বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ সাত ধাপ এগিয়ে
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বৈশ্বিক নানা ফোরামে তার স্বীকৃতিও মিলছে।
তেমনি একটি স্বীকৃতি মিলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) থেকে। সংস্থাটির করা ‘দ্য গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স ২০১৭-১৮’ বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ সাত ধাপ এগিয়েছে। ১৩৭টি দেশের মধ্যে আগের বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬ নম্বরে। এ বছর সাত ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ৯৯ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ায় চারটি দেশ এবারও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে, ভারত (৪০তম), শ্রীলঙ্কা (৮৫তম), ভুটান (৮২তম) ও নেপাল (৮৮তম)। অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পিছিয়ে, দেশটির অবস্থান ১১৫তম। যেকোনো দেশের জন্য এই সূচক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপর ভিত্তি করেই মূলত কোনো দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসার গতি নির্ধারিত হয়। বিশ্ববাজারে দেশের ভাবমূর্তি তৈরি হয়। আমরা আশা করি, আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশের অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা সূচকে বাংলাদেশের এই ক্রমোন্নতিকে অবশ্যই স্বাধীনতার সুফল হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। স্বাধীনতার আগে আমরা যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিলাম তখন পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায়ও আমরা ছিলাম অনেক পিছিয়ে, যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি শিক্ষা ও সামাজিক নানা সূচকে। স্বাধীনতার পর আমাদের না ছিল বিমান, না ছিল জাহাজ। দেশ পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসস্তূপে। রাষ্ট্রীয় সম্পদেরও প্রায় কিছুই পাইনি আমরা। সবই গিয়েছিল পাকিস্তানের দখলে। এর পরও আজ বেশির ভাগ সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের ওপরে। শুধু স্বাধীনতাই বাংলাদেশকে এ সুযোগ এনে দিয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
ডাব্লিউইএফ সূচক তৈরিতে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করে তার মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, মুদ্রাবাজারের উন্নয়ন, পণ্য ও শ্রমবাজারের দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বাজারের আকার, ব্যবসায় উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় যথেষ্ট এগিয়েছে বলেই সূচকের এমন অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। দুর্নীতি কিছুটা কমায় দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হয়েছে। এর পরও প্রতিবেদনে দুর্নীতিকেই এখনো প্রধান বাধা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও। যেসব সূচকে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে, সেগুলোর উন্নয়নে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। দক্ষ জনসম্পদের অভাবে এখনো বহু বিদেশিকে বাংলাদেশে নিয়োগ দিতে হয়। এই পরিস্থিতি বদলাতে হবে। দেশের ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে তৈরি করা এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও বন্দর পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা কমে আসা, সরকারি সেবা সহজলভ্য হওয়া এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমায় এখন ব্যবসা করা অনেক সহজ হয়েছে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে এই নেতিবাচক ধারাগুলো আরো কমাতে হবে। আমরা মনে করি, এভাবেই বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে উন্নত দেশের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।