কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের তিন ইউনিয়নের অন্তত ৩২ টি গ্রামের বাসিন্দা। ঢলের পানি প্রবেশ করায় ওই অঞ্চলের অন্তত ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক হেক্টর জমির ফসল ।
স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভারি বর্ষণ ও ভারতের আসাম রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৩২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে জিঞ্জিরাম, ধরণী ও কালোর নদী প্লাবিত হয়ে যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর, কাশিয়াবাড়ী, চর লালকুড়া, বিক্রিবিল, চর লাঠিয়ালডাঙ্গা, বালিয়ামারী,শ্রীফলগাতি, খেওয়ারচর, আলগারচর, পাহাড়তলী, যাদুরচর পূর্বপাড়া, তিনঘড়িপাড়া, বকবান্দা এবং রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইরগ্রাম, ঝাউবাড়ি, দুবলাবাড়ী, রতনপুর, কলাবাড়ি, বড়াইবাড়ি, চুলিয়ারচর, উত্তর বারবান্দা, ইজলামারী, ফুলবাড়ি, ভুন্দুরচর, নয়ারচর, গোয়ালগ্রাম, চান্দারচর, খাটিয়ামারী, মাদারটিলা, পূর্বইজলামারী, কড়াইকান্দি ও ঠনঠনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর ও চর লালকুড়া, খেওয়ারচর ও পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার সদর ও শৌলমারী ইউনিয়নের ২১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, বারান্দা ও শ্রেণি কক্ষে পানি প্রবেশসহ এলাকাগুলো পানিবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বারণ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
যাদুরচর ইউনিয়নের বকবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির জানান, শনিবার ভোর থেকে তার বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে স্কুলে কোনও শিক্ষার্থী আসতে পারেনি।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে ও বাড়ির চারপাশে পানি। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় তারা স্কুলে যেতে পারছে না।
পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারা বেগম বলেন, ‘স্কুলের চারপাশে পানি। রাস্তাঘাট সবকিছু পানির নিচে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে বারণ করা হয়েছে।’
‘ঢলের পানিতে স্কুলের বাউন্ডারি ওয়াল কিছুটা হেলে পড়েছে। মাঠের মাটিও ধ্বসে যাচ্ছে।’ যোগ করেন প্রধান শিক্ষক।
পুরাতন যাদুরচর এলাকার কৃষক হাজী আব্দুস সামাদ বলেন, হঠাৎ পাহাড়ি ঢল নামায় এলাকার সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চারপাশে শুধু লাল পানি। জরুরী প্রয়োজনে তারা নৌকা ব্যবহার করছেন।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে তার ইউনিয়নের ১৩ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে শনিবার রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরেজমিন প্লাবিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেছেন। দুর্গতদের সহায়তায় তাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বারণ করা হয়েছে।
রৌমারী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশারাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘ঢলে কয়েকটি এলাকা পানিবন্দি হওয়ার খবর পেয়ে কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছি। যাদুরচর ইউনিয়নের খেওয়ারচর রাবারড্যাম এলাকার একটি সড়ক ঢলের পানিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’