September 21, 2024, 1:40 pm

সংবাদ শিরোনাম
দুর্নীতি বিরোধী জাতীয় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফর রহমান মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধে কুড়িগ্রামে জলবায়ু ধর্মঘট খুলনা দৌলতপুর রেলস্টেশন ও মহসিন মোড় কাঁচাবাজারে এলাকাবাসীর উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান সংসার রেখে ডলিতে আসক্ত কয়েছ৷ বিয়ে ছাড়াই এক সাথে বসবাস ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তিন লাখ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদিসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ যশোরের সাবেক এসপি আশরাফুল সহ ১০ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা কুড়িগ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় প্রভাবশালীদের মৎস্য চাষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ক্ষেতলাল পৌরসভার বাসিন্দা উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ সন্ত্রাসী আটক কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আশ্রয়নের ঘর বানিজ্য

নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে: মওদুদ

নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে: মওদুদ

ডিটেকটিভ নিউজ ডেস্ক

দেশের নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, এ কারণেই বিচারকরা আজ আর ‘নিজেদের ইচ্ছামতো’ আদেশ দিতে পারছেন না।

গতকাল শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দেওয়ারও সমালোচনা করেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছেলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বারবার তাঁর স্থায়ী জামিনের আবেদন জানালেও আদালত তা নাকচ করে দেন। গত বৃহস্পতিবারও এক মামলায় রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতাল চলাকালে নিরাপত্তার কারণে তিনি সকালে আদালতে যেতে পারেননি।

পরে তাঁর আইনজীবীরা দুপুরের পর আদালতে হাজির হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু বিচারক সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকাবস্থায়ও একই আদালত দুই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। দেশে ফিরে পরপরই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন।

তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন ৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় বিস্ময়প্রকাশ করেন মওদুদ আহমদ। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমার ৫০ বছরের অভিজ্ঞতায় কোনোদিনও শুনিনি যে, সাপ্তাহিক জামিন নিতে হয়। সপ্তাহিক জামিন হলো বিরোধী দলের নেত্রীর জন্য আরো বেশি নির্যাতন, আরো বেশি অপমানজনক।

এটা সম্ভব হয়েছে কারণ, আমাদের দেশের নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে। সেই কারণে তাঁরা (বিচারক) আজকে এই ধরনের আদেশ দিয়েছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আরো বলেন, কাল (গত বৃহস্পতিবার) অর্ধদিবস হরতালের কারণে খালেদা জিয়া আদালতে যেতে পারেননি। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি (খালেদা জিয়া) আসবেন ২টার পরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিলেন। এ ধরনের আচরণ আমরা বিচার বিভাগ থেকে প্রত্যাশা করিনি। প্রকৃত সত্য হলো, যেহেতু বিচারকদের স্বাধীনতা নেই ফলে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামতো আদেশ দিতে পারছেন না। ফলে তাঁরা এই ধরনের আদেশ দিতে বাধ্য হচ্ছেন, যোগ করেন মওদুদ।

আদালত খুব খারাপ একটা দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফেরার পর যখনই আদালত ডেকেছেন তখনই তিনি গেছেন, আদালতকে যত রকম সম্মান দেখানোর দরকার তা তিনি দেখিয়েছেন। তারপরও তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বিস্ময়কর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে বোঝাই, দেশে স্বাধীন গণতন্ত্র থাকবে, আইনের শাসন, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে, দেশে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ থাকবে। কিন্তু আজকে সরকার যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বেশি বলে, তারাই আসলে এই চেতনা বলতে যে মূল্যবোধ, আশা, আকাক্সক্ষা মানুষের মধ্যে রয়েছে তা একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। দেশে কোনো গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। এ সময় মওদুদ আহমদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান।

আনিসুল হক অত্যন্ত ভালো, কর্মঠ, সজীব, সজ্জন মানুষ ছিলেন মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ আরো বলেন, দল হিসেবে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি কতগুলো মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে। পরবর্তী সময়ে যাঁরা করপোরেশনের দায়িত্বে আসবেন, তাঁরা তাঁকে অনুসরণ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের সভাপতি শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক লায়ন সাইফুল ইসলাম সেকুল, এস এম মাহবুব আলম, কামরুল খান, এম এ হাসেম, সোলায়মান, এ কে আজাদ, সেলিম ভুইয়া, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন হলেও তাতে অংশগ্রহণে প্রস্তুত বিএনপি। নির্বাচন কমিশন আগাম নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো সময়ে নির্বাচন হলে অংশগ্রহণে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। তবে তা আবশ্যই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতে হবে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ববলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আমি ৫০ বছরের বেশি আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি, কখনো দেখিনি সাপ্তাহিক জামিন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রতি সপ্তাহে আদালতে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। গতদিন হরতালের কারণে খালেদা জিয়া আদালতে যেতে দেরি হবে জানানোর পরেও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এতে আবারো প্রমাণ হলো নিম্ন আদালত স্বাধীন নয়। এই আদালতের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে আমাকে নিয়ে ৫ মিনিট বক্তব্য রেখেছেন। সেখানে আমার যতো খারাপ দিক আছে সব তুলে ধরেছেন। বহু সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে গেছেন বা ইচ্ছে করেই ভুলে গেছেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আমরা সে সময়ে যারা আওয়ামী লীগ করতাম না এমন চারজন আইনজীবীই করেছিলাম। এই কৃতজ্ঞতা থাকা দরকার ছিলো। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল’।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম এ হালিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিশেষ অতিথি জাকারিয়া চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল ইসলাম রিজু প্রমুখ। মাহমুদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, গণমাধ্যমের পরাধীনতা দুই ধরনের।

স্বেচ্ছায় এবং জোরপূর্বক পরাধীনতা। বাংলাদেশে বর্তমানে এই দুই ধরনের পরাধীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমারদেশ কার্যালয়কে পুলিশ জোরপূর্বক বন্ধ করলেও আমার কথা বাংলাদেশের কোনো আদালত শোনেননি। আমি বিচার পাইনি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম স্বেচ্ছায় পরাধীনতা বরন করেছে।

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর