিভা রানীর
* জোটেনি স্বীকৃতি ও সরকারি সহায়তা
বরিশাল প্রতিনিধি


বিয়ের পর যুদ্ধদিনের পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানার পর বীরাঙ্গনা বিভা রানীকে নিয়ে সংসার করতে রাজি হয়নি তার স্বামী। ফলে একমাত্র প্রতিবন্ধী পুত্র সন্তানসহ বিভা রানীকে ত্যাগ করে ভারতে পাড়ি জমায় বিভার স্বামী অনুকূল মজুমদার।
সেই থেকে প্রতিবন্ধী পুত্র সাগরকে নিয়ে অথৈ সাগরে ভাসা বিভা রানী সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংসারের চাকা সচল রাখতে মাঝে মধ্যে তাকে ধাত্রীর কাজ করতে হয়। জীবনযুদ্ধে প্রতিবন্ধী সন্তান সাগরকে নিয়ে বিভা রানীর আরেক সংগ্রাম। আজও স্বীকৃতি মেলেনি এ বীরাঙ্গনার।
বরিশালের আড়িয়াল খাঁ নদের শাখা পালরদী নদী সংলগ্ন গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের বাসিন্দা মৃত উমেশ চন্দ্রের আড়াই কাঠা জমিতে টিনের ঘর। এ টিনের ঘরেই একমাত্র ভাই উপেন্দ্র নাথ মন্ডলকে নিয়ে বিভা রানী সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আসতেই বিভা রানী অনেকটা আনমনা হয়ে যান। বলেন, আমার বাবা টরকীরচরে বহুদিন ধরে বসবাস করেছেন। সে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। এখানে আমরা চার বোন ও এক ভাই ছিলাম। ১৯৭১ সালে আমি টরকী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে পাকিস্তানি মিলিটারিদের নিয়ে আসে স্থানীয় রাজাকাররা। চারিদিকে আগুন দিতে শুরু করে। লোকজন যে যেদিক পারে ছোটাছুঁটি করছিলো। আমার বাবা তখন পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় সবাই বাবাকে স্থান ত্যাগ করতে বললে বাবা আমাদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালকিনির রমজানপুরের দিকে ছুটলেন। কিন্তু তখন আমরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলাম। আমিসহ বেশ কয়েকজন (সঙ্গত কারণেই নাম উল্লেখ করা হলো না) আখখেতের মাঠে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যাই। সেদিন ওদের হাত থেকে আমরা কেউ রেহাই পাইনি। পাশবিক নির্যাতনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে বাবা খুঁজে ঘরে নিয়ে আসে। টরকী বন্দরে এসে আমরা দেখতে পাই বন্দরটি পাকিস্তানি আর্মিরা সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দিয়েছে।
বিভা রানী আরও বলেন, শ্রাবণ মাসে একই গ্রামের অনুকুল মজুমদারের সাথে আমার বিয়ে দেন। পরবর্তীতে আমরা দুটি পরিবারের ১০ জন সদস্য টরকী থেকে নৌকাযোগে আটদিন পর ভারতে গিয়ে পৌঁছি। দেশ স্বাধীনের পর সবাই আবার দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমার স্বামী যুদ্ধচলাকালীন সময়ে আমার ওপর পাশবিক নির্যাতনের কাহিনী জানতে পেরে আমাকে নিয়ে সংসার করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরইমধ্যে আমাদের সংসারে সাগর জন্ম নেয়ার পর সে (অনুকূল মজুমদার) আমাকে ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভা রানী বলেন, যুদ্ধের সময়ে সম্ভ্রাব্য হারানোর কারণে আমার সংসার জীবন ভেঙে গেছে। আজও সরকারিভাবে আমি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এমনকি আমার নামও তালিকাভুক্ত করা হয়নি। অথচ আমার জীবনের করুু কাহিনী স্থানীয় সকল মুক্তিযোদ্ধারা জানেন।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর