প্রতারণার দায়ে উত্তরা থেকে ৩ বিদেশি আটক
ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক
অভিনব কৌশলে এক ব্যাংকারের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তিন বিদেশিকে আটক করেছে র্যাব। গ্রেফতাররা হলেন, ক্যামেরুনের নাগরিক কুয়াতে ফুতসু, আমেলিন মাওয়াবো ও এমবিদা একানি। রাজধানীর উত্তরা থেকে গত বৃহস্পতিবার র্যাব–১ এর একটি দল তাদের আটক করে বলে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের এই তিন সদস্যকে আটকের সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ইউরো এবং বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব। সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তার সঙ্গে চক্রটির প্রতারণার ঘটনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন র্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ। তিনি জানান, এক মাস আগে রোজার্স নামে এক ব্যক্তি নিজেকে জার্মানির নাগরিক পরিচয় দিয়ে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করেন। তিনি বাংলাদেশে ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানান। এর কয়েকদিন পর বোস্তাভো স্টিভস নামে চক্রের আরেক সদস্য ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ক্যামেরুনের নাগরিক ফুতসুর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এরপর তাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়, কীভাবে টাকা বাংলাদেশে আনা হবে এবং কোনো খাতে বিনিয়োগ করবে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর কয়েকদিন পর ফুতসু সিঙ্গাপুরে ব্যবসার কাজে যাবেন বলে জানান। মুফতি মাহমুদ বলেন, এরপর গ্রেফতার ফুতসু সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আবার ওই ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। আপাতত থাকা–খাওয়ার জন্য তার কাছে চার হাজার ডলার চান। ওই ব্যাংক কর্মকর্তাও বড় বিনিয়োগের লোভে তাকে চার হাজার ডলার দেন। এরপর থেকে দেখা হলে ফুতসু ব্যস্ততা দেখাতেন, গাড়ি দেখিয়ে রাষ্ট্রদূত গাড়ি পাঠিয়েছেন… মিটিং আছে– এসব বিভিন্ন পন্থায় ফুতসু ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বিশ্বাস অর্জন করেন বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কিছুদিন পর ফুতসু ইউরোপে অর্থ পাঠানোর জন্য জিয়ার কাছে আড়াই লাখ ইউরো চান। বিনিময়ে ডলার ও অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকা দেবেন বললে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা ইউরো জোগাড় করেন। গত ৩১ অক্টোবর রাতে ফুতসুকে নিজ বাসায় দাওয়াত দেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। ফুতসু ও তার আরেক সহযোগী তার বাসায় যান এবং খাওয়া শেষে জিয়াকে ইউরোগুলো দেখাতে বলেন। মুফতি মাহমুদ বলেন, ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কাগজের প্যাকেটে মোড়ানো ইউরো বের করে দেখান। তখন তাদের মধ্যে একজন একটা তরল পদার্থের বোতল বের করে তার সামনে সেটি ফেলে দেন। এতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার গায়ে কিছুটা তরল পড়ে এবং ঝাঁঝালো একটা গ্যাস বের হয়। এটা বিষাক্ত জানিয়ে তারা ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলেন। ওই ব্যাংকার ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলে কাগজের প্যাকেট থেকে ইউরো সরিয়ে সেখানে সাদা কাগজ রেখে দেন ফুতসু। তিনি বের হয়ে এলে তারা ডলার আনেনি জানিয়ে পরেরদিন এসে ডলার দিয়ে ইউরো নিয়ে যাবে বলে জানায়। পরের দিন ফুতসুকে ফোন দেওয়ার পর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় বলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান। তিনি বলেন, এরপর তার সন্দেহ হয় এবং বাসায় গিয়ে বান্ডেল খুলে দেখেন ইউরো নেই, সাদা কাগজ। এভাবে তিনি লোভে পড়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা প্রতারণার শিকার হন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দুই শতাধিক বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, এসব অপরাধে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশিদের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশিরাও জড়িয়ে পড়েন। তবে এই তিনজনের সঙ্গে কোনো বাংলাদেশি জড়িত আছে কিনা, বা অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে দুইজনের পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও একজনের কোনো নথিপত্র নেই। প্রতারণার একটি মাত্র কৌশল এই বিনিয়োগের আশ্বাস। কিন্তু চক্রটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে থাকে।